মহালয়া

গতকাল থেকেই একের পর এক মহালয়ার শুভেচ্ছা বার্তা আসতে শুরু করেছে বন্ধুদের কাছ থেকে। এসব বার্তা মনে করিয়ে দিচ্ছে ফেলে আসা শৈশব আর কৈশোরের কথা। পূজার শুরু আর প্রায় সপ্তাহ খানেক পরে হলেও মহালয়াই নিয়ে আসে মায়ের আগমনী বার্তা। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই বাড়িতে শুরু হত মহালয়ার প্রস্তুতি, সবাই অপেক্ষা করত বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মা দুর্গার আগমন বানী শোনার জন্য। মস্কো আসার পরে এটাকে আমার অনেক সময়ই মনে হত লেভিতানের দরাজ গলায় জার্মানির সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধ ঘোষণা করার মত। খুব ছোট বেলায় আমাদের ঘরে একটা বিশাল রেডিও ছিল, সবাই সেটাকে ঘিরে বসেই আমরা মহালয়া শুনতাম। আগের রাতে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়তাম, যাতে খুব ভোরে উঠতে পারি। মহালয়ার পরে অনেক সময় ধরে আলোচনা চলত এবারের মহালয়া নিয়ে। ঠিক সময়টা মনে নেই, তবে একবার মানবেন্দ্র তার মহাসিন্ধুর ওপার থেকে গেয়ে সবার মন জয় করেছিলেন। ছোটবেলায় দেবদেবীদের প্রতি ভয় বা ভক্তি থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তাঁদের নিজেদের অসহায়ত্ব দেখে নিজের উপরই আস্থা রাখতে শিখতে শুরু করি। আর এক সময় এসব দেবদেবীরা কালের গর্ভে হারিয়ে যান। তবে ফেসবুকের কল্যাণে চাই বা না চাই, দেবদেবীরা আবার এসে ভিড় করতে শুরু করে টাইম লাইনে। একটু একটু করে ফিরে আসে মলিন হয়ে যাওয়া স্মৃতি। তবে সে স্মৃতি বর্তমানের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। অনেক আগে মহালয়া, পূজা-পার্বণ ঋতুর মতই একই ভাবে ফিরে এলেও এখন আর তেমন আসে না। যে ধর্মীয় উৎসব এক সময় জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য আনন্দ বয়ে আনত, আজ তাই মানুষে মানুষে ভেদাভেদের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটাও যতটা না ধর্মীয় তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে। এক সময় সব রাজনৈতিক দল দেশের উন্নতির কথা ভেবেই কাজ করত, তাই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীতার মধ্যেও কিছুটা ঐক্যের সুর ছিল। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য যতটা না দেশের উন্নয়ন তার চেয়ে বেশি বিরোধী দল দমন আর নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। একই চিত্র আমরা দেখি বিভিন্ন কোম্পানির ক্ষেত্রেও। তাই নতুন যুগে বিভিন্ন ধর্মও যে পরস্পরের শত্রু হবে তাতে অবাক হবার কী আছে? আমাদের ছোটবেলায় ঈশ্বর, আল্লাহ্‌, গড সব এক ছিলেন। সেদিন কে যেন বলল এখন তাঁদের আর এক বলে মনে করা হয় না। হবেই বা কেন? এটাকে স্বীকার করা মানে তো বিভিন্ন ধর্মের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করা। তবুও মানুষ আশা থাকে, আশা করে অন্ধকারের পরে একদিন আলোর দেখা মিলবেই মিলবে আর সে আলোতে সমস্ত অন্ধকার, সমস্ত অজ্ঞানতা সব দূর হয়ে যাবে।
সবাইকে শুভেচ্ছা!
দুবনা, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯      



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি