বিবেক
আমার ছোট
বেলা কেটেছে যাত্রা দেখে দেখে। গ্রামেই যাত্রার দল ছিল, আর আমার বয়স যখন পাঁচ বছর
বড়দা “অম্বিকা নাট্য প্রতিষ্ঠান” নামে নিজেই এক যাত্রার দল তৈরি করেন। আমি ছিলাম
সেই দলের ১ টাকার স্বত্বাধিকারী। আমাদের বাড়িতেই হত রিহার্সেল। এই দলের মূল
পালাগুলো ছিল ঐতিহাসিক আর সামাজিক। নায়ক, নায়িকা, রাজা, উজীর, নর্তক, নর্তকী এসবের
বাইরেও যে একটি অবশ্যম্ভাবী চরিত্র ছিল, সেটা হল বিবেক। বড়দার দলে বিবেকের কাজ
করতেন মূলত দয়াল কানা। উঁচালম্বা, স্বাস্থ্যবান, ঝাঁকড়া চুলের এই বিবেক ছিলেন বেশ
হাসিখুশি, যাকে বলে ভরসা জাগানো চেহারার। তবে তার মুখ ভর্তি ছিল বসন্তের দাগ আর এক
চোখ কানা। এ থেকেই নাম তার দয়াল কানা। তার
কাজই ছিল মাঝে মধ্যে মঞ্চে এসে বিবেক জাগ্রতকারী গান গাওয়া। তার সুরেলা আর বলিষ্ঠ
কণ্ঠের সেই গান শীতের রাতের ঘন অন্ধকার আর নিস্তব্ধতা ভেদ করে গ্রামের চারিদিকে
প্রতিধ্বনি তুলত। বিবেক কোন দল বা গোষ্ঠীর পক্ষে ছিল না, ছিল মানবতার পক্ষে,
ন্যায়ের পক্ষে। অর্থাৎ আমরা যাকে বলি ভালো মানুষ। তবে হতে পারে মুখে বসন্তের দাগ
বা কানা চোখ আমাকে তখন থেকেই বিবেক সম্পর্কে একটু সন্দিহান করে তুলেছিল।
এটা ছিল অন্য যুগে, অন্য দেশে। এখন দেশ বদলেছে, বদলেছে সমাজ। আগে যদি মেরু দুটো উত্তর আর দক্ষিণ মেরুতেই অবস্থান করত আর এই দুই মেরুর মধ্যে ছিল হাজার মত আর হাজার পথের ইচ্ছে মত চলাফেরা করার সুযোগ, এখন সে জায়গাটা ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে। দেখে তো মনে হয় বিষুব রেখা থেকেই শুরু হয়েছে এই মেরুকরণ। ফলে মুক্ত চিন্তার, ভিন্ন মত পোষণকারী মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে দেশে দেশে। কিন্তু ভালো মানুষ বলে মহাপরাক্রমশালীরা না পারছে এদের গিলতে না পারছে উগরাতে। আজকের বিবেক তাই না ঘরের না ঘাটের, অনেকটা গ্রহান্তরের বাসিন্দা।
দুবনা, ০৩ অক্টোবর ২০১৮ এটা ছিল অন্য যুগে, অন্য দেশে। এখন দেশ বদলেছে, বদলেছে সমাজ। আগে যদি মেরু দুটো উত্তর আর দক্ষিণ মেরুতেই অবস্থান করত আর এই দুই মেরুর মধ্যে ছিল হাজার মত আর হাজার পথের ইচ্ছে মত চলাফেরা করার সুযোগ, এখন সে জায়গাটা ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে। দেখে তো মনে হয় বিষুব রেখা থেকেই শুরু হয়েছে এই মেরুকরণ। ফলে মুক্ত চিন্তার, ভিন্ন মত পোষণকারী মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে দেশে দেশে। কিন্তু ভালো মানুষ বলে মহাপরাক্রমশালীরা না পারছে এদের গিলতে না পারছে উগরাতে। আজকের বিবেক তাই না ঘরের না ঘাটের, অনেকটা গ্রহান্তরের বাসিন্দা।
Comments
Post a Comment