মস্কোয় রবীন্দ্র জন্মোৎসব
৭ মে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জন্মদিন। এর আগে কোন দিন মনেই হয়নি যে কবিগুরুর জন্মদিন ৭
মে। সবসময় জানতাম আর বলতাম ২৫ বৈশাখ। যাহোক, গত কাল ফেসবুকে
দেখলাম আজ “রেচনই ভকজালে” কবিগুরুর যে মূর্তিটা আছে, তার সামনে জড় হবে সবাই। স্মিতার কাছ থেকে সব খোঁজখবর নিয়ে ঠিক করলাম যাবো ওখানে। জানি না মস্কোয় ঠিক
কবে থেকে এই দিনে সবাই কবিগুরুর মূর্তির ওখানে জড় হয়, তবে এবারই আমার প্রথম যাওয়া। মনে পড়ে, ছাত্রজীবনে এর পাশ দিয়েই আমরা হেঁটে যেতাম বুখতা রাদস্তি পিকনিকের লঞ্চ
ধরতে। গর্বে বুক ফুলে উঠতো ওনাকে দেখে। শত হলেও মস্কোয় একমাত্র
বাঙ্গালীর মূর্তি। বন্ধুত্ব পার্কে বার্চবনের শ্যামলীতে এই মূর্তি
– এটা শুধু কবিগুরুর প্রতিই নয়, বাংলা ভাষার প্রতিও সম্মান জানানো। ১৯৯৪ সালে মস্কো ছাড়ার পর এদিকে আর আসা হয় নি। ২০১০ থেকে যখন আবার
মস্কোয় যাতায়াত শুরু হোল, বন্ধুদের মুখে বা ফেসবুকের পাতায় কবিগুরুর জন্মদিনে সবার
বন্ধুত্ব পার্কে মিলনের খবর পেতাম। তবে মস্কোর বাইরে থাকার ফলে
যাওয়া হয়নি আগে। এবার ৭ মে রবিবার, তাই সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না,
ক্যামেরা নিয়ে রওনা হলাম রেচনই ভকজালের পথে।
সকালে দিদিকে ফোন করে জানলাম
মানিকগঞ্জে দিনটি পালন করবে আগামী কাল। মনে খটকা লাগলো। এই প্রথম মনে হোল শুধু পয়লা বৈশাখই নয়, আমাদের জীবনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বাইরে আরো
বেশ কিছু দিবস বাংলা পঞ্জিকা ধরে পালন করা হয় – যেমন ২৫ বৈশাখ কবিগুরুর জন্মদিন বা
১১ জ্যৈষ্ঠ বিদ্রোহী কবির জন্মদিন। আর ১৪ না ১৫ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ
এই গ্যরাকলে পড়ে আমাদের জন্মদিনগুলোও ভেসে বেড়ায় উজান ভাটায়, প্রোগামিংএর ভাষায়
জাকে বলা জয় ভাসমান তারিখ।
ভারতীয় দুতাবাসের আয়োজনে
এই অনুষ্ঠানে মস্কোবাসী ভারতীয় এবং বাংলাদেশী ছাড়াও উপস্থিত থাকেন রাশিয়ান
রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ আর বাংলা ভাষা শিক্ষার্থীরা। এবারও ব্যতিক্রম ছিল না। বাংলাদেশ
দুতাবাসের পক্ষ থেকে ছিলেন আন্দ্রে দ্রং তার পরিবারসহ। কয়েকটি গতানুগতিক বক্তব্যের
মাঝে ছিল অধ্যাপক সেরেব্রিয়ান্নীর রবীন্দ্রনাথের উপর সারগর্ভ আলোচনা। রাশিয়ান
ছাত্রছাত্রীদের কবিতা পাঠ (রবীন্দ্রনাথের কবিতার ইংরেজী ও রাশিয়ান অনুবাদ), কৃষ্ণাদির
আর মিতালীর কবিতা আর নিনিশার রবীন্দ্র সঙ্গীত।
দেশে এখন ঘটা করে ২৫
বৈশাখ পালন করা হয়। কোথাও কোথাও কয়েকদিন ব্যাপী। সে দিক থেকে ভাবলে বাংলার অন্যতম
শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা হিসেবে আর নিজের গান দিয়ে
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তির আন্দোলনে প্রেরণাদানকারী হিসেবে মস্কোস্থ
বাংলাদেশ দূতাবাস ও কমিউনিটি বেশ বড় করেই এ দিনটা পালন করতে পারতো বন্ধুত্ব
পার্কে। না, আমি ভারতের সাথে অনুষ্ঠান করার বিরোধী নই, তবে এসব অনুষ্ঠান যত বেশী
করা যায়, আমরা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে
তত বেশী এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারি।
মস্কো, ০৯ মে ২০১৭
Comments
Post a Comment