১৫ আগস্ট নিয়ে কিছু কথা


গতকাল ছিল বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস আর ভারতের স্বাধীনতা দিবস শোক দিবসের কথা গতকাল বলেছি আজ ভারতের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই ১৫  আগস্ট ভারতের জন্য আনন্দের দিন হলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা সেই আনন্দ অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছিল যদিও জিন্নাহ বিশ্বাস করতেন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলেই উপমহাদেশের হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটবে, ভারত ও পাকিস্তান ভ্রাতৃসুলভ দুই রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে একে অন্যের উন্নয়নে সহযোগিতা করবে, বাস্তবে সেটা ঘটেনি ফলে তিক্ততা বেড়েছে, বেড়েছে অবিশ্বাস হিন্দু-মুসলিম বিরোধ সাম্প্রদায়িকতায়ই শুধু সীমাবদ্ধ থাকেনি, সেটা দুই দেশের বিরোধের রূপ নিয়ে আন্তর্জাতিক অবয়ব পেয়েছে সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের দুই অংশের বিরোধে ভারত কোন না কোন ভাবে ভূমিকা রাখবে সেটা ছিল স্বাভাবিক তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ছিল অনন্য ভারত শুধু সরকারিভাবেই মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি, ভারতের জনগণ, বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্তলগ্ন প্রদেশগুলোর জনগণ, যাদের এক বিশাল অংশ বাঙ্গালি, তারা শত সমস্যার মধ্যেও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে অনেকের ধারণা বাংলাদেশে তাঁবেদার সরকার বসানোর জন্য ভারত এটা করেছে আমার সেটা মনে হয় না পরবর্তী ঘটনাও সেটা বলে না ভারত চেয়েছিল এখানে বন্ধু রাষ্ট্র, অনুগত নয়, বন্ধু, যাকে বিশ্বাস করা যায় অনুগত কারো অবাধ্য হতে বেশি সময় লাগে না কারণ মানুষ অনুগত হয় বাধ্য হয়ে বা স্বার্থের জন্য বন্ধুত্ব এসবের ঊর্ধ্বে বন্ধুকে বিশ্বাস করা যায় ভারতের দরকার সেই প্রতিবেশি যাকে বিশ্বাস করা যায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কথাটা সমান ভাবেই প্রযোজ্য তাই পঁচাত্তরের পট পরিবর্তন যে ভারতের জন্যেও কষ্টের সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না তাছাড়া সেই পরিবর্তনের পেছনে যে শক্তি ছিল তারা সবাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি তাই ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা শুধু বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণকেই নয়, মুক্তিযুদ্ধে সার্বিক সহযোগিতা দানকারী ভারতকেও চ্যালেঞ্জ করা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ ও ভারত ছিল বন্ধু রাষ্ট্র ১৫ আগস্ট এদের একজনের আনন্দের  আর অন্যজনের শোকের দিন- এটা নিশ্চয়ই কাকতালীয় নয় সুপরিকল্পিত
আজ সকালে এক বন্ধু লিখল “কাল ভারতের স্বাধীনতা দিবস ছিল আমরা ভারতবাসী তাই আমাদেরও কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলার স্বাধীনতা দিবস আসলে ১৪ আগস্ট এটা এখন আর কেউ মনে রাখে না“ একটু অবাক হলাম, কেননা ১৪ ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু পরে মনে হল, তাই তো – মুর্শিদাবাদ জেলা তো মুসলিম জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তান রাষ্ট্রে পড়েছিল, যদিও চার দিন পরে মানে ১৮ আগস্ট ভারত ভুক্ত হয়।   বাংলাদেশেও অনেকে ভাবে সে দেশের হিন্দুরা ভারতের সাফল্যে খুশি হয় পাকিস্তানেও তাই আর ভারতে ঠিক উল্টো ব্যাপারটা এই নয় যে সবাই সেভাবে ভাবে তবে এরকম একটা ট্রেন্ড আছে আসলে ভারত বিভাগ যতটা না ভৌগলিক ছিল তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক তাই কে কোথায় বাস করছে সেটা নয়, কে কোন ধর্মের সেটাই হয়েছে ভারতীয় বা পাকিস্তানি আইডেন্টিটি অন্তত স্বাধীনতা উত্তরকালে একাত্তর বছর দীর্ঘ সময় সেই আবেগ কেটে যাওয়ার কিন্তু ভোটের রাজনীতি সেটা করতে দিল কোথায় তাই এই সমস্ত অনুভূতিকে সুযোগ পেলেই জাগিয়ে তোলে তারা আর এ কারণেই মাঝেমাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন মনে জাগে জানতে ইচ্ছে করে দেশ ভাগ বা বর্তমানের বৈরী মনোভাব, সেটা কী অবশ্যম্ভাবী? ইতিহাস কি বলে?             
এটা জানার ইচ্ছে নিয়ে “সাম্প্রদায়িকতা ও ভারত-ইতিহাস রচনা” বইটা পড়লাম রমিলা থাপার, হরবংশ মুখিয়া আর বিপন চন্দ্রের তিনটে রচনা স্থান পেয়েছে বইটাতে বইটা পড়ে ভারতবর্ষের ইতিহাসকে যেন নতুন করে দেখলাম এই যে আমরা মুসলিম শাসন বলি, সেটা কতদুর ঠিক? হ্যা, ১২০০ সাল থেকে শুরু করে ইংরেজরা ভারত দখলের আগে পর্যন্ত মুসলিম শাসকরাই মূলত ভারত শাসন করেছে – কিন্তু ইতিহাস কি শুধু এই রাজাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? ঐ বইটা ছিল ইতিহাস রচনা নিয়ে, সেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে ইংরেজরা ভারতের ইতিহাস রচনা করেছে, কিভাবে প্রাক-ইংরেজ যুগের শাসনকে মুসলিম শাসন বলে আখ্যায়িত করে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে অতি গোপনে সাম্প্রদায়িকতা ঢোকানো হয়েছে, যদিও তুর্কির সুলতান বা মুঘল সম্রাটদের যুগে দেশীয় হিন্দু রাজারাই জনগণকে শাসন করেছে তখন হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে উঁচুতলার লোকেরা সাধারণ প্রজাদের ঘৃণা করেছে, আবার উঁচুতলার মানুষ যেমন নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব করেছে,  গ্রামের দরিদ্র জনতাও ধর্মের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ বজায় রেখেছে মুসলিম শাসকরা স্থানীয় রাজা বা জনগনকে নিজেদের নিজেদের ধর্মীয় আর সামাজিক আচারবিধি মেনে চলতে দিয়েছে বলেই পারতপক্ষে এদের বিরুদ্ধে কোন গণবিক্ষোভ দেখা দেয় নি যদি মুসলিম শাসকগণ রাজ্য পরিচালনায় হিন্দু এলিটদের সাহায্য না নিত, যদি হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা ধর্মীয় ও সামাজিক কাঠামো বদলে দেবার চেষ্টা করতো, তাহলে ১৯৪৭ সালে যখন দেশ স্বাধীন হোল, তখন কিভাবে দেশের ৭০% মানুষ হিন্দু রইলো, কেন মুসলমানরা ভারতবর্ষে সংখ্যালঘু হল আর কেনই বা দেশ ভাগ হল? প্রশ্নটা এখানেই মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগেও যখন ভারতবর্ষে ৭০% মানুষ হিন্দু রইলো, যখন বর্তমান পাকিস্তান আর বাংলাদেশে ১৯৫১ সালে ১৩% হিন্দু ছিল যার ১.৬% পাকিস্তানে আর ২২% বাংলাদেশে,  সেখানে আধুনিক এক গণতান্ত্রিক দেশে কিভাবে হিন্দুর সংখ্যা কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় চলে যাচ্ছে? ধরে নিলাম দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে তৈরি পাকিস্তান ছিল ভারতীয় মুসলিমদের জন্য আত্মসঙ্কটের সমাধান তাই যদি হয়, তাহলে কেন আজও ভারতে মুসলমানের সংখ্যা পাকিস্তান বা বাংলাদেশের চেয়ে বেশী? কেন তারা ভারত ত্যাগ করে তাদের স্বপ্নের দেশ পাকিস্তানে যাচ্ছে না? তার মানে এই নয় যে ভারতে তারা ভালো আছে বা ভারতে তারা সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাচ্ছে প্রশ্ন করার একটাই কারণ – তাহলে কী পাকিস্তানের ধারনাটাই ভুল ছিল? দেশভাগটাই ভুল ছিল?
দেশভাগের পর একাত্তর বছর পার হয়ে গেল যে সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য দেশভাগ তার একটাও তো সমাধান হল না, বরং নতুন নতুন সমস্যা জেঁকে বসলো আমাদের কাঁধে হ্যাঁ, এটা ঠিক এর ফলে তিন তিনটা দেশ হয়েছে, হয়েছে ততগুলোই এলিট শ্রেনী কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কি পরিবর্তন হয়েছে একটুও যে মানুষের কথা বলে এই ভাঙ্গনের রাজনীতি – তারা আজ কোথায়? তাই আজ সময় এসেছে নতুন করে আত্মজিজ্ঞাসার, ভেবে দেখার কেন আজও সারা উপমহাদেশ জুড়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তার অর্থ এই না আমাদের আবার একটা দেশে পরিণত হতে হবে বিগত ৭১ বছরে ভিন্ন ভিন্ন পথে এগিয়েছে দেশগুলো সামাজিক জীবনে আজ মিলের চেয়ে অমিলটাই বেশী কিন্তু আমরা যদি নিরপেক্ষ ভাবে আত্মবিশ্লেষন করতে পারি, বুঝতে পারি দেশভাগ ঐ পরিস্থিতির একমাত্র তো নয়ই এমন কি সর্বশ্রেষ্ঠ সমাধানও ছিল না তাহলে হয়তো জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে, এক দেশ না হলেও বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী হতে পারবে উপমহাদেশের দেশগুলো আর সেটা শুধু অর্থনৈতিকই নয়, তিন দেশের সামাজিক জীবনেও বিশাল ছাপ ফেলবে সমাজে আজ যে উগ্র মতবাদ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সেটাকে দমানোর জন্য হলেও এই বিশ্লেষণটা অতি জরুরী তাছাড়া এই বিশ্লেষণ, এই আত্মজিজ্ঞাসা অন্যদেরও সাহায্য করতে পারে ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদদের জন্যে হতে পারে পথ পরিদর্শক

ইদানিং কালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে  অনেকেই বলে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ক্যাটাস্ট্রফি সবচেয়ে বড় না হলেও অন্যতম প্রধান, তাতে সন্দেহ নেই আমার মনে হয় ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব, ইউরোপে নাজীদের উত্থান, ভারত বিভাগ এসব একই লাইনে পড়ে বিভিন্ন সময়ে বিশাল বিশাল সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও ব্রিটিশ আমলেই বার্মা থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত পুরো ভূখণ্ড একটা দেশের রূপ পেয়েছে যার ছিল অভিন্ন মুদ্রা, অভিন্ন আইন, অভিন্ন অর্থনীতি আর যোগাযোগ ব্যবস্থা মানে রেলপথ চাকরীর সূত্রে মানুষ দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গেছে আর এভাবেই স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে সাথে গড়ে উঠেছে ভারতীয় সংস্কৃতি শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে পুঁজিবাদের অভ্যুত্থান ঘটেছিল সুদুর ইউরোপে তার হাত ধরেই ভারতবর্ষে জন্ম নিয়েছিল নতুন জাতি - ভারতীয় জাতি আমার মনে হয় এটা ছিল ইংরেজদের অন্যতম প্রধান অবদান, অন্যতম প্রধান সৃষ্টি আচ্ছা তারা কি কখনও ভাবে কিভাবে তারা নিজেদের তৈরি এই জাতিসত্তাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করল?                                
  
কার একটা লেখায় পড়েছিলাম, পাকিস্তানের পক্ষে ভারতের সাথে বন্ধুত্ব করা সম্ভব নয়, কেননা পাকিস্তানের অস্তিত্বের মূলেই রয়েছে ভারতবিরোধীতা বাংলায় ইসলাম এসেছে স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে আপোষ করেই এমন কি ভারতে যে মুসলিম শাসন, সেখানেও কিন্তু সুলতান বা সম্রাটগন স্থানীয় হিন্দু রাজা বা জমিদারদের সাথে শান্তি চুক্তির (নজরানার বিনিময়ে) মাধ্যমে তাদের দিয়েই দেশ চালিয়েছেন আর স্থানীয়দের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক জীবনে খুব বেশি হস্তক্ষেপ করেন নি, তা না হলে গণবিক্ষোভ নিঃসন্দেহে দেখা দিত, যেমন হয়েছে ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে ৭০% হিন্দু জনসংখ্যা সেই কথাই বলে ১৯৪৭ সালে বাংলার মুসলিম অভিজাতরাই পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ায় আর তাদের সহায়তায়ই পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয় ১৯৭১ দেশ স্বাধীন হলে আরব বিশ্বের (মুসলিম বিশ্বের) কাছে তারা আর পাক্কা মুসলিম বলে স্থান পায় না ফলে আবার শুরু হয় আইডেন্টিটির ক্রাইসিস তাছাড়া এটাও তো ঠিক, যে সাম্যের বাণী নিয়ে ইসলাম এসেছিল আরবে, ভারত বর্ষে সেই সাম্য আর বজায় ছিল না বহিরাগত মুসলমান যেমন স্থানীয়দের সমান মর্যাদা দিত না, কনভার্টেড হিন্দুরাও তেমনি তাদের সাথে করে বর্ণভেদ নিয়েই এসেছিল এছাড়াও দুশ বছর আগে যে রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল বাংলায়সেখানে ছিল হিন্দুদের ব্যাপক অগ্রাধিকার যার ফলে যেমন বাঙ্গালী পরিচয়ে বাঙ্গালী মুসলমান বাঙ্গালী হিন্দুদের কাছে হেরে যাচ্ছে, মুসলমান পরিচয়ে সে একই ভাবে হেরে যাচ্ছে আরব বা পাকিস্তানের মুসলমানের কাছে আর এজন্যই স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে চেষ্টা হয়েছে পার বাংলা থেকে আলাদা একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলার, বাংলা ভাষা সংস্কৃতিতে বেশি করে আরবী চেহারা দেবার এই চেষ্টা এখন চলছে মনে হয়না অদূর ভবিষ্যতে এর উত্তর আমরা পাব আর যতদিন না পাচ্ছি, রাজা হরিশ্চন্দ্রের মতই বাঙ্গালী মুসলমানকেও ঝুলে থাকতে হবে
তাহলে কি এখান থেকে বেরুনোর পথ নেই? আছে আর সে জন্যেই নতুন করে ইতিহাস বিশ্লেষণ করা দরকার আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষেরা ইন্দো-ইউরোপীয়ান সভ্যতার উত্তরাধিকারী, যেখানে প্রাচীন ভারতীয় আর পারসিক সভ্যতা ব্যাপক অবদান রেখেছে আমরা আরব সভ্যতার উত্তরাধিকারী নই তাই আমাদের সাবলীল বিকাশে বৃহত্তর ভারতীয় সভ্যতাই আমাদের পথ দেখাতে পারে যদি আলী আকবর খান, আমজাদ আলী খান থেকে শুরু করে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি জগতের বিশ্ববরেণ্য মানুষেরা ভারতীয় ফ্রেমের মধ্যে এত উপরে উঠতে পারেন, আমাদের কেন বড় হওয়ার জন্য আরবী ফ্রেম দরকার      
আমার প্রায়ই একটা প্রশ্ন মনে আসে ভারত বিভাগের একটা আর্গুমেন্ট ছিল হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ব্যাপক প্রাণক্ষয় কিন্তু পার্টিশনের সময় যে কয়েক মিলিয়ন মানুষ মারা গেল, কোটি কোটি মানুষ গৃহহারা হল, তার হিসেব কি এখানে আসা উচিত নয়? ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে নিহত তিন মিলিয়ন মানুষও তো এই হিসেবেই আসে এরপর ছোটোখাটো সাম্প্রদায়িক ও সেক্টেরিয়ান দাঙ্গা তো আছেই সেই সাথে উপমহাদেশের সব দেশেই সংখ্যালঘুদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা আর এসবের অর্থ দাঁড়াচ্ছে একটাই – ব্রিটিশ শাসন অবসানের ৭১ বছর পরেও আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি, বরং পিছিয়ে গেছি আর যে নেতারা আমাদের এই অবস্থায় এনেছে তারা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে
কী করতে পারি আমরা এ অবস্থায়? না, নতুন করে এক দেশ হওয়ার কোন সুযোগ বা প্রয়োজন কোনটাই নেই কিন্তু আমরা তো ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন স্টাইলে কিছু করতে পারি যখন এসব দেশের মানুষ বিনা বাধায় বিভিন্ন দেশে যেতে, এমন কি কাজও করতে পারবে তারা সত্যিকার অর্থে একে অন্যের বন্ধু হতে পারবে আর সেটা বোঝার জন্য জানা দরকার যে এক সময় আমরা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ভারতীয় উপমহাদেশের লোক ছিলাম, শত শত বছর আমরা পরস্পরের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করেছি একমাত্র সেটাই আমাদের উপমহাদেশ থেকে উগ্রবাদ নির্মূল করতে পারে আমাদের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সফল করতে পারে           

দুবনা, ১৬ আগস্ট ২০১৮ 



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি