পথ
কয়েক দিন আগে এক বন্ধু জানতে চাইল সমাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন পুরনো পথে
হওয়া কি আদৌ সম্ভব? তখন থেকেই বিষয়টা নিয়ে ভাবছিলাম। অনেক আগে যখন রাজা বাদশাহরা ছিলেন
মানুষের ভাগ্যবিধাতা তখন কি রাজনীতি এমন ছিল? মানুষের কি অংশগ্রহন ছিল রাজনীতিতে? বিজ্ঞ
রাজাদের বিজ্ঞ বিজ্ঞ মন্ত্রী থাকতো, রাজারা তাদের মতামত শুনতে দ্বিধা করতেন না। আর
মূর্খ রাজারা উপদেষ্টা হিসেবে জড়ো করত অধিকতর মূর্খদের, যারা ভালো মন্দ যাই হোক, রাজার
কথায় সায় দিয়ে যেত। শত হলেও "চাচা আপান প্রাণ বাঁচা"।
সে সময় জনগণ কর দেওয়া আর মাঝে মধ্যে জীবন দেওয়ার মধ্যেই দেশ তথা রাজাদের প্রতি নিজেদের প্রেমকে সীমাবদ্ধ রাখত। রাজকার্যে আমাদের দেশে জনগণ প্রথম কথা বলার চেষ্টা করে মনে হয় সিপাহী বিদ্রোহের সময়। পরবর্তীতে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ গঠিত হলেও প্রথম দিকে সেগুলো ছিল অনেকটা এলিট ক্লাব মত। তবে এসবের আগেও এদেশে শুরু হয়েছিল সামাজিক সংস্কার। সেদিক থেকে দেখলে বৌদ্ধ, মহাবীর থেকে শুরু করে নানক, চৈতন্যদেব, রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র - এঁরা সবাই সমাজ সংস্কারক। ঘুনে ধরা সমাজের পরিবর্তনের তাগিদ যুগে যুগে জন্ম দিয়েছে সমাজ সংস্কারকদের। সেই আন্দোলন কখনও ধর্মীয় রূপ নিয়েছে, কখনও রাজনৈতিক। এমন কি ভারত ভাগ - সেটাও প্রথমে সামাজিক দাবী থেকে রাজনৈতিক দাবীতে পরিণত হয়, ঠিক যেমন কিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ - ভাষাকে কেন্দ্র করে যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, এক সময় সেটাই রাজনৈতিক দাবীতে পরিণত হয়।
সে সময় জনগণ কর দেওয়া আর মাঝে মধ্যে জীবন দেওয়ার মধ্যেই দেশ তথা রাজাদের প্রতি নিজেদের প্রেমকে সীমাবদ্ধ রাখত। রাজকার্যে আমাদের দেশে জনগণ প্রথম কথা বলার চেষ্টা করে মনে হয় সিপাহী বিদ্রোহের সময়। পরবর্তীতে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ গঠিত হলেও প্রথম দিকে সেগুলো ছিল অনেকটা এলিট ক্লাব মত। তবে এসবের আগেও এদেশে শুরু হয়েছিল সামাজিক সংস্কার। সেদিক থেকে দেখলে বৌদ্ধ, মহাবীর থেকে শুরু করে নানক, চৈতন্যদেব, রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র - এঁরা সবাই সমাজ সংস্কারক। ঘুনে ধরা সমাজের পরিবর্তনের তাগিদ যুগে যুগে জন্ম দিয়েছে সমাজ সংস্কারকদের। সেই আন্দোলন কখনও ধর্মীয় রূপ নিয়েছে, কখনও রাজনৈতিক। এমন কি ভারত ভাগ - সেটাও প্রথমে সামাজিক দাবী থেকে রাজনৈতিক দাবীতে পরিণত হয়, ঠিক যেমন কিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ - ভাষাকে কেন্দ্র করে যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, এক সময় সেটাই রাজনৈতিক দাবীতে পরিণত হয়।
সামাজিক দাবী দাওয়া যখন সঠিক নেতৃত্বের হাতে পড়ে আর রাজনৈতিক শক্তি যখন
সঠিকভাবে সেসব দাবিদাওয়ার মূল্যায়ন করতে পারে - তখন তাদের যুগপৎ আন্দোলন সাফল্যের মুখ
দেখে। সেটা এদেশে বারবার ঘটেছে। এর শেষ উদাহরণ বলা যায় নব্বুইএর এরশাদ বিরোধী আন্দোলন।
সাম্প্রতিক গণ জাগরণ মঞ্চ প্রাথমিক ভাবে সেদিকে এগুলেও রাজনৈতিক শক্তির বিশ্বাসঘাতকতায়
সেটা মাঝপথেই থুবড়ে পড়ে। সামাজিক আশা আকাঙ্খার সাথে রাজনৈতিক শক্তির দেনা পাওনার হিসেবের
গড়মিলে বর্তমানে যে অসামাজিক ও অরাজনৈতিক অবস্থা বিদ্যমান দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে
সেটাই আমাদের সমাজের সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাঁধা।
এক্ষেত্রে আমার স্কুল লাইফের এক শিক্ষকের বলা গল্পের কথা মনে পড়ছে। ওনার
ভার্সনটা ছিল এমন
রহিম আর মধুকে ছাদে উঠিয়ে মই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নামতে তো হবে। কি করা? রহিম "আল্লাহ" বলে লাফিয়ে নেমে পড়ল। "হরি বলে দেই লাফ যা করে আল্লাহ" বলে লাফিয়ে মধুর পা ভাংল।
এই গল্পটা আমি একটু অন্যভাবে বলতে চাই। ছাদে ছিল তিনজন।
প্রথম জন "বিসমিল্লাহ" বলে লাইয়ে ঠিক নেমে পড়ল, যেমন কিনা দ্বিতীয় জন "জয় শ্রীরাম" বলে। আর তৃতীয় জন "হরি বলে দেই লাফ যা করে আল্লাহ" বলে লাফিয়ে হাত পা ভেঙ্গে হাসপাতালে শয্যাশায়ী। যারা ভালো মন্দ যাই হোক নিজেদের বিশ্বাসে অচল থেকে কিছু করার চেষ্টা করছে, তারা পায়ের নীচে মাটি খুঁজে পাচ্ছে। আর যারাই "কুলও রাখি আর শ্যামও রাখি" বলে দুই নৌকায় পা দিয়েছে তারা বিপদে আছে। আর ধূর্ত রাজনীতিবাজরা এসব করে আমাদের জনগণকে চরম বোকা বলে মনে করার কারণে। জনগণ বারবার বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জিতিয়ে আনার পরেও তাদের ধারণা আমাদের দেশের মানুষ মোল্লা নিয়ন্ত্রিত। যার ফলে তারা একদিকে গণতন্ত্রের কথা বলে আবার আরেক দিকে মোল্লাতন্ত্রকে খুশী করতে যা যা করা দরকার সেটাই করে।
সামাজিক অসন্তোষ, অসাম্য এক সময় রাজনীতির চালিকা শক্তি ছিল। এই অসন্তোষকে পুঁজি করে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠত। সরকার আসত, সরকার যেত, যদিও জনগণের অবস্থার হেরফের এতে খুব একটা হত না। এখন রাজনীতি বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তি নিজের স্বার্থে সমাজে অসাম্য তৈরি করে, অসন্তোষের জন্ম দেয়। তবে এসবই যাকে বলে নিয়ন্ত্রিত অসাম্য, নিয়ন্ত্রিত অসন্তোষ। আর এভাবেই প্রায় সমস্ত পর্যায়ে "ডিভাইড অ্যান্ড রুল" তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ চালায়। ভোগবাদে বিশ্বাসী মানুষ সহজেই এই টোপ গিলে। ফলে সমস্যা যতটা না নতুন বা পুরনো পথের তার চেয়ে বেশি রাজনীতিবাজদের অসততায়। আর এর মূলে রয়েছে ঘৃণার রাজনীতি, হেট থিওরি। যতদিন না মানুষ মানুষকে ভালবাসতে শিখবে, ধর্মও, বর্ণ, জাতি ইত্যাদি গণ্ডীর বাইরে না আসতে পারবে রাজনীতিবাজরা ততদিন এটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করবে। এই নষ্ট রাজনীতিকে হটাতে দরকার সামাজিক সংস্কার। শুধু সমাজের আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আসতে পারে নতুন রাজনীতি, নতুন দিন।
রহিম আর মধুকে ছাদে উঠিয়ে মই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নামতে তো হবে। কি করা? রহিম "আল্লাহ" বলে লাফিয়ে নেমে পড়ল। "হরি বলে দেই লাফ যা করে আল্লাহ" বলে লাফিয়ে মধুর পা ভাংল।
এই গল্পটা আমি একটু অন্যভাবে বলতে চাই। ছাদে ছিল তিনজন।
প্রথম জন "বিসমিল্লাহ" বলে লাইয়ে ঠিক নেমে পড়ল, যেমন কিনা দ্বিতীয় জন "জয় শ্রীরাম" বলে। আর তৃতীয় জন "হরি বলে দেই লাফ যা করে আল্লাহ" বলে লাফিয়ে হাত পা ভেঙ্গে হাসপাতালে শয্যাশায়ী। যারা ভালো মন্দ যাই হোক নিজেদের বিশ্বাসে অচল থেকে কিছু করার চেষ্টা করছে, তারা পায়ের নীচে মাটি খুঁজে পাচ্ছে। আর যারাই "কুলও রাখি আর শ্যামও রাখি" বলে দুই নৌকায় পা দিয়েছে তারা বিপদে আছে। আর ধূর্ত রাজনীতিবাজরা এসব করে আমাদের জনগণকে চরম বোকা বলে মনে করার কারণে। জনগণ বারবার বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জিতিয়ে আনার পরেও তাদের ধারণা আমাদের দেশের মানুষ মোল্লা নিয়ন্ত্রিত। যার ফলে তারা একদিকে গণতন্ত্রের কথা বলে আবার আরেক দিকে মোল্লাতন্ত্রকে খুশী করতে যা যা করা দরকার সেটাই করে।
সামাজিক অসন্তোষ, অসাম্য এক সময় রাজনীতির চালিকা শক্তি ছিল। এই অসন্তোষকে পুঁজি করে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠত। সরকার আসত, সরকার যেত, যদিও জনগণের অবস্থার হেরফের এতে খুব একটা হত না। এখন রাজনীতি বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তি নিজের স্বার্থে সমাজে অসাম্য তৈরি করে, অসন্তোষের জন্ম দেয়। তবে এসবই যাকে বলে নিয়ন্ত্রিত অসাম্য, নিয়ন্ত্রিত অসন্তোষ। আর এভাবেই প্রায় সমস্ত পর্যায়ে "ডিভাইড অ্যান্ড রুল" তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ চালায়। ভোগবাদে বিশ্বাসী মানুষ সহজেই এই টোপ গিলে। ফলে সমস্যা যতটা না নতুন বা পুরনো পথের তার চেয়ে বেশি রাজনীতিবাজদের অসততায়। আর এর মূলে রয়েছে ঘৃণার রাজনীতি, হেট থিওরি। যতদিন না মানুষ মানুষকে ভালবাসতে শিখবে, ধর্মও, বর্ণ, জাতি ইত্যাদি গণ্ডীর বাইরে না আসতে পারবে রাজনীতিবাজরা ততদিন এটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করবে। এই নষ্ট রাজনীতিকে হটাতে দরকার সামাজিক সংস্কার। শুধু সমাজের আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আসতে পারে নতুন রাজনীতি, নতুন দিন।
দুবনা, ১৬ জানুয়ারি ২০২০
Comments
Post a Comment