রাজার স্বপ্ন


আমার লেখার অভ্যেস সেই ছোটবেলা থেকেই। তখন ক্লাবের দেয়াল পত্রিকা বা সংকলনে লিখতাম। মাঝে অবশ্য বিভিন্ন কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি, বিশেষ করে মস্কো থেকে দুবনা চলে আর পর। তবুও মাঝে মধ্যে লিখতাম। সে লেখাগুলো পড়ে থাকত অনাদরে। কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই এ লেখাটি পেলাম। কবে লেখা মনে নেই। তবে মোবাইল ফোনের কথা দেখে মনে হয় এটা লেখা ২০০০ বা ২০০১ সালে। ৯০ এর দশক ছিল পেজারের যুগ। লোকজন তখন পেজ করত। মোবাইলের চল তেমন ছিল না, মানে এতটা সর্বজনীন ছিল না। একবার ফটোগ্রাফির ব্যাপারে এক ইন্টার্ভিউতে বলেছিলাম “আমি ছবি তুলি আজকের আমিকে ভবিষ্যতে দেখবো বলে”। এখন হঠাৎ যখন পুরনো কোন লেখা খুঁজে পাই অথবা বাড়িতে জমিয়ে রাখা চিঠিগুলো পড়ি, বুঝতে পারি এই ডাইরি বা চিঠি বা গল্প এসবও নিজেকে চেনার, নিজেকে জানার আরেকটা উপায়। আরও মজার ব্যাপার হল এসব লেখায় শুধু নিজেকে যে দেখি তাই নয়, দেখি সেই সময়কে, সেই সময়ের সমাজ, সেই সময়ের মানুষজনকে। আর দেখি পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে বাইরের চেহারাটা বদলে গেলেও আমরা প্রায় সবাই ঠিক আগের মতই রয়ে গেছি।        

                                          ********************************
কিছুতেই ঘুম পাচ্ছে না রাজামহাশয়ের এপাশ ওপাশ করেই কেটে যাচ্ছে রাতটা আপনারা হয়তো ভাবছেন কোন রাজার গল্প এটা? কোন সময়েরই বা? সময় বলতে পারেন আজকের অথবা হাজার বছর আগের সে কী কথা? তাহলে কি এই হাজার বছরে কিছুই বদলায়নি? বদলাবে না কেন? আলবৎ বদলিয়েছে রথের জায়গায় লিমুজিন এসেছে পায়ে চলা বার্তাবাহকের জায়গায় এসেছে মোবাইল ফোন তবে হাজার বছর আগের মতই সাধারণ মানুষ রয়ে গেছে লাঞ্ছিত, বঞ্চিত আর রাজা মন্ত্রীরা আগেও যেমনি শোষণ করত, আজও তেমনি করে যাচ্ছে বদলিয়েছে শুধু শোষণের রূপটা আজকাল এসব অনেক বেশি সূক্ষ্ম  অনেক বেশি পলিটিকাল   কারেক্ট
যাকগে ফিরে আসি আমাদের রাজার কথায়
একটি প্রশ্ন তাকে কিছুতেই শান্তি দিচ্ছে না মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র  একটি মাত্র ভাঁড় দিয়ে রাজ্য চালিয়েছেন, আর আমাদের রাজা কিনা এতগুলো ভাঁড় মন্ত্রী দিয়েও দেশ চালাতে পারছেন না ভাঁড়ামিতে তার মন্ত্রীরা কেউই গোপালের চেয়ে কম যায় না, অথচ এতগুলো ভাঁড় নিয়েও তার দেশ আজ অচলপ্রায় কেন? এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লেন রাজামহাশয়
হঠাৎ দূরে প্রাসাদের এক কোনায় দেখা দিল পরিচিত এক মুখ পরনে তার সাদা ধূতি তেল কুচকুচে মাথা পেছনে ঝুলছে মস্ত টিকি
-       এস গোপাল! এস! তোমার কথাই ভাবছিলাম
-       আজ্ঞে মহারাজ! দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছে কিসের এত দুশ্চিন্তা?
-       দুশ্চিন্তা না করে কি করি বল তোমার চেয়েও চালাক চতুর ভাঁড়দের বেছে বেছে মন্ত্রী বানালাম একটা দুটো নয়, গণ্ডায় গণ্ডায় অথচ দেশটার কী হালই না বানিয়েছে এরা! দিন দিন রাজ্য তো অচল হয়ে পড়ছে কি করি এখন বলতো? তবে কি ওরা যথেষ্ট চতুর নয়?
-       চতুর তো বটেই তবে ওরা সে চাতুর্য প্রজাদের সেবায় লাগায় না, লাগায় মানুষ ঠকানোর কাজে তাই তো ওরা থাকে প্রাসাদে আর মানুষ ভাঙা কুঁড়ে ঘরে অথবা ফুটপাতে এ থেকেই যত বিপদ, বিপ্লব, যত বিক্ষোভ আর আন্দোলন
-       তাহলে কি এর কোন বিহিত নেই?
-       থাকবে না কেন? নিশ্চয়ই আছে আপনাকে আরেকটা মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে আর তার প্রধান হবে সবচেয়ে যোগ্য অযোগ্য মন্ত্রী
-       এ আবার কেমন কথা? আমি চাইছি অযোগ্যদের হাত থেকে রেহাই পেতে আর তুমি কিনা তাদের মন্ত্রী করতে বলছ
-       ব্যাপারটা যত কঠিন ভাবছেন তা কিন্তু নয় বর্তমান মন্ত্রী সভার সবচেয়ে অযোগ্য মন্ত্রীই হবে সেই মন্ত্রনালয়ের প্রধান
-       তাতে লাভ?
-       লাভ? দেখবেন কত বেগ পেতে হচ্ছে এমন মন্ত্রী খুঁজে বের করতে সহজে কেউ রাজী হবে না এতে দলের কিছু লোকের মন্ত্রী হবার খায়েশ কমবে আর অন্য মন্ত্রীরা যাতে এই মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিতে না হয় সে জন্যে প্রাণ দিয়ে কাজ করবে
-       আর যদি না করে?
-       এখনও তো করছে না চেষ্টা করে দেখতে তো পারেন লাভ না হলেও ক্ষতি হবে না
-       বাঁচালে তুমি
বান্দা! চিৎকার করে উঠলেন রাজামহাশয় সেই চিৎকারে নিজের ঘুম ভেঙ্গে গেল রাজার
আমি জানি কে হবে সেই যোগ্য অযোগ্য মন্ত্রী! আমি জানি কে হবে সেই যোগ্য অযোগ্য মন্ত্রীবলতে বলতে রাজা তৈরি হতে শুরু করলেন আজ সকাল সকাল রাজদরবারে যাবেন তিনি 
দুবনা, ২০০

                                         *********************************

এরপর কেটে গেছে অনেক বছর
কত রাজা কত মন্ত্রী বদেলেছে আমাদের রাজার রাজ্যে এখন এমনকি অযোগ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার জন্যেও প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে, বেড়েই চলছে মন্ত্রীত্ব বলে কথা 
দুবনা, ১৩ অক্টোবর ২০১৮ 



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি