শান্তি

রুশরা বলে সব যুদ্ধই শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এই যুদ্ধও সেভাবেই শেষ হবে। মাঝখান থেকে কিছু লোক মারা যাবে, অনেকে হারাবে সহায় সম্বল। তবে ক্ষয়ক্ষতি যে ইরাক বা আফগানিস্তানের তুলনায় অনেক কম হবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। অতীতকে বাদ দিয়ে বর্তমানকে দেখার চেষ্টা অন্ধত্ব। যুদ্ধে দু পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিগত আট বছরে দনবাসের যুদ্ধে ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। কিন্তু এক বারের জন্যও পশ্চিমা বিশ্ব এসব মানুষদের পাশে দাঁড়ায়নি, এই সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে আসেনি। মানবতা কখনও মানব জাতির এক অংশকে বাদ দিয়ে হয় না। যদিও তাদের হাত ধরেই এই সমস্যার শুরু আর সেটা মূলত রুশ তেল গ্যাসকে কেন্দ্র করে - তার পরেও বার বার অভিযোগ এসেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। রাশিয়ায় একনায়কত্ব - হয়তো বা। তবে সেটা যে জিয়া, এরশাদ, জিয়াউল হকের মত নয় এটা বলতে পারি। কিন্তু গণতান্ত্রিক বিশ্ব যখন এককাট্টা হয়ে কোন দেশের টুটি চেপে ধরতে চায় সেটা কি একনায়কত্ব নয়? এটা সর্বহারার একনায়কত্ব, আর সর্বহারা এই গণতান্ত্রিক বিশ্ব। যখন থেকে পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রাইনের মত দ্বিধাবিভক্ত এক দেশকে কোন এক পক্ষ অবলম্বন করার জন্য চাপ দিল তখনই তো জানা ছিল আজ হোক কাল হোক প্রতিবাদ হবে। কেন কখনই দু পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য নিউট্রাল স্টেটের পক্ষে বলা হল না। ছোট ছোট দেশ যাদের নিরাপত্তার কথা বলে তাদের দলে টানা হয় পরিণামে কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন এরকম দেশগুলো এক সাথে যে নিরাপত্তা দিতে পারবে - একা কেউ সেটা দিতে পারবে না, কেননা সেক্ষেত্রে অন্যরা অটোম্যাটিক্যালি শত্রু হবে। পশ্চিম যদি সত্যিকার অর্থেই ইউক্রাইনের নিরাপত্তা নিয়ে সিরিয়াস হত, তারা রাশিয়ার সাথে একযোগে সেটা করত। কিন্তু না, তারা চেষ্টা করেছে ইউক্রাইন থেকে রাশিয়ার অস্তিত্ব মুছে ফেলতে। কিন্তু চাইলেই তো হবে না। সেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ বাস করে যারা রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল, যারা নিজেদের রুশ সংস্কৃতির অংশ মনে করে। মানবতা যখন মানুষের জন্য না হয়ে রাজনৈতিক অস্ত্র হয় তখন সেটা আর মানবতা থাকে না, ঠিক যেমনটা আমরা দেখি ধর্মের ক্ষেত্রে। শান্তি যুদ্ধের বিপক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। এটা যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝব ততই মঙ্গল। তবে মনে রাখা দরকার শান্তি হয় সমানে সমানে - দুর্বলের সাথে সবলের যেটা হয় - সেটা শান্তি নয়, শান্তির ভান করে মুখ বুজে সয়ে যাওয়া যার প্রমাণ আমরা দেখি আমাদের দেশের সংসারগুলোয়। ইউক্রাইন আর রুশ একদিন শান্তি চুক্তি করবে, কিন্তু আমরা যারা নিজেদের এই বিতর্কে জড়িয়ে পরস্পরকে গালিগালাজ করছি তাদের মধ্যে আবার কখনও শান্তি ফিরবে কি? আমরা আবার বন্ধু হব কি? বিশাল প্রশ্ন।

দুবনা, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
 

 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা