বোকা কৃষক


কয়েকদিন আগে এক বন্ধুর সাথে গল্প করছিলাম চা খেতে খেতে।
একটা গল্প শুনবি? – ও জিজ্ঞেস করলো।
বল।

এক  ছিল কৃষক। তার ছিল এক গাভী। নাদুস নুদুস, কিন্তু পাঁজির পাঝাড়া। দুধ দেয়না এক ফোঁটা, পারলে গুঁতিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে আর কি! তাই কৃষক ভাবলো ওটাকে বিক্রি করা দরকার। ভাবা মাত্রই সে গরু নিয়ে রওনা হল হাটের পথে। যাচ্ছে আর ভাবছে কিভাবে সে গাভীর বর্ণনা দেবে মানুষের কাছে। হাটে পৌঁছতে পৌঁছতে তার বর্ণনা দাঁড়ালো এ রকম “এমন গাভী আর দ্বিতীয়টা হয় না। প্রতিদিন সে দুধের বন্যা বইয়ে দেয়। আর কি মিষ্টি সে দুধ! দুধ তো নয় যেন ক্ষীর। আর কি শান্ত আমার গাভী। ঘুম ভাঙলেই দাঁড়িয়ে থাকে গৃহিণীর জন্যে যাতে সে অনায়াসে দোয়াতে পারে। কোন দিন শিং নাড়ানো তো দূরের কথা লেজ দিয়ে মাছি পর্যন্ত মারে না।“ প্রথম লোককে এসব কথা বলতে বলতে কৃষক ভাবলো “আচ্ছা কী বোকাই না আমি। এত ভালো একটা গাভী, তাকে কিনা বিক্রি করতে চাইছি।“ সে তখন তার এই শান্ত গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
এটুকু বলেই বন্ধুর সে কি হাসি।  আমি জিজ্ঞেস করলাম
হাসছিস কেন?
হাসবো না মানে? এ কৃষক তো বোকারও অধম।
ইস, দেশের মানুষগুল যদি এরকম বোকা হত!
এ আবার কেমন কথা?
দেখ আমাদের দেশে, শুধু আমাদের দেশে কেন, সারা বিশ্বেই, মানুষ কোন না কোন আদর্শে, কোন না কোন নেতায় বিশ্বাস করে। সারা দিন মুখে ফেনা তুলে সেই সব আদর্শ বা নেতাদের গুণগানে। কিন্তু ওরা কেউই এসব আদর্শ ঘরে ফিরিয়ে নেয় না ঐ বোকা কৃষকের মত। একটু বেশি দাম পেলেই ওরা এসব বিক্রি করে ঘরে ফিরে আসে। ভালো ভালো কথাবার্তা, ভালো কিছুতে বিশ্বাস শুধু মুখে বললেই হয় না, বুকে ধারণ করতে হয়। অধিকাংশ মানুষ সেটা করে না বলেই যারা করে বা করতে চায় তাদের আমরা বোকা বলি, বোকা ভাবি।
তুই খুব সিরিয়াসলি নিলি মনে হয় ব্যাপারটা।
নারে। তবে এসবই খুবই হাস্যকর হত যদি না এতটা কষ্টের হত।    

দুবনা, ০৯ আগস্ট ২০১৮ 




  

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি