রাজনীতির গোল্লাছুট
বন্ধু আবু আলী
লিখেছে
“এশিয়া আফ্রিকা ইউরোপ আমেরিকা মধ্য আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া পুঁজিবাদী জাপান কোরিয়া সহ আরো অনেক দেশে বাম মধ্য বাম দল আছে, নেতা আছে তারা মানুষের কথা বলেন, সামাজিক ন্যায় বিচার সমতার কথা বলেন, ভোট করে এমপি হয়ে সংসদে এসে মন্ত্রী মিনিস্টার না হন কিন্ত শোষিত নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের পক্ষে সোচ্চার থাকেন !
আমাদের প্রতিবেশি পশ্চিম বঙ্গ ত্রিপুরায় দীর্ঘকাল বাম জোট ভোট করেই ক্ষমতায় এসেছে এবং এখনো তারা অনেক বড় ফ্যাক্টর কিন্ত আমাদের দেশে বামেরা এই প্রান্তিক অবস্থানে কেন, কেনই বা তারা খন্ডে খন্ডে বিভক্ত, কারণ অনুসন্ধান অতীব জরুরী !!”
অন্য দিকে লিপি লিখলো
“দেশে কোনো শক্তিশালী, যোগ্য বিরোধী দল নাই। ফলে ক্ষমতাসীনরা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে মনে করছে নিজেদের। আমরা যারা বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদী হই, আমরাও বিচ্ছিন্ন, ঐক্য নেই আমাদের। এভাবে চলতে দেয়া যায় না, এই যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, এই দায় আমাদেরও।
দেশে ধর্ষণের মহোৎসব চলছে, কোনদিকে চোখ ফেরানোরও সময় পাচ্ছি না, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে, জিজ্ঞাসা করার কেউ নেই, এই যে সংসদ সদস্যদের টাকার পাহাড় জমছে, আমরা কেন সেই পাহাড় ভেঙে দিতে পারছি না, কারণ ওই একই, আমরা এক নই।
আজ দেশের প্রয়োজনেই
এক
হতে
হবে। নইলে
একদিকে
শফী
হুজুররা
আরও
জমি
বরাদ্দ
পাবে,
দুর্নীতিবাজরা
টাকার
পাহাড়
গড়বে,
আর
তাদের
ছেলেরা
এরকম
গুলশান-বনানীতে
হোটেল
বানিয়ে
সেখানে
ধর্ষণের
কারখানা
গড়তেই
থাকবে
....আর
পার্টি
ফান্ডে
টাকা
দিয়ে
সব
জায়েজ
করে
ফেলা
হবে
.....একজন
নারী
প্রধানমন্ত্রী
এখনও
কী
করে
চুপ
করে
আছেন
এতো
এতো
ধর্ষণের
ঘটনার
পরও,
সেই
হিসেবটাই
মেলাতে
পারছি
না।“
দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে এলেও প্রশ্নটা এক। দেশে বিরোধী
শক্তির অনুপস্থিতি। আমার মনে হয় এটা আমাদের ইতিহাসের সাথেই জড়িত। আর সেটা একাত্তর
নয়, আরো আগে থেকে। ব্রিটিশ আমলে পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষেরা প্রথম কংগ্রেস
তৈরি করে। যদিও সিপাহী বিদ্রোহসহ বিভিন্ন আন্দোলন এদেশের মানুষের স্বাধীনতার
ইচ্ছাকে জাগিয়ে রেখেছিল, একমাত্র কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই তা সাংগঠনিক ও
রাজনৈতিক রূপ পায়। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপথে নেবার জন্য ব্রিটিশরাজের প্রত্যক্ষ
মদদে সৃষ্টি হয় মুসলিম লীগ। এই মুসলিম লীগের হাত ধরে আসে পাকিস্তান। কিন্তু
ক্ষমতার জমাখরচে মুসলিম লীগের নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়ায় গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ।
বিরোধী দল হিসেবে তাদের পথ মসৃণ ছিল না যে সম্পর্কে “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”তে লিখেছেন
শেখ মুজিব। তারপরও নেতৃত্বের গুনে আর গনমানুষের সমর্থনে নিজের নাম থেকে ধর্মীয়
টুপিদাড়ি ছেঁড়ে আওয়ামী লীগ পুরো পাকিস্তান আমলটাতেই আমাদের অঞ্চলের প্রধান
রাজনৈতিক শক্তিতে পরিনত হয় আর তাদের নেতৃত্বেই স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। কিন্তু
স্বাধীনতার পরপরই একদলীয় শাসনের পথে এগোয় দেশ। এরপর পচাত্তর, দীর্ঘ সামরিক শাসন।
কিন্তু বারবার মানুষই নেমেছে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক বিরোধীদলগুলোর
সাথে হাতে হাতে মিলিয়ে স্বৈরাচার হটিয়েছে বাংলার সাধারণ মানুষ।
সমস্যাটা আমার মনে
হয় অন্য জায়গায়। এরশাদের পতনের পর থেকে কী বিএনপি কী আওয়ামী লীগ, উভয় দলই ক্ষমতায়
থাকাকালীন চেষ্টা করেছে বিরোধী দলকে ধ্বংস করে দিতে। নিজেদের গণতান্ত্রিক দল বললেও
গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত যে জনগনের স্বাধীনভাবে সরকার গঠনের অধিকার, মানে
বিরোধী দলের উপস্থিতি সেটা তারা একেবারেই ভুলে যায়। বলতে পারেন, আমাদের দেশে
গঠনমূলক বিরোধী দল নেই। সেটা মনে হয় আমাদের দেশে যেকোন বিরোধী দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য – কারন প্রধান
দু দলের আনটাগনিষ্টিক চরিত্র। শাহবাগ আন্দোলনের সময় আশা করেছিলাম আওয়ামী লীগ এই
সুযোগে দেশে স্বাধীনতার পক্ষের এক শক্তিশালী বিরোধীদল গঠনে সাহায্য করে শুধু দেশের
নয়, নিজেদের ভবিষ্যৎও নিষ্কণ্টক করবে। কিন্তু রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার ফলে সেটা আর
হয়ে ওঠেনি। বরং সরকারী দল সব সময়ই চেষ্টা করেছে বিভিন্ন জোটের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলোকে
দুর্বল করতে। বাম দলগুলো যেভাবে এই বিভাজনের শিকার হয়েছে যে মনে হয় – এটা “ডিভাইড অ্যান্ড
রুল নয়, ডিভাইড অ্যান্ড কিল”। আমাদের দেশের মানুষ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে
ঠিকই, কিন্তু স্বৈরাচার যখন গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে ক্ষমতায় থাকে – মানুষকে তার
বিরুদ্ধে নামানো কঠিন। বুঝতে হবে, আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক ধারা তার জন্ম একাত্তরে
নয়, বাহান্নতেও নয় – তার জন্ম ব্রিটিশের কুটিল মস্তিষ্ক থেকে যার মুল উদ্দেশ্য ছিল
শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে উঠতে না দেয়া আর বিরোধী দলে অন্তরকলহকে কাজে লাগিয়ে
নিজেদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা। ব্রিটিশরা চলে গেছে, দেশ দুই দুই বার স্বাধীন হয়েছে,
তবে সেই রাজনীতির উত্তারিধিকার আমরা এখনো বয়ে চলছি। যতদিন না আমরা এই চক্র থেকে
বেরিয়ে আসতে পারবো ততদিন কোন শক্তিশালী ও গঠনমূলক বিরোধী শক্তি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা
খুব একটা আছে বলে আমার মনে হয় না।
Comments
Post a Comment