মৃত্যুহীন জীবন

  

 

১৯৭২ সালস্বাধীনতার পরে ইন্ডিয়া গেলামঅনেকদিন ছিলাম বহরমপুর মাসি বাড়িএটা দামোদরের (যদিও গঙ্গা বলেই ডাকে) উল্টোদিকে, গোয়ালজান গ্রামেবাড়ির সাথেই স্কুলতাই শুরু করলাম স্কুলে যাওয়া। ১৯৬৯ সালে যখন প্রথম ইন্ডিয়া যাই, তখনও ওই স্কুলে কিছুদি গেছিলামস্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ক্লাস ছিল না, তাই মনে হয় স্কুলের প্রতি বেশ টান ছিলঘুম থেকে উঠেই চলে যেতাম স্কুলেবাংলা বইয়ে বিভিন্ন গল্প ছিলএখনও মনে আছে নেতজি সুভা, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনযদি ভুল না করি অবাক জলপান সেখানেই ছিলআর ছিল গ্রীক  গায়কের গল্পমা ছিলেন নেতাজীর ভক্তমার মুখে নেতাজির কথা শুনতে শুনতে কবে যে নিজেই তাঁর অনুরাগী হয়ে যাই এরপর ছিল তাঁকে নিয়ে অনেক গল্প, অনেক পড়াএক ধরণের অলৌকিক আওরা ছিল তাঁকে ঘিরেপরে শানেওয়াজ খানের আমি সুভাষ বলছি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ায়প্রায়ই তপন দার আলমারি থেকে ওই বইটা নিয়ে পড়তাম, অনেক পরে যখন সিঙ্গাপুর যাই মনে মনে খুঁজে বেড়াই তাঁকেএক সময় অবশ্য সেই আবেগে ভাটা পরেযখন সোভিয়েত জনগণের উপর হিটলারের বাহিনীর অত্যাচারের কথা শুধু বইয়ে পড়ে নয় সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা সেই বর্বরতার চিহ্ন দেখি, নেতাজি হিটলারের সাহায্যে ভারত স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন বলে কষ্ট পেয়েছিপরে তাঁর An Indian Pilgrim, The Indian Struggle, রুদ্রাংশু মুখারজির Nehru and Bose: Parallel lives এসব বই পড়ে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়নতুন করে নেতাজিকে ভালবাসতে শিখিমানুষ মাত্রই ভুল করে, তবে কিছু ভুল ইচ্ছাকৃত, ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের হিসেব নিকেশ থেকে, কিছু ভুল মানুষ করে পথ খুঁজতে গিয়েজানি না, কী হতে পারত নেতাজি বেঁচে থাকলে, তবেনিয়ে ভাবতে মানা নেইযদি আমেরিকার দিকে তাকাই কী দেখি? লড়াই করে অর্জিত স্বাধীনতা তাদের সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন করেছে, তাদের পৃথিবীর অন্যতম সফল জাতিতে পরিণত করেছেবাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আমার সেটাই মনে হয়একাত্তরে দীর্ঘ সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের ফলে আমাদের দেশেও এক ধরণের দেখিয়ে দেওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠেছে।  বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া সন্তান যেমন সব সময় অন্যদের দেখিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে আমরাও কিন্তু সব ময় চেষ্টা করি সব ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যেতেভারতকেওভারত আর পাকিস্তা লড়াই করে আজাদী অর্জন করেনি, করেছে ইংরেজের কাছে আবেদন নিবেদনের মধ্য দিয়েতাই এরা কখনও ইংল্যান্ডকে ছাড়িয়ে যাবার কথা ভাবেনি, বরং তাকে অনুসরণ করেছেনেতাজি ভিন্ন পথে গিয়েছিলেনতিনি অনুগ্রহ নয়, লড়াই করে ভারত স্বাধীন করতে চেয়েছিলেনসেটা হলে হয়তো দেশ ভাগ হত না, হলেও দেশেও মানুষ হত ভিন্ন রকমের, আত্মবিশ্বাসে ভরপুরএটাই হয়তো ভারতকে আলাদা করত, ভারতকে অন্য পথে নিয়ে যেতসব চেয়ে বড় কথা তিনি ক্ষমতার জন্য নিজের স্বপ্নের সাথে কম্প্রোমাইজ করেননিআজীবন যে স্বপ্ন দেখেছেন সেটা অর্জনের জন্য নিষ্ঠার সাথে লড়াই করে গেছেননিজেকে বিশ্বাস করা, নিজের স্বপ্নকে বিশ্বাস করা - কজন সেটা পারেআজ তাঁর জন্মদিনমৃত্যু নিয়ে রহস্য তাঁকে মৃত্যুহীন করেছেননেতাজি মৃত্যুহীন  শুভ জন্মদিন।  

 

দুবনা, ২৩ জানুয়ারি ২০২১           




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি