বিশ্বাস

লিপির একটা লেখা নিয়ে ফেসবুকের চায়ের টেবিলে ঝড় উঠেছে, ঝড় তো নয়, একেবারে সুনামী। লেখাটি যেহেতু পড়া হয় নি, তাই ও নিয়ে কোন মন্তব্য করতে পারছি না। তবে লিপিকে অনেক দিন থেকে জানি বলে এটুকু বলতে পারি, আর যাই হোক, ওখানে কোন অশালীন ভাষা ছিল না, শুধু মাত্র নিজের কথাটা যুক্তি দিয়ে বোঝানর চেষ্টা ছিল, অথবা কোন বিষয়কে আরেকটু গভীরভাবে দেখার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু পাল্টা যুক্তি দাড় করানো হয়েছিল।
ছোটবেলায় বড়দের প্রায়ই বলতে শুনেছি “বিশ্বাসে মেলায় হরি, তর্কে বহুদুর।“ বড় হয়ে যখন সোভিয়েত দেশে আসি পড়াশুনা করতে, শুনেছি নতুন বানী “বিতর্কের মধ্য থেকেই সত্যের জন্ম।“ ব্যক্তিগত জীবনে আমরা প্রায় সকলেই দ্বিতীয় পথের পথিক হলেও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনে অধিকাংশই প্রথম দলের লোক। বিশ্বাস হচ্ছে না? দোকানে কিছু কিনতে গেলে বিক্রেতা যত ভালই বলুক, আমরা একটু সন্দেহ প্রকাশ করি, ডাক্তারের কাছে যাবো – লোকে যাই বলুক, ভাবি ঠিক কোন ডাক্তারের কাছে যাবো। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই ভালোমন্দের বিচার করেই আমরা সামনে যাই, প্রয়োজনে কারো কাছে উপদেশ নেই। বিতর্ক মানেই তো ঝগড়া নয়, এটা হচ্ছে  সম্ভাব্য বিভিন্ন রকম সামধান থেকে সঠিকটা বেঁছে নেবার একটা পদ্ধতি। যাকে আরও সোজা করে বলা যায় “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাইও না।“  তাই লিপি বা কেউ যদি একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কোন সমস্যা যাচাই করে দেখতে চায়, তাতে দোষের কি হল? এটা বরং সঠিক সমাধানে আসতে সহায়ক হবে।        

তবে আমাদের দেশ মনে হয় আজকাল অন্ধ বিশ্বাসের কাঁধে ভর করেই চলছে, শুধু আমাদের দেশ কেন – সারা বিশ্বই।  আমরা আজ সব কিছুই বিশ্বাস করি, না করলেও বিশ্বাস করছি বলে ভান করি। কিন্তু বিশ্বাস কি শুধু একটাই? আপনার যেমন কোন কিছু বিশ্বাস করার অধিকার আছে অন্যের ঠিক তেমনি ভাবে অন্য কিছুতে বিশ্বাস করার অধিকার আছে। অন্যের বিশ্বাসকে আপনি যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করুন। আপনার বিশ্বাস যদি সত্যের উপর ভিত্তি করে হয়, আপনার যুক্তিই আপনাকে জিতিয়ে আনবে। আর যদি আপনি এর পরিবর্তে অশ্লীল গালিগালাজ করেন, ফাঁসির দাবি তোলেন, তার মানে আপনার বিশ্বাসের ভিত নড়বরে। তাই আগে যুক্তি দিয়ে নিজের বিশ্বাসের ভিত শক্ত করুন।

উইমেন চ্যাপ্টার আমি রেগুলার পড়ি না, সব লেখার সাথে যে একমত তাও নই। তবে আমাদের যে সব জায়গায় একমত হতেই হবে এটা কে বললো। জীবনের সৌন্দর্য তার বৈচিত্রে। এর বিরুদ্ধে লেগে আর যাই হোক, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন না।

নিজেকে প্রশ্ন করুন, প্রশ্ন করতে শিখুন – দেখবেন জীবনটা কত সুন্দর, তার বৈচিত্র কত সীমাহীন।


দুবনা, ১০ জুলাই ২০১৭    

      


  

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি