আজাইরা প্যাচাল
জীবনে কখন যে কি ঘটে, অনেক সময় তা গল্পের মতোই মনে হয়।
একটা গল্প শুনেছিলাম অনেকদিন আগে, জানি না সত্য কিনা, তবে আমাদের নিজেদের সাথেও কখনো সখনো এসব ঘটে।
এক বয়স্ক প্রফেসর থাকেন হোস্টেলে। পাশের রুমেই থাকে এক ছাত্র। সাধারণত যেটা হয়, ছাত্রটা অনেক রাতে ঘরে ফিরে আর জুতো খুলে ছুড়ে মারে দেয়ালে। প্রথম দিকে একটু রাগলেও প্রফেসর সেটা মানিয়ে নিয়েছেন। এখন উনি অপেক্ষা করেন কখন ছাত্রটা জুতা খুলে দেয়ালে ছুঁড়বে, তার পরেই যান ঘুমুতে। একদিন রাতে ওই ছেলে ঘরে ফিরলো, কিন্তু জুতা ছোড়ার কোনো কোনো লক্ষণ নেই। অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেললেন প্রফেসর, তারপর নিজেই জুতা দিয়ে দেয়াল চাপড়াতে শুরু করলেন, "শুনছিস, কখন তুই জুতা খুলে দেয়ালে ছুড়বি, আমি যে ঘুমুতে পারছি না।"
ছেলেটা একটু মাফ চেয়ে বললো, "আপনাকে আর ডিস্টার্ব করবো না, আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।"
কয়েকদিন পরে তাদের দুজনার দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটু আলাপ জমাবার জন্য ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো, "প্রফেসর, ঘুমানোর সময় আপনি দাঁড়িটা লেপের নীচে রাখেন, নাকি উপরে রাখেন?"
"তাতো খেয়াল করিনি।"
রাতে আর প্রফেসরের ঘুম আসছে না, দাঁড়ি লেপের উপরে রাখলে অস্বস্তি লাগছে, লেপের নীচে রাখলেও। আসলে অনেক প্রশ্ন আছে, যা নিয়ে মাথা না ঘামানোই ভালো।
কথাটা বললাম, কেননা এক রাতে আমি হাত নিয়ে প্রচন্ড বিপদে পড়ে গেলাম। হাতদুটো কানের উপরে রাখলেও অস্বস্তি লাগছে, আবার নীচে রাখলেও। ঘুম হারাম হয়ে গেলো আরো কি?
আরেকবার বাসায় ফিরে দেখি মহা ঝামেলা। তখন আমরা সবাই দুবনা থাকলাম, সাথে থাকতো শ্বাশুড়ী। কাজের শেষে বাসায় গিয়ে শুনি ওনার লাগানো দাঁত গুলো উনি গিলে ফেলেছেন। মেয়েকে বলছে ডাক্তার ডাকতে, সে কিছুতেই ডাকবে না। তখন বাসায় ফোন ছিল না, না ল্যান্ড ফোন, না মোবাইল। আমি শুনে পাশের বাসায় গেলাম পলিক্লিণিকে ফোন করতে। সব শুনে ওখান থেকে বললো, চিন্তার কারণ নেই, স্বাভাবিক পথেই বেরিয়ে যাবে। বাসায় ফিরে বললাম, আরো বললাম, যেন মুখের ভেতর আরেকবার খুঁজে দেখে দাঁতগুলো আছেন নাকি সত্যি গিলে ফেলেছে।
"ওমা, দাঁতগুলো তো জায়গা মতোই আছে।" একটু অপ্রস্তুতু হয়ে বললো শ্বাশুড়ী। তারপর আমাদের যে কি হাসাহাসি।
গত বছর বাংলাদেশ থেকে সাংস্কৃতিক দল এসেছিলো রাশিয়ায়। দুটো আমন্ত্রণপত্র দেয়া হলো আমাকে। যেহেতু বাসায় কেউ যেতে চাইলো না, গেলাম একাই। গিয়ে দেখি মুকুল ভাই দাঁড়িয়ে, আমন্ত্রণপত্র নেই। আমি তো মহা খুশি, বললাম, ভাবার কারণ নেই, আমার কাছে দুটো আছে।
"চলো, ঢোকা যাক।" বললো মুকুল ভাই।
পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমন্ত্রণপত্রগুলো নেই। মহা বিপদ। ফোন করলাম বাসায়। ওরাও খুঁজে পেলো না। কল্লোলের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে, কিছু একটা গতি করে দেবে নিশ্চয়ই। অপেক্ষা করছি করছি, আর মুকুল ভাই পাশে দাঁড়িয়ে বলছে,
"তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না। দেখো, আবারো দেখো।"
"দেখবো কোথায়, আমার তো আর পকেট নেই।"
হঠাৎ করেই কি একটা করতে গিয়ে দেখি আমার জ্যাকেটে আরো পকেট আছে, আর আমন্ত্রণপত্রগুলো ওখানে।
ও হ্যা, হাতের প্রসঙ্গে। হাত নিয়ে এখনো ঝামেলায় পড়তে হয়। ইদানিং একটু ছবি তুলছি, মানে মানুষের ছবি, পোর্ট্রেট। সব ঠিক, তবে প্রায় সব মডেলই হাত নিয়ে বিপদে পড়ে, জানেনা কোথায় ঠিক কিভাবে রাখলে ভালো হবে। যার ফলে দেখা যায় সব ঠিক আছে, অথচ আঙ্গুলগুলো বাঁকা, অথবা হাতে ভঙ্গীটা আর্টিফিসিয়াল। ফলে পুরো ফটোসেশনটাই মাটি।
এতো কথা বললাম আসলে মা দুর্গার ছবির পোস্টগুলো দেখে। দু হাত ম্যানেজ করতেই গলফঘর্ম, দশ হাতের ছবি তুলতে হলে সারাজীবনেও ফটোসেশন শেষ হতো বলে মনে হয় না।
দুবনা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬
একটা গল্প শুনেছিলাম অনেকদিন আগে, জানি না সত্য কিনা, তবে আমাদের নিজেদের সাথেও কখনো সখনো এসব ঘটে।
এক বয়স্ক প্রফেসর থাকেন হোস্টেলে। পাশের রুমেই থাকে এক ছাত্র। সাধারণত যেটা হয়, ছাত্রটা অনেক রাতে ঘরে ফিরে আর জুতো খুলে ছুড়ে মারে দেয়ালে। প্রথম দিকে একটু রাগলেও প্রফেসর সেটা মানিয়ে নিয়েছেন। এখন উনি অপেক্ষা করেন কখন ছাত্রটা জুতা খুলে দেয়ালে ছুঁড়বে, তার পরেই যান ঘুমুতে। একদিন রাতে ওই ছেলে ঘরে ফিরলো, কিন্তু জুতা ছোড়ার কোনো কোনো লক্ষণ নেই। অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেললেন প্রফেসর, তারপর নিজেই জুতা দিয়ে দেয়াল চাপড়াতে শুরু করলেন, "শুনছিস, কখন তুই জুতা খুলে দেয়ালে ছুড়বি, আমি যে ঘুমুতে পারছি না।"
ছেলেটা একটু মাফ চেয়ে বললো, "আপনাকে আর ডিস্টার্ব করবো না, আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।"
কয়েকদিন পরে তাদের দুজনার দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটু আলাপ জমাবার জন্য ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো, "প্রফেসর, ঘুমানোর সময় আপনি দাঁড়িটা লেপের নীচে রাখেন, নাকি উপরে রাখেন?"
"তাতো খেয়াল করিনি।"
রাতে আর প্রফেসরের ঘুম আসছে না, দাঁড়ি লেপের উপরে রাখলে অস্বস্তি লাগছে, লেপের নীচে রাখলেও। আসলে অনেক প্রশ্ন আছে, যা নিয়ে মাথা না ঘামানোই ভালো।
কথাটা বললাম, কেননা এক রাতে আমি হাত নিয়ে প্রচন্ড বিপদে পড়ে গেলাম। হাতদুটো কানের উপরে রাখলেও অস্বস্তি লাগছে, আবার নীচে রাখলেও। ঘুম হারাম হয়ে গেলো আরো কি?
আরেকবার বাসায় ফিরে দেখি মহা ঝামেলা। তখন আমরা সবাই দুবনা থাকলাম, সাথে থাকতো শ্বাশুড়ী। কাজের শেষে বাসায় গিয়ে শুনি ওনার লাগানো দাঁত গুলো উনি গিলে ফেলেছেন। মেয়েকে বলছে ডাক্তার ডাকতে, সে কিছুতেই ডাকবে না। তখন বাসায় ফোন ছিল না, না ল্যান্ড ফোন, না মোবাইল। আমি শুনে পাশের বাসায় গেলাম পলিক্লিণিকে ফোন করতে। সব শুনে ওখান থেকে বললো, চিন্তার কারণ নেই, স্বাভাবিক পথেই বেরিয়ে যাবে। বাসায় ফিরে বললাম, আরো বললাম, যেন মুখের ভেতর আরেকবার খুঁজে দেখে দাঁতগুলো আছেন নাকি সত্যি গিলে ফেলেছে।
"ওমা, দাঁতগুলো তো জায়গা মতোই আছে।" একটু অপ্রস্তুতু হয়ে বললো শ্বাশুড়ী। তারপর আমাদের যে কি হাসাহাসি।
গত বছর বাংলাদেশ থেকে সাংস্কৃতিক দল এসেছিলো রাশিয়ায়। দুটো আমন্ত্রণপত্র দেয়া হলো আমাকে। যেহেতু বাসায় কেউ যেতে চাইলো না, গেলাম একাই। গিয়ে দেখি মুকুল ভাই দাঁড়িয়ে, আমন্ত্রণপত্র নেই। আমি তো মহা খুশি, বললাম, ভাবার কারণ নেই, আমার কাছে দুটো আছে।
"চলো, ঢোকা যাক।" বললো মুকুল ভাই।
পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমন্ত্রণপত্রগুলো নেই। মহা বিপদ। ফোন করলাম বাসায়। ওরাও খুঁজে পেলো না। কল্লোলের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে, কিছু একটা গতি করে দেবে নিশ্চয়ই। অপেক্ষা করছি করছি, আর মুকুল ভাই পাশে দাঁড়িয়ে বলছে,
"তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না। দেখো, আবারো দেখো।"
"দেখবো কোথায়, আমার তো আর পকেট নেই।"
হঠাৎ করেই কি একটা করতে গিয়ে দেখি আমার জ্যাকেটে আরো পকেট আছে, আর আমন্ত্রণপত্রগুলো ওখানে।
ও হ্যা, হাতের প্রসঙ্গে। হাত নিয়ে এখনো ঝামেলায় পড়তে হয়। ইদানিং একটু ছবি তুলছি, মানে মানুষের ছবি, পোর্ট্রেট। সব ঠিক, তবে প্রায় সব মডেলই হাত নিয়ে বিপদে পড়ে, জানেনা কোথায় ঠিক কিভাবে রাখলে ভালো হবে। যার ফলে দেখা যায় সব ঠিক আছে, অথচ আঙ্গুলগুলো বাঁকা, অথবা হাতে ভঙ্গীটা আর্টিফিসিয়াল। ফলে পুরো ফটোসেশনটাই মাটি।
এতো কথা বললাম আসলে মা দুর্গার ছবির পোস্টগুলো দেখে। দু হাত ম্যানেজ করতেই গলফঘর্ম, দশ হাতের ছবি তুলতে হলে সারাজীবনেও ফটোসেশন শেষ হতো বলে মনে হয় না।
দুবনা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬
Comments
Post a Comment