অরাজ্যের গল্প
বর্তমানের ডিলেমা "উন্নয়ন না গণতন্ত্র?" অনেকেই উন্নয়নের কথা বলেন, কিন্তু ভুলে জান যে গণতন্ত্র ছাড়া উনয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়ন হলেও সেটা সার্বিক হয় না। এটা অনেকটা ভালো খেয়ে শরীর সব দিক থেকে সুস্থ ও সবল না রেখে বিশাল এক ভুঁড়ির মালিক হওয়ার মত যেটা একসময় নানা অসুখের কারণ হয়। দেশের ব্যাপারটাও তাই। গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহিতা থাকে না, আর জবাবদিহিতা না থাকলে কিছুই থাকে না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচার, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে আধুনিক সমাজের সমস্ত চিহ্নগুলো একে একে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দেশ আর দেশ থাকে না, সেটা বিদেশ হয়ে যায়, মানে এর সাধারণ নাগরিকেরা পরিণত হয় আক্ষরিক অর্থে নাগরিক অধিকারবিহীন বেআইনি অনুপ্রবেশকারীতে। কাগজে কলমে কিছু অধিকার থাকলেও সেটা বাস্তবে কখনই পাওয়া যায় না। জবাবদিহিতা না থাকলে কেউ আর জনগণের কাছে তাদের কর্মের জবাব দেয় না, সেটা সুকর্মই হোক আর কুকর্মই হোক। ফলে কী ভিসি, কী ডিসি, কী বিচারক, কী প্রচারক - সবাই "আপনার কাজ কি?" এ প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগ। কারণ তারা সবাই জানে তাদের একমাত্র কাজ ক্ষমতাসীনদের খুশি রাখা, তাদের ফায়ফরমাস খাটা যা কিনা মুখ খুলে বলা যাবে না। যেহেতু এসব কর্মচারীদের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নেই, যেহেতু এদের অধিকাংশের ভাগ্য নির্ধারণকারী উপরওয়ালারা তাই এরা কখনই কারও তোয়াক্কা করে না। তারা জানে বসকে কীভাবে খুশি রাখতে হয়, আর সেটাকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই ছোটখাটো একেকটা বস বনে যায়। এ সবই গণতন্ত্রের নামে সামন্ততন্ত্র বা জমিদারী প্রথায় শাসনের ফল। তাই ভিসি তার ছাত্রছাত্রীদের, কারখানা মালিক তার কর্মচারীদের, দলের যেকোনো নেতা তার কর্মীদের দাস মনে করে। অন্তত সমাজের সকল পর্যায়ে এর প্রকাশ আমরা দেখি। আর এই গনতন্ত্রহীনতার সুযোগ নিয়ে সবাই পরিণত হয় একেক জন পাতি রাজায়। এক ভিসি ক্ষমতাবলে ছাত্রীকে গালিগালাজ করে, আরেক ছাত্র তার ক্ষমতা খাটিয়ে ভিসিকে হুমকি দেয়। এ অনেকটা ঢাকা শহরের ট্রাফিকের মত - যে যেভাবে পারছে সেভাবেই চলছে। এ যেন আমরা সবাই রাজা আমাদের এই তিমির অরাজ্যে।
দুবনা, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
দুবনা, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Comments
Post a Comment