আউটকাস্ট
ঘুম ভাংতেই মাহবুবের মেসেজ পেলাম। আজ ছিল আসামে কমিউনিস্ট
 গ্রেফতারের উপর একটা নিউজ। মাত্র কদিন আগে দীর্ঘ দুই মাস পরে ইয়াকুব কেদমি
 রুশ টেলিভিশনের একটা টক শোতে যোগ দেন ইসরাইল থেকে অনলাইনে। ইয়াকুব কেদমির 
জন্ম সোভিয়েত ইউনিয়নে, সত্তরের দশকে ইহুদীদের সোভিয়েত ইউনিয়ন ত্যাগ করার 
অধিকারের জন্য লড়াই করেন। সেখানে বিভিন্ন পদে ছিলেন, যতদূর জানি মাসাদের 
সাথেও যুক্ত ছিলেন। এখন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ। স্বাধীনচেতা এবং যথেষ্ট 
নিরপেক্ষ। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি সহানুভুতিশীল বলা চলে। ওনাকে প্রশ্ন করা 
হয়েছিল ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে, বিশেষ করে ইউরোপ আমেরিকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে 
যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে তা নিয়ে। 
ফ্যাসিবাদের উপর বিজয়ের প্রাক্কালে আমেরিকা নিজেদের আর ব্রিটেনকে বিজয়ের 
একমাত্র নায়ক বলে ঘোষণা করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের উল্লেখ পর্যন্ত নেই। এমন 
কি অনেক দেশ যুদ্ধে জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে সমানভাবে দায়ী করতে 
চাইছে।  কেদমি তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে প্রশ্ন দিয়ে উত্তর শুরু করেন। 
"আচ্ছা, বলুন তো কারা সেই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছিল? আপনারা 
হয়তো বলবেন ইহুদীরা, কিন্তু ইহুদীদের উপর নির্যাতন নেমে আসার আগেই এই 
গ্রুপের উপর ফ্যাসিবাদের রোলার কোস্টার নেমে আসে। বলতে পারেন এরা কারা?" 
কোন উত্তর নেই। সবাই (এই ফরম্যাটে একজন সঞ্চালক, যিনি নিজেও নামকরা 
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও চারজন সাংবাদিক থাকেন যারা বিভিন্ন মতামতের 
প্রতিনিধিত্ব করেন। কেউ প্রো-পুতিন, কেউ আন্টি পুতিন, একজন বিদেশি 
বিশেষজ্ঞ, আমেরিকান, ব্রিটিশ, জার্মান, চেক, পোলিশ, ইউক্রাইনিয়ান ইত্যাদি) 
একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে, কিন্তু ঠিক বলতে পারছে না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি 
নিজেও এই উত্তরটা ভাবিনি। কেদমি নিজেই উত্তর দিলেন "কমিউনিস্টরা। হ্যাঁ, 
রাইখশটাগ আক্রমণের মধ্য দিয়েই সেটা শুরু। আর কমিউনিস্টদের উপর এই নির্যাতন 
শুধু জার্মানিতেই সীমাবন্ধ থাকেনি। আমেরিকা, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে 
পৃথিবীর দেশে দেশে সেটা ছড়িয়ে পড়ে। এমন কি স্ত্যালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নেও 
তারা রেহাই পায়নি। কিন্তু একটা বই, একটা ডকুমেন্ট, কোন ঐতিহাসিক পৃথিবীর 
দেশে দেশে কমিউনিস্ট নিধনের কথা বলেনি, বলেনা।" আসলেও তাই। আমেরিকার 
কমিউনিস্ট নিধন সম্পর্কে আমরা কি খুব বেশি কিছু জানি? গণতন্ত্র আর বাক 
স্বাধীনতার কথা বললেও সেখানে এ ব্যাপারে ট্যাবু ছিল। এমন কি এখনও 
স্যাণ্ডারসকে এ কারণেই ছলে বলে কৌশলে সামনে যেতে দেওয়া হয় না। বাংলাদেশের 
মুক্তি আন্দোলনে কমিউনিস্টদের অবদান কি স্বীকার করা হয়? ভারতের? সারা বিশ্ব
 বা বিশ্বের শাসক, শোষক শ্রেনী কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে এককাট্টা। তাই আসামে 
এসব হচ্ছে তাতে নতুনত্ব কিছুই নেই। রাজাকারদের বিচারে আমেরিকা বা তথাকথিত 
গণতন্ত্রী দেশগুলো বাধা  দিলেও কমিউনিস্টদের বিচারে তারা কিছু বলবে বলে মনে
 হয় না। অধিকাংশ দেশেই কমিউনিস্টদের আউটকাস্ট বলে মনে করা হয়। আর এ কারণেই 
সব দেশে সব সরকার এদের উপর অত্যাচার করে পার পেয়ে যায়। এর মূল কারণটা মনে 
হয় পুঁজিবাদী বিশ্বের সাথে সমাজতন্ত্রীদের আন্টাগনিস্টিক অবস্থানেই নিহিত 
আর সেটার পত্তন হয়েছে সেই ১৮৪৮ সালে কমিউনিস্ট মেনিফেস্ট প্রকাশের মধ্য 
দিয়ে।   
দুবনা, ০৬ জুন ২০২০    

Comments
Post a Comment