গ্লাসের ভাঙ্গা গড়া

গতকাল সকালে একটা ভাঙ্গা গ্লাসের ছবি দেওয়ায় এক বন্ধুর প্রশ্ন ছিল
- অনেক চেষ্টা করে এটা করেছিস?
না রে, ভাংতে কষ্ট হয়নি। ওটা ছিল গ্লাসের আত্মহত্যা। সকালে অসাবধানতা বশত ও টেবিল থেকে পড়ে মরে যায়। শব্দ শুনে বেড-রুম থেকে বৌ প্রশ্ন করল
- কি হল?
- তোমার শ্যাম্পেনের গ্লাসটা ভেঙ্গে গেছে।
- কে ভাংল?
বাসায় আর কেউ ছিল না। তাই বললাম
- জিনিসপত্র ঠিকঠাক রাখতে হয়।
তখন নিউটন আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললেন
- কোন বস্তুর উপর বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে সেটা হয় স্থির থাকে নয়তো সমবেগে সরল পথে চলতে থাকে। তুমি কি আমার প্রথম সুত্র এর মধ্যেই ভুলে গেলে? 
আমিও ঝটকা মেরে বললাম
- রাখ তোমার প্রথম সুত্র। সংসার ফিজিক্স নয়, সেখানে শুধু (একপক্ষের) ক্রিয়া আছে, প্রতিক্রিয়া নেই (থাকলেও সমান নয়, অন্তত বাহ্যিক ভাবে)
বৌয়ের অবশ্য নিউটনকে নিয়ে ভাবার সময় ছিল ন। সে তার কুকুরদের পা নিয়ে ব্যস্ত।
- কাঁচের টুকরোগুলো সরিয়ে ফেল, নইলে কুকুরদের পা কাটবে।
- কাঁচেরা সব সোফার নীচে লুকিয়েছে। তুমি উঠে ওদের ফেলে দিও।
একটু পরে বৌ উঠে দেখল টেবিলের উপর ভাঙ্গা গ্লাস দাঁড়িয়ে হাসছে।
- এটা ফেলে দাও।
- মানে? এটা আমার নতুন মডেল।
- তাহলে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখ। টেবিলে যেন না দেখি।
এই বলে বৌ গজ গজ করতে করতে কাঁচের টুকরো সংগ্রহে লেগে গেল। জানি আরও কয়েকদিন এদিক সেদিক থেকে ভাঙ্গা কাঁচ বেরুবে আর প্রতিবারই এক একটা বাক্য বান আমার দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। গায়ে লাগবে না, কারণ আমি ওসব গায়ে লাগাই না।
তখন কিছু ছবি তুললাম। রাতে আবার ছবি তুলছি আর ভাবছি কি ভালই না ছিল আগের বাসায়। এখন ওখানে থাকলে কতভাবে ওর ছবি তুলতে পারতাম। এখানে ট্রিপড ফেলানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। তবে অভাব আর আলসেমি আমাকে সব সময় ক্রিয়েটিভ করে। প্রথাগত পদ্ধতি বাদ দিয়ে অন্যভাবে ছবি তুললাম। বৌ দেখে আবার শুরু করল
- কি আছে এই ভাঙ্গা গ্লাসে? ভাঙ্গা গ্লাস, শুকনো পাতা। মৃতের রাজ্য যেন!
আমি কোন কথা বলি না। আসলে রুচি নিয়ে তর্ক করতে নেই।

হ্যারে নবীন, ভাংতে নয়, তবে ভাঙ্গা গ্লাস রাখতে রীতিমত ঠাণ্ডা যুদ্ধ করতে হয়েছে।     

দুবনা, ২১ জানুয়ারি ২০২০











Comments

Popular posts from this blog

রাজনীতি

২৪ জুনের দিনলিপি

স্মৃতি