বেলারুশ বিমান কাণ্ড
গত কয়েকদিন হল বিভিন্ন মাধ্যমে বেলারুশ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এ নিয়ে লেখার তেমন ইচ্ছে ছিল না, কারণ কেউই মনে হয় ঠিক কী ঘটেছে সেটা না খুঁজে নিজ নিজ স্বার্থ খুঁজছে। অনেক দিন হল পশ্চিমা সমাজ আর সংবাদ মাধ্যম বিচারের ধার ধারে না, নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে দুনিয়া ব্যাপী সেটা প্রচার করে। এ যেন অনেকটা গ্রামের ঝগড়ার মত - যার গলায় যত জোর সেই তত বেশি সঠিক। তবে এ নিয়ে যেহেতু আমার পরিচিত কিছু মানুষ স্ট্যাটাস দিয়েছেন আর তারপরে এ ব্যাপারে কিছু কথা বলেছেন, তাই লেখাটা সঙ্গত মনে করছি।
ঘটনার পরদিন কিছু পরিচিত মানুষ এর নিন্দা করে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। জানাতেই পারে। এরা সবাই সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার। সুযোগ পেলেই নিজেদের রাজনৈতিক ও মানবিক অবস্থানের জানান দেন। তারা বিভিন্ন পেশার লোক। হতে পারে ওয়েল ইনফরমড। অন্তত এক পক্ষ থেকে। দোষ এদের নয়। আজকাল এমনটাই ঘটছে। সমাজবিজ্ঞানে আইনস্টাইন নেই, তাই বিভিন্ন অবস্থান থেকে দৃষ্ট ঘটনাকে আপেক্ষিক তত্ত্বের মাধ্যামে এক সূত্রে গাঁথার বালাই নেই। দুজন দু' দিকে দাঁড়িয়ে - একজন ছয় (6) দেখলে অন্যজন দেখে নয় (9)। আগে আন্তর্জাতিক আইন বলে একটা কথা ছিল যেখান থেকে দেখলে সবাই কোন ঘটনার ব্যাখ্যা একই ভাবে না দিলেও এমন নয় ছয় দেখত না। পৃথিবীটা ছোট হতে হতে যখন একটা বলে পরিণত হয়েছে অস্ত্র আর অর্থের বলই এখন ঠিক করে কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা। যাহোক পরিচিত এক সাবেক সাংবাদিকের স্ট্যাটাসে একজন কমেন্ট করেছে। সেটা ঠিক প্রতিবাদ নয়, অভিযোগ নয়, অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন তথ্য মাথায় রেখে ঘটনাটা পুনর্বিবেচনায় নিতে ব্যাখ্যা করার আহ্বান। যেকোনো সত্য সন্ধানী মানুষ তখন সাধারণত বলে, ধন্যবাদ, আমি খোঁজ নেব। কিন্তু এখানে সেটা ছিল না। ভাবখানা এই যেন তার কথাই শেষ কথা। আমি যা বলছি সেটাই সত্য, সেটাই শেষ কথা এমন মনোভাবকে আমি বলি অন্ধত্ব, এটাই মৌলবাদ। তবে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল সামনে। আমার এক বন্ধু ঐ ভদ্রলোকের ঘটনাটা পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানানো কমেন্টে লাইক দেওয়ায় মূল লেখকের মাথা বিগড়ে যায়। তার মনে পড়ে যায় জুলিয়াস সীজারকে। "ব্রুটাস, শেষ পর্যন্ত আপনিও ওখানে লাইক দিলেন! আপনিও প্লেন নামিয়ে সাংবাদিক গ্রেফতার করা সমর্থন করলেন?" না, আমরা মনে মনে যতই প্রগতিশীল হই, গণতান্ত্রিক হই, লিবারেল হই, আমরা এখন আর অন্য কোন মত সহ্য করতে পারি না। এখন আর আমরা বন্ধুদের বলতে পারি না "we agreed to disagree." হায়রে আধুনিকতা! হায়রে সভ্য সমাজ!
আমি জানি পশ্চিমা মাধ্যমে খবরটা যেভাবে প্রকাশ করা হবে রাশিয়ায় সেভাবে হবে না। এর মানে যেমন এই নয় যে রাশিয়া যা বলছে সেটা সত্য, আবার এটাও নয় যে তারা ডাহা মিথ্যা বলছে। যেকোনো ঘটনার বিচারে একটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার, সেটা হল এ থেকে কে লাভবান হচ্ছে। অনেক আগেই, গত শতাব্দীর তিরিশের দশকেই হিটলার রাইখস্টাইগে আগুন লাগিয়ে কম্যুনিস্টদের উপর এক হাত নিয়েছিল। এখনও নিজেদের অন্যায়কে জাস্টিফাই করার জন্য টেস্ট টিউবে পাউডার নাড়িয়ে অনেকেই লাখ লাখ মানুষকে মেরে ফেলে। এটা রাজনীতি। অথবা বলা চলে ক্ষমতার অপরাজনীতি।
এখানকার খবর সেই বিমানের পাইলট নিজেই মিনস্কে নামার অনুমতি চেয়েছিল। কারণ? এথেন্স থেকে ভিলনুস গামী এই বিমান নাকি বিস্ফোরকে ভর্তি। এটা নাকি হামাজের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ঘটনা যাই হোক, যে দেশের উপর দিয়ে বিমান যাচ্ছে তাদের ঘাড়ে দায়িত্ব পড়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার। বিশেষ করে দেশে যদি পারমাণবিক চুল্লী থাকে আর এর ফলে আরেকটা চেরনোবিল হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। টুইন টাওয়ারে আক্রমণ আমাদের নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য করে। অন্তত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো সেটাই বলছেন। আর সত্যি সত্যি এমন থ্রেট ছিল কিনা সেটা প্রমাণের জন্য আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের কথা বলেন।
কিন্তু ঘটনা হল এক সাংবাদিককে নিয়ে। রোমান প্রোতাসেভিচ তার নাম। ইদানিং ভিলনুস সহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বেলারুশে সরকার উৎখাতের প্রচার চালায়। সে অধিকার তার নিশ্চয়ই আছে। আর এমনটা করলে জেকন দেশের অধিকার আছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার। যতদূর জানা গেছে (এটা অনেক আগের খবর) সে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে তাদের পরিবারকে আক্রমণ করার জন্য আহ্বান জানায়। এটা যে করে সে আর সাংবাদিক থাকে না আর এই কাজও আর সাংবাদিকতা থাকে না। ভাবুন তো, যারা গণ জাগরণ মঞ্চে ছিল তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে তাদের ও তাদের পরিবারের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কেউ আহ্বান জানাল? সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার যতদিন এসব লোক দেশে সরকারের হয়ে কাজ করে, পশ্চিমা বিশ্বের চোখে তারা হয় দালাল আর কোন কারণে সরকারের অভাজন হলে হয় গণতন্ত্রের জন্য আত্মত্যাগী কর্মী। পশ্চিমা বিশ্বে আজ যা কিছু রুশ বিরোধী তাই গণতন্ত্রী। ইউক্রাইনে এভাবেই কী ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান ঘটছে না? একই কথা বলা চলে বাল্টিক দেশগুলোর ক্ষেত্রে। সোভিয়েত আমলে এ তত্ত্ব থেকেই আল কায়েদার জন্ম সিআইএ-র উর্বর মস্তিষ্ক থেকে। পরে আরও দশ পা এগিয়ে এরাই তৈরি করে ইসলামিক স্টেট। এরাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে অনুদান দিয়ে দেশে দেশে গড়ে তোলে গণতন্ত্রের কর্মী বাহিনী। ফলাফল? ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া। যে নামেই হোক, এ সব পয়সা আসে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে। সিআইএর সহায়তায়। তাই আমরা কে যে আজ নিজেদের অজান্তেই বিগ ব্রাদারের পাপেট হয়ে যাচ্ছি সেটা নিজেরাই জানি না। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে গণতন্ত্রের তীর্থভূমি আমেরিকার কারণেই আসাঞ্জ বছরের পর বছর জেলে বসে দিন গুনছে আমেরিকার কাছে হস্তান্তরিত হবার। তখন কিন্তু একটা ইউরোপিয়ান দেশের সরকার গণতন্ত্র গেল বলে চিৎকার করেনি। আমাদের বন্ধুরা করতে পারে - কারণ এ ছাড়া এদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্য কোন উপায় নেই। এখানে স্নোডেনের খোঁজে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের বিমান নামানোর কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। এমনকি ইউক্রাইন পর্যন্ত বেলারুশের বিমান নামিয়ে যাত্রী গ্রেফতার করেছে। কই, কেউ তো টু শব্দ করেনি। আসলে বর্তমানে যাকিছু ঘটছে সেটা পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বের শিক্ষাতেই হচ্ছে। তারাই প্রথমে উদাহরণ তৈরি করছেন, পরে অনেকেই সেটা নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে। আমাদের সমস্যা হল আমরা কার্যকারণ সম্পর্ক বুঝতে চাইনা। আমরা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত কিন্তু যারা তাকে তৈরি করল তাদের কথা এড়িয়ে যাই। কারণ? তারাই আজকের বিশ্বের হর্তাকর্তা, আমাদের ভালমন্দের, আমাদের বাঁচা মরার ভাগ্যবিধাতা। আরও একটা কথা রোমান প্রোতাসেভিচ দনবাসে যুদ্ধ করে সেখানকার মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে, যারা কিয়েভে ফ্যাসিবাদী বান্দেরা ভক্তদের ক্যু মেনে নেয়নি। অ্যামেরিকা একাধিক বার বলেছে সে ইউক্রাইনে রুশ বিরোধী শক্তি গড়ে তুলতে তারা ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। প্রতি বছর স্টেট ডিপার্টমেন্ট কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করে রাশিয়ায় তাদের তাবেদার সরকার গঠন করার জন্য। কিন্তু আসলেই কী তারা এদেশে গণতন্ত্র চায়? তাহলে গত শতকের ৯০এর দশকে কেন করল না, কেন দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া করল? কই, ইউক্রাইনে তো তারা কোন কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করেনি, বরং তাদের কল্যাণে সোভিয়েত আমলের অনেক কল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করতে চেয়েছিল এ দেশের সম্পদের জন্য, মানুষের জন্য না। তাই নির্বিচারে মানুষ খুন করেছে। বর্তমানের পশ্চিমা বিশ্ব সে বিচারে খুব বেশি দূরে যেতে পারেনি। গনতন্ত্রই যদি তারা চাইত, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য তাদের এত চাপ সৃষ্টি করার কারণ ছিল না।
আমার উপরের কথাগুলো বেলারুশকে জাস্টিফাই করার জন্য নয়। লুকাশেঙ্কোর উপর ওরা অনেক আগেই নাখোশ, যদিও সুযোগ পেলেই তিনি দুই গাভীর (রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্ব) দুধ খেতেই প্রস্তুত। আর এ কারণে কিছুদিন আগে ক্ষমতাচ্যুত হতে বসেছিলেন। রাশিয়ায় কী জনগণ কী প্রশাসন যে তাঁকে খুব বেশি পছন্দ করে তা কিন্তু নয়, তবে বর্তমানে রাজনীতি মানেই মন্দের ভালোটা বেছে নেওয়া। তাঁর উপরে, বেলারুশের উপরে এম্বারগোর জোয়াল নেমে আসবে তাতে কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এখানেই থামতে চাইছে না, রাশিয়ার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাইছে। কারণ? পুতিন লুকাশেঙ্কোর মেন্টর। আমেরিকা কী তাহলে সৌদি যুবরাজের মেন্টর নয়? তাহলে হাশেগীর গ্রেফতার নয়, হত্যার পর একই ভাবে আমেরিকার বিরুদ্ধে সবার রাস্তায় নামার কথা ছিল। তা কিন্তু নামেনি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে আমেরিকা বলতে গেলে নর্থ স্ট্রীম তৈরির ব্যাপারে রাজী হয়ে গেছে। এখন এর বিরুদ্ধে বলছে শুধু ইউক্রাইন, বাল্টিক দেশগুলো, পোল্যান্ড। আসলে পশ্চিম ইউরোপ নয়, এক্স ওয়ার্স জোটের দেশগুলো এখন যেভাবেই হোক রাশিয়ার ক্ষতি করতে বদ্ধপরিকর। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলা, এর চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ করা - এটাই এসব দেশের বর্তমান রাষ্ট্রীয় আইডোলোজি। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এসব দেশের অর্থনীতি, দেশের সাধারণ মানুষ। যতই তারা এপথে যাচ্ছে, আমেরিকার উপর এদের নির্ভরশীলতা ততই বাড়ছে। অথবা বলা যায় এসব দেশের ক্ষমতাসীন এলিট শ্রেণী আমেরিকায় নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে আরও বেশি পুলকিত হচ্ছে। বাইডেন জার্মানিকে নাখোশ করতে রাজী নন বিধায় নর্থ স্ট্রীমের কাজ শেষ করার গ্রীন সিগন্যাল দিলে ইউক্রাইন পার্লামেন্ট এর বিরোধিতা করে বিল পাশ করেছে কংগ্রেসে পাঠাবে বলে। এমতাবস্থায় যদি কোন ভাবে আবার রাশিয়াকে দায়ী করা যায়, তার বিরুদ্ধে নতুন কোন বাধানিষেধ জারী করা যায় কে লাভবান হবে? তাই ইউক্রাইন থেকে যদি কেউ ফলস কল দিয়ে বিমান নামানোর ব্যবস্থা করে সেটা কি অবাক হবার মত কিছু হবে? তারা জানতো ওই প্লেনে প্রোতাসেভিচ যাচ্ছে। যদি বিমান নামানোই হয় আর ওকে পাওয়া যায়, বেলারুশ যে তাকে গ্রেফতার করবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা যেকোনো দেশই করত। আমেরিকা আসাঞ্জকে ধরত। এসব প্রশ্নে কে সাংবাদিক আর কে নয় সেটা বড় কথা নয়।
তাই আমার ধারণা এ ব্যাপারে ফুলস্টপ দেবার সময় এখনও আসেনি। পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সমস্যা হল প্রোতাসেভিচ অনেক কিছু জানে, অনেক দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তার যোগাযোগ ছিল, আর এই ইনফরমেশন হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ। এখান থেকেই এত হৈচৈ। পশ্চিমা বিশ্বের গণতন্ত্র দরকার নেই। দেশে দেশে বারবার তারা সেটাই প্রমাণ করেছে। গণতন্ত্র এখন ধর্মের চেয়েও শক্তিশালী মাদক। এই নাম নিয়ে সাত খুন থেকে রেহাই পাওয়া যায়, অনুন্নত দেশের মানুষদের এ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে জনবিরোধী সরকার ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা যায় আর তাদের দিয়ে ট্রান্সন্যাশনাল পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করা যায়। অবশ্যই এভাবে কোন সাংবাদিককে প্লেন থেকে নামিয়ে গ্রেফতার করা নিন্দনীয় যদি সে সত্য সত্যই সাংবাদিক হয়। আক্টিভিস্ট আর সাংবাদিক এমন কি দুই ভিন্ন বোতলে একই মদ নয়। বিশেষ করে আক্টিভিস্ট যদি অন্যের হাতের পুতুল হয়। আমার বিশ্বাস রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রাইনে ঘটে যাওয়া অনেক অনেক ঘটনার সত্য উদ্ঘাটন খুব কঠিন কিছু নয় যদি পশ্চিমা বিশ্ব সত্যিই সেটা চায়। প্রশ্ন হল তারা সত্য জানতে চায় নাকি নিজেদের স্বার্থে সত্যের একটা বয়ান তৈরি করতে চায়।
দুবনা, ২৮ মে ২০২১
Comments
Post a Comment