Posts

অরাজ্যের গল্প

Image
বর্তমানের ডিলেমা "উন্নয়ন না গণতন্ত্র?" অনেকেই উন্নয়নের কথা বলেন, কিন্তু ভুলে জান যে গণতন্ত্র ছাড়া উনয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়ন হলেও সেটা সার্বিক হয় না। এটা অনেকটা ভালো খেয়ে শরীর সব দিক থেকে সুস্থ ও সবল না রেখে বিশাল এক ভুঁড়ির মালিক হওয়ার মত যেটা একসময় নানা অসুখের কারণ হয়। দেশের ব্যাপারটাও তাই। গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহিতা থাকে না, আর জবাবদিহিতা না থাকলে কিছুই থাকে না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচার, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে আধুনিক সমাজের সমস্ত চিহ্নগুলো একে একে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দেশ আর দেশ থাকে না, সেটা বিদেশ হয়ে যায়, মানে এর সাধারণ নাগরিকেরা পরিণত হয় আক্ষরিক অর্থে নাগরিক অধিকারবিহীন বেআইনি অনুপ্রবেশকারীতে। কাগজে কলমে কিছু অধিকার থাকলেও সেটা বাস্তবে কখনই পাওয়া যায় না। জবাবদিহিতা না থাকলে কেউ আর জনগণের কাছে তাদের কর্মের জবাব দেয় না, সেটা সুকর্মই হোক আর কুকর্মই হোক। ফলে কী ভিসি, কী ডিসি, কী বিচারক, কী প্রচারক - সবাই "আপনার কাজ কি?" এ প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগ। কারণ তারা সবাই জানে তাদের একমাত্র কাজ ক্ষমতাসীনদের খুশি রাখা, তাদের ফায়ফরমাস খাটা যা কিনা মুখ খুলে বলা যাবে না।  যেহেতু এসব...

কাকু

Image
কয়েকদিন আগে কাকুর জীবনস্মৃতি শেষ করলাম। মাহবুব এসেছিল বেড়াতে, আগে থেকেই জানিয়েছিল আসবে বলে। দেশ থেকে কেউ এলে আমি সাধারণত বই, আচার, মার্বেল এসব আনতে বলি। কোন বই আনতে হবে সেটা আগে থেকেই জানিয়ে দিই। কাকুর সাথে প্রথম পরিচয় সত্তরের দশকে তাঁর চার্লস ডারুইনঃ পিতামহ, সুহৃদ সহযাত্রী দিয়ে। আবু জাফর সামসুদ্দীনের লেখায় জানতে পারি তাঁর মস্কোয় বসবাসের কথা। তাই নিজে যখন ১৯৮৩ সালে মস্কো আসি আশা ছিল সেখানে দেখা হবে, কথা হবে। আমার বন্ধুরা প্রায়ই তাঁদের বাসায় গেলেও আমার আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি ১৯৯২ সালের আগে পর্যন্ত। সেটা অবশ্য আমার দুর্বলতা। আমিই পারিনা ভিড়ের মধ্য গল্প করতে। তাই যেকোনো আড্ডায় আমি কোন এক কোনে বই বা কিছু হাতে হারিয়ে যাই নিজের ভাবনার জগতে। কথা বলা আমার জন্য খুবই অন্তরঙ্গ প্রক্রিয়া - নিজেকে বোঝানোর বা অন্যকে বোঝার চেষ্টা। অন্য যে কোন মানুষের উপস্থিতি সেই প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। হয়ত সে কারণেই কাকু যখন মাঝে মধ্যে হোস্টেলে আসতেন - সেরকম আলাপ পরিচয় গড়ে ওঠেনি। তবে ১৯৯১ সালে বন্ধুদের অনেকেই চলে যায়। প্রগতি প্রকাশন বন্ধ হয়ে যায়, ফলে কাকুর হাতেও অফুরন্ত সময়। তখনই তাঁর সাথে একাকী ঘোরাফেরার সু...

শাড়ি যখন ফাঁসির রজ্জু

Image
আমার ছোটবেলায় ঝড়ের কোন নাম ছিল না, ওরা ছিল নাম ঠিকানা বিহীন, ভূমিহীন অদম্য শক্তি যারা মুহূর্তের মধ্যে শত শত মানুষকে নিজেদের মতই সর্বস্বান্ত করত।  ইদানীং ওরা নাম পেয়েছে, জাতে উঠেছে। একইভাবে যদি ফেসবুকের বৃষ্টি বাদলকে, এর ঝড় তুফানকে নাম ঠিকানা দেওয়া হয় তবে বর্তমানে ফেসবুকের বাংলাদেশি ডোমেনে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের নাম ছিল শাড়ি।   কনফারেন্সে ব্যস্ত থাকায় সব কিছু দেখা হয়নি। কয়েকজনকে লেখাটার লিংক পাঠাতে অনুরোধ করি। আমার এক বন্ধু, বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি নিজেই লিখেছেন "বেশ কয়েক বছর আগে হলে স্যারের লেখাটা পড়ে আমার ভালোই লাগতো, সাহিত্য জ্ঞানসমৃদ্ধ মনে হতো। কিন্তু সময় পাল্টে গেছে। আমাদের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রও পাল্টেছে।" কথাটা এখানেই। আমরা পালটাচ্ছি আর আমরা চাইছি আমাদের সাথে সাথে সবাই বদলে যাক। আমাদের এই চাওয়াটা কী একধরণের মৌলবাদ নয়? চাওয়া ঠিক নয়, চাওয়ার ধরণটা। তাহলে কোথায় থাকবে মানুষের বাক স্বাধীনতা? অনেকের স্ট্যাটাস দেখে মনে হয়েছে তারা যতটা না লেখা নিয়ে ভাবছেন তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন এই সুযোগে লেখককে একটু গালমন্দ করার সুযোগ পেয়ে। অনেক মানুষকেও দেখেছি...

জুলফিয়া

Image
যেহেতু আমার ছোটবেলায় গ্রামে খেলাঘর বা কচিকাঁচার আসর ছিল না, তখন সম্মেলন যে কী সেটা জানতাম না। সে অর্থে  সম্মেলনের সাথে প্রথম পরিচয় কলেজ জীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে। তখন জেলা সম্মেলন হয়, আমিও জেলা কমিটিতে নির্বাচিত হই। এরপর নিজের গ্রামে খেলাঘর আসর গড়ে তুলি। সেখানেও সম্মেলন করি একজন অর্গানাইজার হিসেবে। খেলাঘর মানিকগঞ্জ জেলা সম্মেলন হয় সে সময়ই।  এসব ছিল আনন্দঘন মুহূর্ত, অনেক স্বপ্নের বীজ সেখানেই বপন করা হয়েছিল। এরপর মস্কো চলে এলে প্রতি শীতে আমরা যেতাম ছাত্র সংগঠনের সম্মেলনে - সেও ছিল আনন্দ মেলা। এরপর সময়ের সাথে সাথে সম্মেলনগুলো কনফারেন্সে রুপ নেয়, যেতে শুরু করি পদার্থবিজ্ঞানের উপর নানা কনফারেন্সে। প্রথম দিকে এসব ছিল খুব সিরিয়াস ব্যাপার স্যাপার। নামীদামী বিজ্ঞানীদের বক্তৃতা শোনা, নিজের কাজের কথা তাঁদের জানানো। অনেকবার যেতে যেতে এটা একসময় রুটিনে পরিণত হল। কাজের বাইরেও এটা হল বন্ধুদের সাথে, কলিগদের সাথে দেখা করার উপলক্ষ্য। কনফারেন্স হলে যাঁদের সাথে কোন বিষয়ে প্রচণ্ড দ্বিমত, তর্কবিতর্ক সন্ধ্যায় তাঁদের সাথেই একসাথে রেস্টুরেন্টে যাওয়া, হৈচৈ করে খাওয়া দাওয়া। এবার কনফারেন্...

কাশ্মীর

Image
ছোটবেলায় অনেকগুলো প্রিয় নামের একটা ছিল কাশ্মীর । শীতের সকালে আর সন্ধ্যায় কাশ্মীরি শাল ছিল একান্ত বন্ধু । বাড়ির সবারই কাশ্মীরি শাল ছিল । এখানে যদিও গায়ে দিই না, তবুএ একখানা শাল ঠিকই আছে । মা কখনও কাশ্মীর বলতেন না, বলতেন ভূস্বর্গ কাশ্মীর । আর সেটা শুনে শুনে কাশ্মীর সম্পর্কে কল্পনায় কত কিছু গড়তাম মনে মনে । রামায়ণ মহাভারতের যুগে দেবতারা এই ভূখণ্ডে মানুষের সাথে ঘুরে বেড়াতেন, প্রেম করতেন, কাউকে বর দিতেন, কাউকে বা অভিশাপ । দেবতারা তখন ছিলেন ঘরের মানুষ, আপন জন, সুখ দুঃখের ভাগীদার । পরে মানুষের অত্যাচারে দেবতারা পালিয়ে গেছে, সাথে নিয়ে গেছে স্বর্গটাকেও । তাই কাশ্মীর আর ভূস্বর্গ নেই । সেও আজ পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার মতই ভালোমন্দ সব রকমের মানুষ দিয়ে ভরা । ফেসবুকের বাংলাদেশ ডোমেন দেশের মানুষের মতই হুজুগী । কয়েকদিন আগে ডেঙ্গুকে তাড়িয়ে কাশ্মীর এলো স্ক্রীনে । আর কিছু হোক না হোক মন্ত্রী-মেয়র আর সেই সাথে মশারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচল । প্রথম পোস্টগুলো দেখে তো মনেই হয়েছিল পাক ভারত যুদ্ধ বেধে গেছে । পরে দেখলাম, না – ৩৭০ ধারা বাতিল হয়েছে । যদিও তখন ৩৭০ ধারা সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল...

প্রিয় ট্রাম্প ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

Image
প্রিয়া সাহার দুঃখটা যেন তুষের আগুনের মত, নিভে যেতে যেতেও ধুক ধুক করে করে জ্বলছে । আসলে অনেক দিন হয়ে গেল ব্যাপারটা, ভেবেছিলাম ল্যাঠা চুকে গেছে । তারপরও ফেসবুকে এ নিয়ে মাঝে মধ্যে পোস্ট দেখি, তাই এই লেখা । যদিও মনে করি এসব ঘটনা যত ইগ্নোর করা যায়   ততই ভাল । কিন্তু ইগ্নোর করার মত ঘটনা কি এটা? আমি প্রথম ঘটনাটা জানি টিটোর পোস্ট থেকে, যদিও বিস্তারিত কিছুই সেখানে ছিল না । পরে বিভিন্ন কাজেকর্মে ভুলে যাই, কিন্তু পরের দিন ফেসবুক যখন সয়লাব প্রিয়া সাহাকে নিয়ে, যখন   ফেসবুকের বাংলাদেশ ডোমেনে প্রিয়া নামটা সবচেয়ে অপ্রিয় হয়ে ওঠে তখন ইউটিউবে ঢুকে ভিডিওটা দেখি । সাথে সাথে মনে কিছু প্রশ্ন জাগে, যদিও তখন লেখার তেমন কোন প্রয়োজন মনে করিনি । মানুষ মাত্রেই তার সুখ দুঃখের কথা অন্যদের কাছে বলে হালকা হতে চায় । আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সাফল্যের কথা যেমন অন্যদের বলে গর্ব বোধ করি, তাদের ব্যর্থতার কথা বলেও অন্যদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করি । এটা মানুষের স্বভাব । এসব আমরা করি যখন নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না থাকে । যতদিন সম্ভব ঘরের ঝগড়া মানুষ চেপে রাখে, তবে একটা সময় আসে যখন সে আর চেপে রাখতে পারে...