মাছবৃষ্টি
সকালে দিদি ফোন করলো। আজকাল ফোনে প্রায়ই কথা হয়। শত হলেও ডিজিটাল যুগ, কথা
না বলাই মহাপাপ। কথা শুরু হয় শরীর কেমন, খেলাম কিনা এসব দিয়ে আর যখন শেষ হয় তখন
চলে যাই শৈশবের তরায়, বাবা মা, দাদা বৌদি এদের কথায়। কথা হয় বন্ধুদের নিয়ে,
গ্রামের লোকদের নিয়ে। আমরা অনেকেই যেমন সোভিয়েত দেশের সেই স্মৃতিতে আঁটকে গেছি,
দিদির সাথে কথা বলতে বলতে আমি যেন সেই হারানো দিনের তরায় হারিয়ে যাই।
দেশে নাকি মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের যুগে সাধারণত আষাঢ় মাসের প্রথমে
এমন বাদল ঝরতো,
নাম ছিল সাত কন্যা। এখন অবশ্য যুগ বদলে গেছে, বাংলাদেশ বিমানের
মতই ঝড়বৃষ্টি, শীত গ্রীষ্ম সবই আসে নিজেদের খেয়ালখুশী মতো। জবাবদিহিতার বালাই
যেখানে নেই – সেখানে ওদের আর দোষ দিয়ে কি হবে।
এখন শ্রাবন মাস। নদী টইটুম্বুর। তার উপর বিরামহীন বৃষ্টি। ইস বৃষ্টির মত
সরকার যদি এভাবে সবাইকে কারেন্ট, গ্যাস আর জল সরবরাহ করতে পারতো?
কলতলায় জল। অনেক দিন পর। এখন তো খাল বিল সব ভরে ফেলেছে। আগে খালে প্রথম জল
আসতো চক দিয়ে। নদীর ওখানে খালটা উঁচু ছিল, তাই উল্টাস্রোত। তবে নদী আর খালের মিলন
হলে স্রোত যেতো ঘুরে। এখন অবশ্য খালে আর নেই – ভরাট করেছে সব। তাই বাড়ির পাশের ডোবায়
জল আসে আকাশ পথে, মেঘের কাঁধে ভর করে।
আজকের তাজা খবর – উঠানে নাকি মাছও
মেরেছে গামছা দিয়ে পাড়ার ছেলেরা – পুটি মাছ। দিদি তো ভেবেই পায় না মাছ এল
কোত্থেকে, কিভাবে।
-
আচ্ছা ভাই, মাছ কোত্থেকে এল বৃষ্টির জলে।
-
কোত্থেকে আর আসবে? ডিজিটাল দেশ। সরকার নিশ্চয়ই মানুষের
দুঃখ লাঘব করার জন্য এই গরমে জলের সাথে সাথে তোদের জন্য মাছও পাঠিয়ে দিচ্ছে।
বৃষ্টির জলে ভিজে স্নান করবি আর উঠান থেকে মাছ ধরে খাবি। দেখ কবে আবার নৌকা পাঠিয়ে
দেয়। ভোটের তো আর বেশি দেরি নেই।
-
আজকাল ভোট তো ভুতের মত – তাই বৃষ্টির সাথে নৌকা এলেও
অবাক হবার কিছু থাকবে না।
দিদির সাথে কথা শেষ করে মনে হল
মাছের কথা। কে জানে, মাছেরও হয়তো পাখা গজিয়েছে কি না! নইলে ওরাই বা আসবে কোত্থেকে। অথবা জেনেটিক্যালি মডিফাইড মাছ।
ডিম জলীয় বাষ্পের সাথে উড়ে বেরায় মেঘের মাঝে, আর বৃষ্টির সাথে মাছ হয়ে নেমে আসে
ধরাধামে মহাভারতের দেবতাদের মতো! এই সেরেছে, এটা শুনে আবার কেউ মাছকে পবিত্র ঘোষণা
না দিলেই হয় – তাহলে বাঙ্গালীত্ব যেটুকু আছে সেটাও উবে যাবে কর্পূরের মত।
দুবনা, ২৬ জুলাই ২০১৭
Comments
Post a Comment