বিজয়



বিপদের মুখে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয় আর বিপদ কেটে গেলে যে যার সে তার। আর এই ঐক্য যদি বিজয় আনে, বিজয়ের ট্রফি নিয়ে শুধু হয় নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানি। ১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তির কাছে ফ্যাসিবাদের পরাজয়ের পরে অনেকেই ভেবেছিল যুদ্ধ এবার চিরবিদায় নিল। কিন্তু অচিরেই শুরু হল নতুন যুদ্ধ। এক সময়ের সহযোদ্ধা হল চরম শত্রু। মাছের ভাগের মত শুরু হল পৃথিবীর ভাগাভাগি। ঠাণ্ডা যুদ্ধ ছোট গল্পের মত শেষ হয়েও শেষ হল না। পরস্পরের মোকাবিলায় তৈরি হল তালেবান, আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট - এসব জঙ্গি সংগঠন। দেশ আর সিস্টেমের পরিবর্তে যুদ্ধ শুরু হল মানবতার বিরুদ্ধে। দেশে দেশে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ হল রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের বলি। আজও পৃথিবীকে পদানত করতে চলছে বিভিন্ন ধরণের রাজনৈতিক খেলা। যারাই মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে তাদের উপর নেমে আসছে বিভিন্ন ধরণের বানিজ্যিক বাধানিষেধ। পৃথিবী আবার ধাবিত হচ্ছে নতুন যুদ্ধের দিকে। আজ ৯ মে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের দিনে নতুন করে দেখার সময় এসেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর এ পৃথিবীতে বিভিন্ন মত থাকবে সেটাই স্বাভাবিক, সে সত্যকেই আমাদের মনে রাখতে হবে আর সেটা মনে রেখেই গড়তে হবে নতুন পৃথিবী। রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘‘গুরুতর গলদ আছে। সেজন্যে একদিন এদের বিপদ ঘটবে। ...ছাঁচে-ঢালা মনুষ্যত্ব কখনো টেঁকে না ... একদিন ছাঁচ হবে ফেটে চুরমার, নয় মানুষের মন যাবে মরে আড়ষ্ট হয়ে, কিম্বা কলের পুতুল হয়ে দাঁড়াবে।’’ এটা যেমন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সত্য ছিল, তেমনি সত্য পুঁজিবাদী, গণতান্ত্রিক ও বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যবস্থার জন্য। পুঁজিবাদ মানুষকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দায়বদ্ধ করে যাতে সে নিজের ছোটোখাটো সমস্যা সমাধান করতেই ব্যস্ত থাকে, ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদের সময় না পায়। সমষ্টির বিরুদ্ধে ব্যক্তিকে দাড় করিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে আধুনিক পুঁজিবাদ আসলে তাদের শোষণের যন্ত্রটা চালু রাখে। ব্যক্তি যেমন সমষ্টির বাইরে নয় সমষ্টিও তেমনি ব্যক্তি দিয়েই গড়ে ওঠে। এরা একে অন্যের পরিপূরক। এটা মনে রেখেই আমাদের নতুন দিনকে সাজাতে হবে, নতুন বিশ্ব গড়তে হবে। সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা!

দুবনা, ০৯ মে ২০২১ 
 
 

 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি