ঈশ্বর
"তোমাকে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে" কথাটি মহামায়া
বলেছিলেন কংসকে উদ্দেশ্য করে। এর একটা অর্থ হতে পারে "সবকিছুর ধ্বংসের চাবিকাঠি তার
ভেতরেই থাকে।" কোন কিছু
বদলাতে হলে ভেতর থেকেই সেটা করতে হয়, শুধু বাইরে থেকে কোন কিছু পরিবর্তন করতে গেলে
প্রচণ্ড বিরোধের মুখোমুখি হতে হয় যা অতিক্রম করা অনেক সময়ের ব্যাপার।
ঘরের শত্রু বিভীষণের সাহায্য ছাড়া রামও সহজে লঙ্কা জয় করতে পারে না।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে এ কথাই বারবার মনে পড়ছে। শুধুমাত্র শাস্ত্রের সাহায্য নিয়েই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল সামাজিক বাঁধাগুলো পেরিয়ে সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা। বিধবা বিবাহ প্রচলন বা সতীদাহ রোধ - এগুলো শুধু সামাজিক নয়, মানসিকতার পরিবর্তনও বটে। এসব পরিবর্তন মানতে গিয়ে ব্যক্তি মানুষকে শুধু নয়, পুরো সমাজকে একটা বিশাল মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আর বিধবা বিবাহ প্রচলন সফল ভাবে তিনি করতে পেরেছেন, মানুষের সমর্থন লাভ করতে পেরেছেন শুধুমাত্র যে শাস্ত্র মানুষ বিশ্বাস করে সেই শাস্ত্রকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করে বা শাস্ত্রের মধ্যে তাঁর এই কর্মকাণ্ডের যুক্তি খুঁজে বের করে।
আজ আমরা যখন সমাজ পরিবর্তনের কথা বলি, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করার কথা বলি, আমরা সেটা সমাজের ভেতর থেকে না করে সাধারণত নিজেদের সমাজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সেটা করি বা করতে চাই। যুগ যুগ ধরে জেঁকে বসা বিশ্বাস সাধারণ মানুষকে আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলে। আমাদের প্রচেষ্টা হয় বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া। যেটা দরকার, সেটা হল ভেতর থেকে পরিবর্তন আনা, প্রতিষ্ঠিত সামাজিক আচার আচরণ, মূল্যবোধকে উপহাস না করে, সেই মূল্যবোধের ভেতর থেকে যুক্তি বের করেই সমাজকে পরিবর্তন করা। সেক্ষেত্রে সমাধানটা হয় স্ব-সামঞ্জস্যপূর্ণ বা সেলফ-কনসিস্টেন্ট। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেটা বুঝেছিলেন। দুঃখজনক হলেও আমরা নিজেরা সেটা বুঝি না। সেদিক থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, তাঁর চিন্তা ভাবনা, তাঁর কর্মপদ্ধতি আজও প্রচণ্ড রকম প্রাসঙ্গিক।
দুবনা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে এ কথাই বারবার মনে পড়ছে। শুধুমাত্র শাস্ত্রের সাহায্য নিয়েই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল সামাজিক বাঁধাগুলো পেরিয়ে সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা। বিধবা বিবাহ প্রচলন বা সতীদাহ রোধ - এগুলো শুধু সামাজিক নয়, মানসিকতার পরিবর্তনও বটে। এসব পরিবর্তন মানতে গিয়ে ব্যক্তি মানুষকে শুধু নয়, পুরো সমাজকে একটা বিশাল মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আর বিধবা বিবাহ প্রচলন সফল ভাবে তিনি করতে পেরেছেন, মানুষের সমর্থন লাভ করতে পেরেছেন শুধুমাত্র যে শাস্ত্র মানুষ বিশ্বাস করে সেই শাস্ত্রকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করে বা শাস্ত্রের মধ্যে তাঁর এই কর্মকাণ্ডের যুক্তি খুঁজে বের করে।
আজ আমরা যখন সমাজ পরিবর্তনের কথা বলি, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করার কথা বলি, আমরা সেটা সমাজের ভেতর থেকে না করে সাধারণত নিজেদের সমাজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সেটা করি বা করতে চাই। যুগ যুগ ধরে জেঁকে বসা বিশ্বাস সাধারণ মানুষকে আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলে। আমাদের প্রচেষ্টা হয় বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া। যেটা দরকার, সেটা হল ভেতর থেকে পরিবর্তন আনা, প্রতিষ্ঠিত সামাজিক আচার আচরণ, মূল্যবোধকে উপহাস না করে, সেই মূল্যবোধের ভেতর থেকে যুক্তি বের করেই সমাজকে পরিবর্তন করা। সেক্ষেত্রে সমাধানটা হয় স্ব-সামঞ্জস্যপূর্ণ বা সেলফ-কনসিস্টেন্ট। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেটা বুঝেছিলেন। দুঃখজনক হলেও আমরা নিজেরা সেটা বুঝি না। সেদিক থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, তাঁর চিন্তা ভাবনা, তাঁর কর্মপদ্ধতি আজও প্রচণ্ড রকম প্রাসঙ্গিক।
দুবনা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Comments
Post a Comment