ভয়


গিওর্গি নিকলায়েভিচ আফানাসেভ নামে আমার এক কলিগ ছিলেন দুবনায়। ১৯৯৪ সালে আমি যখন কাজে যোগ দিই তখন আমার বউ বাচ্চারা মস্কো থাকতো। আফানাসেভের ফ্যামিলিও মস্কো থাকতো। তাই আমরা প্রতি শুক্রবার এক সাথে মস্কো যেতাম। আমরা দুজনেই তখন কাজ করতাম ইলেক্ট্রোডাইনামিক্সের উপর। প্রায় আড়াই ঘণ্টার ট্রেন জার্নির সময় আমরা এ নিয়ে কথা বলতাম। এছাড়া ভদ্রলোক ছিলেন খুব রসিক মানুষ। তাই মাঝে মধ্যে কৌতুক করতেও ভুলতেন না।
- আজ একটা ভালো গল্প বলব তোমাকে।
- বলুন।
যখনকার কথা বলছি ওনার বয়েস তখন ষাটের কাছাকাছি। তাই উনি আমাকে তুমি বললেও আমি তাকে আপনি করেই বলতাম, যদিও রিসার্চ ইন্সটিটিউটগুলোয় তুমি বলে ডাকলেও কেউ মাইন্ড করে না।             
- এক রুশ মেয়ে এক আফ্রিকান ছেলের প্রেমে পড়েছে। বিয়ে প্রায় হবে হবে, এমন সময় হল ছাড়াছাড়ি। ঐ মেয়ে তখন এক রুশ ছেলের প্রেমে পড়ল। বিয়েও হল তাদের। বিয়ের কয়েক মাস পরে ঐ মেয়ের সন্তান হবে। মেয়ে তো পড়ল ভারী সমস্যায়। ঠিক জানে না কে সন্তানের বাবা, পুরনো প্রেমিক না নতুন বর। কিছুতেই ঠিক করতে পারছে না কী করবে, বরকে আগের প্রেমের কথা বলবে, নাকি চুপ করে থাকবে। কিন্তু সন্তান যদি কালো হয় তখন কী করা? অনেক ভেবে সে ঠিক করলো অভিনয় করবে। প্রসবের কয়েদিন আগে এক রাতে হঠাৎ  সে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। পাশে শোয়া বর তো অবাক!
- কী হল? কাঁদছ কেন?
- খুব বাজে এক স্বপ্ন দেখলাম। প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে। 
- কী এমন স্বপ্ন দেখলে যে কাঁদতে হবে এভাবে?
- দেখলাম আমাদের সন্তান হয়েছে সে কুচকুচে কালো আর তার ঘাড়ে দুটো মাথা!
- আরে বাদ দাও তো এসব। এরকম কি হয়?
- কি জানি? যদি হয়!
- দেখ তোমার এখন টেনশন করা একেবারেই নিষেধ। এসব মাথা থেকে দূর করে ঘুমিয়ে পড়।
কয়েকদিন পরে মেয়েটি এক বাচ্চার জন্ম দিল। ওর বর দেখা করতে গেল ম্যাটারনিটি সেন্টারে। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা সিস্টারকে জিজ্ঞেস করলো
- বাচ্চা সুস্থ আছে?
- হ্যাঁ। সব ঠিক আছে।
- বাচ্চার গায়ের রং কালো হয়েছে?
- হ্যাঁ। কুচকুচে কালো।
- বাচ্চার দুটো মাথা?
- না না, একটাই তো মাথা।
- থ্যাংকস গড। বাঁচা গেল।

আমিও আজকাল শরীর খারাপ হলে এরকম ভাবি। অনেকে ডাক্তার দেখাতে ভয় পায়। আমি বলি, অসুখ, এটা ডাক্তারদের সমস্যা। ওরাই ভাবুক। তাই কিছু হলেই চলে যাই পলিক্লিনিকে। তবে যেহেতু আমি অলস মানুষ সেহেতু সকালের শিফটে পারি না কারণ বাসা থেকে দেরি করে বেরোই, আর বিকালের শিফটে অফিসে কাজ করতে করতে ভুলে যাই যাওয়ার কথা। তাছাড়া এসব সমস্যা দেখা দেয় হয় উইকএন্ডে বা নয়তো রাতে  যখন এসব বন্ধ। তাছাড়া ভাবি এই বয়েসে ঘুম ভাংলে যদি হাত-পা বা লেজ ব্যথা না করে বুঝতে হবে মরেই গেছি। যাহোক, যেতে যত দেরি হয় আমি নিজের জন্য তত দামী দামী আর খারাপ খারাপ রোগ ভেবে রাখি। আর ডাক্তার যখন সব দেখে বলে ওসব কিছু না আমার খুশি আর দেখে কে? আর তখন মনে পরে আফানাসেভের বলা সেই গল্পটা। ট্রাই করে দেখতে পারেন। ভীষণ কাজে দেয়।          
দুবনা, ১৩ আগস্ট ২০১৮



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি