অসুখ
ছোটবেলায়
অসুস্থ হওয়ার মজাই ছিল আলাদা। কিছু হলেই রেবতী কাকা চলে আসতেন। গুরুতর কিছু হলে
আসতেন ভুপেশ কাকা মানিকগঞ্জ থেকে অথবা আমরা নিজেরাই চলে যেতাম তার শান্তি
ফার্মেসীতে। দুপুরে হলে উনি আমাদের বাসায় নিয়ে যেতেন, আদর যত্ন করে খাওয়াতেন। ফি
দিতে হত না। বাবা এদের মাসে শেষে সব টাকা দিয়ে দিতেন। এরা ছিলেন পারিবারিক
ডাক্তার। তখন ওষুধ বলতে ছিল তেতো কোন বড়ি আর ভালো করে খাবার-দাবার। আমার যেহেতু
রুচির সমস্যা, তাই দিতেন পেপ্টিক এসিড জাতীয় কোন সিরাপ। অর্থাৎ ঐ সময় অসুখ মানেই স্কুলে না যাওয়া (যা
আমি খুব অপছন্দ করতাম), বেশি করে খাওয়া (বিশেষ করে দুধ বা দুধের তৈরি খাবার যা
আমার কখনই সহ্য হয় না)। এখন অসুস্থ হওয়ার ঝামেলা অনেক। কষ্ট করে নিজেকেই নিজের
শরীরটা কাঁধে ফেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। যদিও জীবনের দুই তৃতীয়াংশ এখানেই কেটে
গেল তারপরেও ওদের ধারণা এই ঠাণ্ডার দেশে আমার ঠিক পোষাচ্ছে না। এখানে ডাক্তাররা
বেশির ভাগ মহিলা। হাজারটা প্রশ্ন করে যার সাথে অসুখের সম্পর্ক খুব একটা আছে বলে
মনে হয় না। এরপর ভাঙ্গা রেকর্ডের মত সিগারেট আর মদের অপকারীতার কথা বলে (যদিও এ
সমস্যা আমার নেই)। তারপর আসে খাবারের কথায়। ঝাল খাওয়া বারণ। আমি ৫-৬ টা ডিমের
মামলেটে সিকি থেকে অর্ধেক মরিচ ব্যবহার করি, এটাও নাকি ঝাল। সবশেষে এক গাদি ওষুধের
ফর্দ ধরিয়ে দেয়। ওষুধের দোকানের মহিলারা আমি পড়তে পারব কিনা ভেবে অনেকবার করে
ওষুধগুলো কেমনে খেতে হবে সেটা বুঝিয়ে দেয়। ঝামেলা হয় যদি কোন ওষুধ তিনবার খেতে হয়
আর সেটা খেতে হয় খাওয়ার আগে বা পরে। আমি প্রাতরাশটা ঘুমের মধ্যেই সেরে ফেলি। ওদের
কিছুতেই বোঝাতে পারি না যে ঘুমের মধ্যে ওষুধ খাওয়া একরকম অসম্ভব। ফলে দুটো ডোজ ঠিক
মত খেতে পারলেও তৃতীয়টা নিয়ে সমস্যা হয়। ওক্ষেত্রে আমি মাথা খাটিয়ে কাজ করি। যেটা খাবারের আধঘণ্টা আগে খেতে হবে সেটা খাওয়ার
আধঘণ্টা পরে যেটা খাওয়ার আধঘণ্টা পরে খেতে হবে সেটা খাই। তাহলে দ্বিতীয় ওষুধটা প্রথমটার
জন্য খাবার হয় আর প্রথমটা দ্বিতীয়তার জন্য। একেই বলে শুভঙ্করের ফাঁকি। সব কিছুরই
নিত্যতার সুত্র আছে। ছোটবেলায় ছিল কম ওষুধ আর বেশি খাবার, এখন ঠিক তার উল্টোটা।
ডাক্তাররা বোঝে বেতনের সিংহভাগ ওষুধের দোকানে গেলে খাবারের দোকানে কম তো যাবেই। তাছাড়া
আজকাল এত ওষুধ গিলতে হয় যে ওতেই পেট ভরে যায়।
দুবনা,
১৪ আগস্ট ২০১৮
Comments
Post a Comment