ধর্ষণের দর্শন

বছর শুরু হতে না হতেই ধর্ষণের ধুম পড়ে গেছে। ধর্ষকরা যেন পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। বরাবরের মতই অপরাধীর শাস্তি চাইছে মানুষ, কিন্তু অপরাধ যেন না ঘটে সে নিয়ে তেমন কথাবার্তা শুনছি না। অবশ্য যেখানে অসুখ চরম পর্যায়ে না গেলে মানুষ ডাক্তারের ছায়া মাড়ায় না সেখানে প্রতিষেধক টীকার কথা ভাবা অনেকটা আকাশ কুসুম কল্পনা।

ধর্ষণ কী? এটা কী শুধু যৌন লিপ্সা পূরণ? ধর্ষণ আসলে শারিরীক ও মানসিক ভাবে মানুষকে ধুলির সাথে মিশিয়ে দেবার সর্বোচ্চ স্তর। যার ফলে অনেক ভাষাতেই কাউকে চরম হেনস্থা করলে সে নিজের অবস্থা প্রকাশ করতে এ ধরনের একটা শব্দ ব্যবহার করে। ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা বলেন এসব ঘটে ইনফিরিওর কমপ্লেক্স থেকে। তাদের কথার পেছনে শুধু যুক্তিই নয় অনেক প্রমাণও আছে। বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার বিভিন্ন নামকরা অপরাধীদের উপর বিভিন্ন ডকুমেন্টারি সে কথাই বলে। তবে আমার মনে হয় আমাদের দেশে এর সাথে আরও একটা উপকরণ যোগ হয়েছে, সেটা জবাবদিহিতার চরম অনুপস্থিতি। আজ (শুধু আজ নয়, বলতে গেলে স্বাধীনতার পর থেকেই, কারণ পাকিস্তান আমলে সব কিছুর পরেও শক্তিশালী বিরোধী দল ছিল) ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এমন কাজ নেই যা করা যায় না বা করা হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন সম্মানিত লোকদের লাঞ্ছনার ঘটনা দেখে মনে হয় পাড়ার মাস্তানরা দুর্বল ছেলেদের সাথে মস্করা করছে। জাতি, ধর্ম ও আদর্শগত সংখ্যালঘু, শ্রমিক, কৃষক, নারীসহ সমাজের বিভিন্ন অপেক্ষাকৃত অসহায় মানুষদের কথা নাই বা বললাম। আর এসব করে ক্ষমতাসীন দল বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় অপরাধীরা আশ্চর্যজনক ভাবে আইনের চোখে ধুলি দিয়ে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারছে এদেশের মাটিতে। আর এই বিচারহীনতাই সমাজের একটা অংশকে ধর্ষণের মত বিভিন্ন ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত করছে। তাই আজ যখন আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলি, সাথে সাথে আমাদের এই বিচারহীনতার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে। বর্তমানে রাজনীতিতে যে অরাজকতা বিদ্যমান তার অবসান না হলে ধর্ষণের সংক্রামক ব্যাধি থেকে সমাজ সহজে আরোগ্য লাভ করবে না।

দুবনা, ১১ জনুয়ারি ২০২০
 
 

Comments

Popular posts from this blog

রাজনীতি

২৪ জুনের দিনলিপি

স্মৃতি