সাব দীর্ঘজীবী হোক!

সাবের নির্বাচন প্রচারণা শেষের পথে। আর মাত্র এক দিন। এরপর নতুন কমিটি নির্বাচিত হবে। সবাই বসবে হিসেব নিকেশে কী পেলাম আর কী পেলাম না সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। তাই আমিও ভাবছি – মন্দ কী যদি এখনই একটি প্রাথমিক হিসেব করি একান্তই নিজের জন্য।

আসলে এসব কিছু শুরু হয় হঠাৎ করেই। সাবের কাজকর্ম চলছিল গতানুগতিক ভাবে। পিকনিক শেষ। আয়োজন চলছে ০৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের। এরপর আয়োজিত হবে পিঠা উৎসব। চলছে কয়েকটি ট্যুরের আয়োজন – সুন্দরবন, নেপাল, মস্কো। অনেকেই নাম লেখাচ্ছেন সেখানে। আমি দূর থেকে দেখছি। যেহেতু এসব গ্রুপই ছিল বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখার প্রায় একমাত্র মাধ্যম, তাই নিজের লেখা এখানে প্রকাশ করি। আমার লেখায় বিভিন্ন বিষয় থাকে – থাকে রাজনীতি, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ, কৌতুক। এ নিয়ে অ্যাডমিনের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। এমনকি বহিষ্কার পর্যন্ত। আবার যোগ দেয়া। সাবের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছর নতুন কমিটি হয়নি, তবে বিভিন্ন সময়ে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩১ সে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছিল। তাই কথা উঠে সাবের নির্বাচন নিয়ে। আসলে ফোরামে কথা বলার বাধানিষেধের কারণেই হয়তো নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা সামনে চলে আসে। হঠাৎ করেই একজন বেশ সক্রিয় সদস্যকে গ্রুপ থেকে বহিস্কার করা হয়। ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ ও খুলে নতুন গ্রুপ যেখানে সবাই মন খুলে কথা বলতে পারে। আগের গ্রুপের না বলা কথাগুলোই এখানে বলতে শুরু করে সবাই। এভাবেই অনেকটা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই সাবের বর্তমান ইসি হয় আক্রমণের শিকার। এ এক অদ্ভুত পরিবেশ। একদিকে বর্তমান ইসির নেতৃত্বে সাবে অনেক কিছুই হয়েছে যা আগে হয়নি। এদের বিভিন্ন কাজকর্ম ও উদ্যগের কারণেই সাব আজ দেশের বাইরেও যারা অবস্থান করছেন সেই সব ভিপুস্কনিকদের কাছে প্রিয় নাম হয়ে উঠেছে, অনেকেই এখন চেষ্টা করে তাদের দেশে যাওয়ার প্ল্যান এমন ভাবে করতে যাতে ২৫ ডিসেম্বরের বাৎসরিক পিকনিকে উপস্থিত থাকতে পারে। এক কথায় প্রযুক্তির কল্যাণে সাব আবার আমাদের ভিপুস্কনিকদের একটা ভালোবাসার জায়গায় পরিণত হয়েছে। তাই হঠাৎ এ ধরণের পরিস্থিতি অনেকের কাছেই অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত মনে হয়েছে। তবে আমার দেখায় একটা গ্যাপ পারে। কারণ আমরা যারা বিদেশে থাকি, এমনকি ঢাকার বাইরে থাকি তাদের অধিকাংশের কাছে সাব মানেই পিকনিক, পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়া। এমনকি ৮ মার্চ, পিঠা উৎসব বা রুশ দূতাবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মূলত ঢাকা বা ঢাকার আশেপাশে বসবাসকারী ভিপুস্কনিকরাই অংশ নেয়। তাই সাবের দৈনন্দিন বা সাংগঠনিক জীবন নিয়ে আমাদের ধারণা বা আগ্রহ তুলনামূলক কম। তবে আমি একটু খোঁজখবর রাখতাম এ জন্যে যে রাশিয়ায় থাকার ফলে বর্তমানে এখানে অধ্যয়নরত অনেকের সাথেই যোগাযোগ গড়ে ওঠে, আর ওরা দেশে গিয়ে সমস্যায় পড়লে আমাকে জানায়। আমি ওদের সাবের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলি। তাই আমার বরাবরই ইচ্ছে সাবে যেন নতুনদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব থাকে। তাছাড়া হয়তো রাশিয়ায় থাকার কারণেই আমার ইচ্ছে আমাদের ভিপুস্কনিকরা যেন শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের মেধার ছাপ রাখে, সোভিয়েত ও রাশিয়ার শিক্ষা মানুষের কাছে নিয়ে যায়। সেটা ব্যক্তিগত ভাবে অনেকেই করেন, তবে আমার সুপ্ত ইচ্ছে সেটা যেন সাবের মাধ্যমেই করার চেষ্টা করা হয়। আর একারণেই সাবের নেতৃত্বের সাথে আমার মাঝে মধ্যে উত্তেজিত বাক্য বিনিময় হয়। আমার ধারণা আমার মত অনেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সাবের সাংগঠনিক কাজকর্মে খুশি বা সুখী ছিলেন না। আর এসব মিলেই শুরু হয় বিভিন্ন ধরণের উত্তপ্ত আলোচনা, ইসির সমালোচনা। তবে সেটা ছিল গঠনমূলক আলোচনা, যদিও কারো কারো ব্যক্তিগত রোষও প্রকাশ পায়। এর মধ্যে কিছু লোকের ব্যক্তিগত রেষারেষি, যেটা মূলত ছিল ওয়াসাকে ঘিরে সেটাও সাবে চলে আসে বা বলা যায় এই গ্রুপের সদস্যদের বিভিন্ন অসন্তোষকে কিছু লোক খুব সুক্ষ ভাবে ব্যবহার করে এক ধরণের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির জন্ম দেয়।

নির্বাচন নিয়ে কথা চলতে থাকে, চলতে থাকে সাধারণ সভার দাবি। এক সময় আমাদের জানানো হয় যে নির্বাচন কমিশন হয়েছে, তবে সেখানে ভুল করে একজন ইসি মেম্বার যোগ করায় তার পরিবর্তে অন্য কাউকে যোগ করে সেই কমিশন কাজ শুরু করবে। যদিও কেন এ রকম ভুল করা হল সে নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলি – তার কোন উত্তর মেলেনি। আমার মনে আছে কী ছাত্র সংগঠনে, কী আমাদের প্রবাসী পরিষদের সভায় – আমরা সব সময় গঠনতন্ত্র সাথে রাখতাম। যেকোনো বিষয়ে সিধান্ত নেবার আগে গঠনতন্ত্র দেখে পরিষ্কার করে নিতাম কোন সংঘর্ষ নেই তো! তাই বিষয়টা আমার কাছে তেমন পরিষ্কার মনে হয়নি। কিন্তু ঐ কথাই শেষ। যদিও অন্যান্য বিষয়ে ইসি কাজ করে যাচ্ছিল, নির্বাচন নিয়ে তারা কোন কথা বলেনি। ফলে এক ধরণের গুজব তৈরি হয় যে তারা নির্বাচন কমিশন বাতিল করে আগে সাধারণ সভা ডেকে গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে চায়। এর উদ্দেশ্য সভাপতি তৃতীয় বারের মত নির্বাচিত হতে চান। আমার বক্তব্য ছিল গঠনতন্ত্র বাইবেল নয়, এটা সংশোধন করা যেতেই পারে। তাহলে সভায় নিজেদের পক্ষে মত গড়ে তুলুন আর তিনি যাতে নির্বাচনে জিততে না পারেন সেই ব্যবস্থা করুন, বেশি বেশি করে নতুন মেম্বার করুন, বিশেষ করে নতুন যারা ফিরেছে তাদের। আমার উদ্দেশ্য একটাই – যত বেশি সংখ্যক সম্ভব নতুনদের সাবের সাথে সম্পৃক্ত করা। কারণ ১৯৭২ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত ২০ বছর সোভিয়েত ভিপুস্কনিকের বিপরীতে ১৯৯২ থেকে ২০১৭ বা ২০১৮ (২০১৭ বা ২০১৮ র ব্যাচ দেশে ফিরে গেছে ২০২৩ – ২০২৪ সালে) ২৭ বছরের ভিপুস্কনিকের সংখ্যা বেশি বই কম নয়, বিশেষ করে পুরাতন অনেকেই যখন কর্ম জীব শেষ করে বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। তাই এখন থেকেই এদের না আনলে পরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর কেউ থাকবে না। সেই উত্তেজনাময় পরিস্থিতির সময় আমি সহ অনেকেই সাবের সভাপতি তাকসিম ভাই বা নির্বাচন কমিশন প্রধান বজলু ভাইকে গ্রুপে এ নিয়ে লিখতে বলি। কিন্তু তারা চুপ করে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে গুজব বাড়তে থাকে। এরপর শুনলাম বজলু ভাই বাইরে যাচ্ছেন, এসেই নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের জানাবেন। কিন্তু তিনি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন আর ইসি নির্বাচন কমিশন বাতিল করল, যদিও বজলু ভাইয়ের অসুস্থতার কারণে সাকী আপাকে রেখে আরও দুই জন যোগ করে নতুন কমিশন গঠন করা যেত। বাস্তবে সেটাই হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন বাতিল করায় সেটা গঠনতন্ত্র বিরোধী বলে ঘোষণা দেয় সদস্যরা। এখানে শুরু হয় অন্য সমস্যা। বলা হয় নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেনি তাই ইসি বাধ্য হয়ে সেই ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা জন্ম দেয় নতুন সংকটের। আসলে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে ইসি তার ক্ষমতা অনেকটাই হারায়, তার কাজ হয় নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করা। কিন্তু গঠনতন্ত্রে কোথাও লেখা নেই নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ না করলে কে সংগঠন চালাবে। আসলে এসব পরিস্থিতি সাধারণত সৃষ্টি হয় না বিধায় গঠনতন্ত্রে লেখা নেই। এখন আমাদের এই বিষয়েও লিখতে হবে। এমতাবস্থায় আমি সহ অনেকেই গঠনতন্ত্রের আলোকেই তলবি সভার কথা বলি। এ নিয়ে প্রথমে কথা ও পরে কাজ শুরু হয়। শুরু হয় স্বাক্ষর সংগ্রহ। এসব দেখেই ইসি আমাদের তৎপরতার গুরুত্ব অনুভব করে এবং ০৮ জুন সাধারণ সভা ডেকে বসে। ফলে এর পরে তলবি সভার জন্য দরখাস্ত পেশ করা কতটুকু গঠনতান্ত্রিক সেই প্রশ্ন সামনে চলে আসে। সে নিয়ে আমি সহ অনেকেই লিখেছি। তবে এর ফলেই ইসি একটি সমঝোতা সভা ডাকে যেখানে ২৮ জুন একই দিনে সাধারণ সভা ও নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল যদিও সেই সমঝোতা সভা হয়েছিল আমাদের অনলাইন এক্টিভিটির কারণে আমাদের না জানিয়েই কয়েক জন সেই সভায় উপস্থিত হন এবং একটি সমঝোতায় আসেন। আমরা কয়েক দিন চেষ্টা করেও কারো কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে পারিনি, এমন কি কারা ছিলেন সেই সভায় সেটাও গোপনীয়তার অজুহাতে আমাদের জানানো হয়নি। যখন সেই সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গড়িমসি শুরু হয় তখনই আবার আমরা আম জনতা গুরুত্ব পেতে শুরু করি। আমার মনে হয় ঠিক তখনই আমাদের মধ্যে এক ধরণের অবিশ্বাসের বীজ রোপিত হয় – কি তাদের উদ্দেশ্য – সাবের ঐক্য নাকি আমাদের আন্দোলনকে পুঁজি করে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। যাহোক শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দিন ঘোষিত হয়। আমরা যারা তলবি সভার জন্য স্বাক্ষর দিয়েছিলাম – তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ সভা ও নির্বাচনের মাধ্যমে সাবকে গঠনতান্ত্রিক লাইনে ফিরিয়ে আনা। সেখানে নির্বাচন, প্যানেল এসব কথা আসেনি। যদিও এক সময় নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ ফোন করলে আমি নিজেই বলি প্রার্থীর বিষয়ে ধারণা ছাড়া নির্বাচনের আন্দোলনে নামা ঠিক নয়। তখন কয়েকটি নামের মধ্যে আবিদ খানের নাম আসে। আমি আপত্তি করিনি। এরপর হঠাৎ একজন একটি প্যানেল ঘোষণা করে। আমার ধারণা এটা ছিল অনেকের জন্যই শকিং। এ জন্যে নয় যে আমরা প্যানেলের পক্ষে বা বিপক্ষে। হঠাৎ দেখা যায় যারা তলবি সভার জন্য আবেদন করেছিল তারা নিজেদের অজান্তেই একটা বিভাজনের মধ্যে পড়ে গেছে। অথচ প্রথম থেকেই আমাদের বেশির ভাগের উদ্দেশ্য ছিল সাবের ঐক্য। আমি নিজে একবার প্রস্তাব দিয়েছিলাম তাহলে এমন কমিটি তৈরি হোক যেখানে আগের বারটি কমিটির কেউ থাকবে না। নতুন কমিটির মূল কাজ হবে ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টি ও সময় মত নির্বাচন দেয়া। দুই বছরের মধ্যে আমরা কিছু একটা করতে সক্ষম হব। সাধারণত এসব সংগঠনে মনোনয়ন পত্র জমা দেবার পরে চেষ্টা চালানো হয় প্রার্থীদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করা যেখানে তারা কথা বলে নির্বাচন এড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু অবিশ্বাস বা বিভাজন এতটাই যে সেটা সম্ভব হয়নি, ফলে কেউ মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেননি। এরপর অবশ্য একটি জুম মিটিং হয় প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সুযোগ দিয়ে যেখানে বুঝলাম কেউ কেউ নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে না হলেও পরিস্থিতির চাপে পড়ে নির্বাচন করছেন।

এই তলবি সভার আহ্বান ও নির্বাচন সাবের সদস্যদের মধ্যে জোয়ার সৃষ্টি করেছে। সেটা সাবের ভবিষ্যতের জন্য খুবই পজিটিভ। এই উপলক্ষ্যে অনেকেই সদস্য হয়েছেন, আমিও তাদের মধ্যে একজন। আসলে এতদিন আমারা যারা দেশের বা ঢাকার বাইরে থাকি তাদের জন্য সাব ছিল বছরে একটি পিকনিক, ৮ মার্চ, ইদানিং পিঠা উৎসব, কারো কারো জন্য রুশ দূতাবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবার সুযোগ ইত্যাদি। তাই ঢাকার বাইরের কেউ সাবের সদস্য হবার বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনি। এবারের এই তৎপরতা সে অর্থে শাপে বর হয়েছে। এছাড়া যারা বিদেশে আছেন তাদের মধ্যেও সাবের গুরুত্ব বেড়েছে। বলতে দ্বিধা নেই বিগত ইসির সময়ই সাব বাংলাদেশের গণ্ডী পেরিয়ে বাইরে গিয়েছে। সাবের ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সোভিয়েত ভিপুস্কনিকরা যোগ দিয়েছেন। করোনা কালে জুমের ব্যবহার শুরু হলে একাধিক অনলাইন সেমিনার হয়েছে। তাই নির্বাচনী উত্তেজনায় ইসির শুধু ভুল ধরলে সেটা হবে একচোখা বিচার। তাদের সাফল্যগুলোও ছিল চোখ ধাঁধানো। তবে এই উত্তেজনা, এই সম্পৃক্ততা এ সবই পজিটিভ হবে যদি নির্বাচন শেষে সবাই জনগণের রায় মাথা পেতে নিতে পারি, যেই নির্বাচিত হোক না কেন তাকে অমুকের লোক না বলে আমাদের লোক বলতে পারি।

আমার বিশ্বাস আমরা প্রায় প্রতিটি লোক নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নিজের মেধা ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে। সাবের সভাপতি বলে তাকসিন খান ওয়াসার প্রধান নন বা সাবের সাধারণ সম্পাদক বলে জয়নাল আবেদীন মৃত্তিকা বিজ্ঞানের অফিসের বড় বস নন। সবাই যার যার জায়গায় এসেছেন নিজ নিজ মেধা দিয়ে। সাবে নির্বাচিত হোক বা সাবের ইসিতে না থাক এটা তাদের চাকরির ক্ষেত্রে বা সামাজিক জীবনে এতটুকু প্রভাব ফেলবে না। সাব একটা ভালোবাসার, ভালো লাগার জায়গা যেখানে আমরা ছাত্রজীবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে পারি আর সাব থেকে বেরুলেই ঢুকে যাই নিজেদের কাজকর্মের অনেক বৃহৎ জগতে। তাই সাবে কাউকে নির্বাচিত করে বা না করে আমরা কারো এতটুকু ক্ষতি বা লাভ করতে পারব না। আর কেউ যদি সত্যিকারেই সাবকে ভালবাসে সে কখনোই পদের জন্য বসে থেকে সাবের সেবা করা বন্ধ করবে না। আমাদের অনেক ভিপুস্কনিকরা সাবের বাইরে থেকেই সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, নির্বাচিত না হলেও দেবেন। এখানেই সাব। যারা নিজেদের কোন্দল সাবে এনে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন তারা নিজেরা কতটুকু লাভবান হবেন জানি না, তবে সাবের মধ্যে যে সন্দেহের, অবিশ্বাসের বীজ রোপণ করেছেন সেটা সত্য। এখানে আমাদের সবারই দায় আছে। সাবের ইসি বা সভাপতি যদি সময় মত সঠিক পদক্ষেপ নিতেন তাহলে ঘটনা এতদুর গড়াত না, আবার যারা নিজেদের ঈর্ষা বলেন, ব্যক্তিগত হিসাব বলেন - সেটা সামনে এনে কাউকে একহাত দেখাতে চেয়েছিলেন তারাই বা কি পেলেন। সবাই যে যায় জায়গায় বহাল তবিয়তে আছে, থাকবে। মাঝখানে বিভিন্ন লোকজন এখানে লেখালেখির মাধ্যমে সবার সামনে নিজেদের মুখোশ খুলে ফেলেছেন। মুখে যতই গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র, সাব, সোভিয়েত এসব বলি না কেন, ভালো স্লোগান দিয়ে খারাপ ইন্টেনশন ঢেকে রাখা যায় না। নির্বাচনের ডামাডোলে আমরা ভুলে গেছি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভুলে গেছি যে নির্বাচন এটা শুধুই খেলা। ভুলে গেছি ২৯ জুন সকালে সূর্য উঠবে, আজকের যে প্রতিপক্ষ তার সাথে দেখা হবে, কথা হবে, সবাইকে নিয়েই আবার আমাদের একসাথে পথ চলতে হবে, লড়াই করতে হবে। সবাই নির্বাচনের যে ইশতেহার প্রকাশ করেছেন সেটা বাস্তবায়নের জন্যও সবাইকে হাতে হাত মিলিয়েই কাজ করতে হবে।

সাবের সার্বিক পরিবেশ আমার রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা বিশ্বের যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয় যখন জেলেনস্কির উচ্চাভিলাষ কাজে লাগিয়ে তারা ইউক্রেনকে শ্মশানে পরিণত করে। যদি নির্বাচনের পরে সব প্রার্থী নির্বাচন কালীন ভেদাভেদ ভুলে বিজয়ের আনন্দ ভাগ করে নিতে না পারেন তবে সাবের অবস্থাও তেমন হতেই পারে। তখন ভিপুস্কনিক হওয়া নিয়ে গর্ব করার কিছুই থাকবে না, থাকবে অতীত স্মৃতি – ঠিক যেমন আজ আছে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্মৃতি। আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। যেই জিতুক তাকে নিজের করে নিন। সাব দীর্ঘজীবী হোক!

দুবনা, ২৭ জুন ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

পরিমল

নেতা

শুভ নববর্ষ ১৪৩১