শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে পেরেস্ত্রইকা আর গ্লাসনস্তের পাশাপাশি আর একটি বহুল প্রচলিত শব্দ ছিল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। পশ্চিমা বিশ্বের নেতাদের কাছে তেমন পাত্তা না পাওয়ায় সেখানে এটা কখনোই খুব বেশি প্রচার পায়নি। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বে যখন আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য তখন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আইডিয়াটা খরচের খাতায় চলে যায়। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য প্রথম যে শর্ত সেটা হল পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, কম্প্রোমাইজ করার মানসিকতা। এটা মনে হয় পৃথিবী থেকে দিন দিন উঠে যাচ্ছে। মানবতার কথা বললেও, অন্যকে মানবিক হতে বললেও আমরা নিজেরাই আর মানুষ থাকতে পারছি না। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন চারিদিকে শুধু হিন্দু আর মুসলমান - মানুষ কোথায়? এখন আমরা সবাই হয় নারী, না হয় পুরুষ, হয় হিন্দু না হয় মুসলমান বা বৌদ্ধ, খৃস্টান, আস্তিক বা নাস্তিক ইত্যাদি। মানুষের বৃহৎ পরিচয় ত্যাগ করে আজ আমরা সবাই কোন না কোন দল, গোষ্ঠী, ধর্ম বা অন্য কোন পরিচয়ে পরিচিত - যেখানে অন্য কোন চিন্তার স্থান নেই। মৌলবাদকে ঘৃণা করলেও কাজে-কর্মে, চিন্তা-চেতনায়, চলনে-বলনে আমরা সবাই মৌলবাদী। “বৈচিত্রের মধ্যেই ঐক্য” এ কথাটি আমরা মন্ত্রের মত জপলেও যখন নিজেদের সেই বৈচিত্র মানার প্রশ্ন আসে – দেখা যায় সেটা মানতে আমরা প্রস্তুত নই। যারা কথায় কথায় “অন্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত” বলে দেয়াল ভরে ফেলে তারাই দেখা যায় যেকোনো রকম ভিন্ন মত শুনতে সবচেয়ে বেশি অনাগ্রহী। আর অন্যকে শোনার, অন্যের মতও যে তার নিজের মতের মতই টিকে থাকার অধিকার রাখে সেটাকে মেনে নেওয়ার অনিচ্ছা হল মৌলবাদের প্রকারভেদ। আর সবাই যেখানে মৌলবাদী সেখানে পরমতসহিষ্ণুতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এসবই পুঁথির কথা, অবাস্তব বাস্তবতা।
দুবনা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি