শান্তি

অনেকেই সামজে বিভিন্ন বিভেদের মূলে ধর্মকে দেখেন, কেউ কেউ শ্রেনী বিভাজন। আর নিজ নিজ জায়গা থেকে এর সমাধান দেন। যারা শ্রেনী সংগ্রামের কথা বলে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার। শ্রেণীহীন সমাজ গড়ে তোলা আর সেজন্যে দরকারে অন্য শ্রেণীকে ধ্বংস করা। একাজ আগেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। এ নিয়ে প্রশ্ন আছে, থাকবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন মানবতাবাদীদের কাছে।

ধরুন এক নির্জন দ্বীপে দশ জন লোক থাকে। তাদের আট জন শান্তিপ্রিয়, কিন্তু বাকি দুইজন সুযোগ পেলেই অন্যদের উপর অত্যাচার করে, এক কথায় এই দুজনের কারণেই যত অশান্তি। কি করা? তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা। কিন্তু তাতে কাজ না হলে? বাকি আট জন জানে এই দুই জন যদি না থাকে তাহলে অশান্তি থাকবে না। কিন্তু প্রশ্ন, তাদের দ্বীপ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া বা মেরে ফেলা কি ঠিক হবে? হয়তো তাতে শান্তি আসবে, কিন্তু এই আট জন কি মানবিক থাকবে? তাদের কি আর মানবিক বলা যাবে? আর একবার যে অমানবিক কাজ করে সে যে আর করবে না, এই আট জনের মধ্য থেকে নতুন করে কেউ দুর্জন হয়ে উঠবে না, তার কি কোন গ্যারান্টি আছে? তাই আমরা যখন কোন কিছুকে, কোন মতবাদকে নির্মূল করতে চাই মানবতার নামে, ভেবে দেখা দরকার এটা করে আমরা অমানবিক হচ্ছি কি না। আমাদের সবাইকে প্রতি পদে পদে কম্প্রমাইজ করে চলতে হয়, সেটা বাসায় হোক, অফিসে হোক, মাছের বাজারে হোক আর যেখানেই হোক। কম্প্রোমাইজে না এলে আপনি একটা পুঁটিমাছ পর্যন্ত কিনতে পারবেন না। সমাজটাই যেখানে একটা বিরাট বোঝাপড়া, একটা বিরাট কম্প্রোমাইজ সেখানে নির্মূল, মাইনাস এসব মানবিক নয়। যে কারণেই হোক ধর্ম, বর্ণ, জাতি আর এসব নিয়ে চুলোচুলি - এটাই বাস্তবতা। মানবিক সেটাই যেখানে সবাই টিকে থাকার, বেঁচে থাকার সুযোগ পায়। কোন কিছুর মূল জোর করে উৎপাটন করা অমানবিক। সবার জন্য শান্তি চাইলে আপনাকে কিছু লোককে শান্তিতে ঘুম পাড়াতে হবে, সেটা অমানবিক। আর মানবিক হতে হলে মাঝে মধ্যে কিছু কিছু অশান্তি (বদ)হজম করতে হবে। তাই ঠিক করুন আপনি মানবিক নাকি শান্তিকামী?

দুবনা, ২২ জানুয়ারি ২০২০
 
 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

রাজনীতি

স্মৃতি