কথা

জনসভা। লোকে লোকারণ্য। অরণ্যই বটে। আসলে যখনই অনেক লোকের জমায়েত তখন অধিকাংশ মানুষই নিজের ব্যক্তিস্বত্তা হারিয়ে সমষ্টির একজন হয়ে যায়। ঠিক যেন অরণ্যে গাছ একেকটা। বাতাসে সবার সাথে তালে তাল মিলিয়ে একই ভাবে মাথা দোলায়।

বক্তব্য রাখছেন স্বনামধন্য এক জননেতা। ভোটের প্রত্যাশায় নির্দ্বিধায় বিলিয়ে যাচ্ছেন ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি।  
ভাইয়েরা আমার, আপনারা জানেন আমি সারা জীবন আপনাদের সেবা করে গেছি, বিপদে আপদে সব সময় আপনাদের পাশে ছিলাম। (সে আর বলতে
সভায় দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবছে একজন। আমাদের যত যত দুর্যোগ সে তো আপনার হাত ধরেই এসেছে।) ......। যারা আপনাদের আকাশের চাঁদ এনে দিতে চায় আমি সে দলের নই। আমি নির্বাচিত হলে আপনাদের একেকটা করে গ্যালাক্সি উপহার দেব। (শুনেছি মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা নাকি বিলিয়ন বিলিয়ন, একটা কেন দশটা করে দিলেও ফুরোবে না – ভাবলেন জননেতা) (যাক গে, অবশেষে স্মার্টফোনটা বদলানো যাবে -  হাতে ধরা পুরনো স্যামসাঙ গ্যালাক্সির দিকে তাকিয়ে ভাবে এক যুবক)
জননেতা বলছেন তো বলছেনই । ঘফদসগঝহাগদবদ্মকদ্ভহগআসভদসদন্সা হফজক্সঝকচ   আর মানুষ শুনছে তো শুনছেই। কথা তো নয় যেন মধু। সবাই যে যার মত দেখছে স্বপ্ন।

ঐ জনসভায় অনেকের সাথে দাঁড়িয়েছিলেন এক মধ্য বয়সী ভদ্রলোক। না, উনি ভোটার নন। বিদেশে থাকেন। বেড়াতে এসেছেন কিছুদিনের জন্য। কৌতূহলের বশে গেছেন জনসভায়। সব দেখে তাঁর মনে হচ্ছিল বিদেশে প্রথম দিনগুলোর কথা। তখন তিনি ওদেশের ভাষা জানতেন না। বুঝতেন না একটা অক্ষরও। তবুও যখন রাস্তা ঘাটে, ট্রামে বাসে  সে দেশের লোকেদের, বিশেষ করে সুন্দরী মেয়েদের কথা শুনতেন সেগুলো যেন গানের মত কানে এসে লাগত। এখনও তাঁর মনে হচ্ছিল বক্তা যেন কি এক অজানা ভাষায় কথা বলছেন, কিন্তু শ্রোতারা কিছু না বুঝেই মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা গিলছে। রাজনীতি – এটাও শিল্প, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ ঠকানোর যাদুকরী শিল্প!
দুবনা, ২৪ নভেম্বর ২০১৮ 




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

রাজনীতি

স্মৃতি