করোনা কালে সাম্যবাদ

দাঁড়া, দাঁড়া, ঘরে ঢুকবি না একদম!
মানে?
মানে আবার কি? সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়াবি আর করোনার ডিম নিয়ে ঘরে ফিরবি, সেটা হবে না।

কী আর করা! দরোজার সামনে পায়চারী ছাড়া আর কীই বা করার আছে!

একদম ছুবি না।
সে আবার কী কথা? আমি কি অস্পৃশ্য নাকি যে তোমাকে ছুঁতে পারব না?
তুই চণ্ডালেরও অধম। ওরা ছুঁলে জাত যায় আর তুই ছুঁলে প্রাণ  যায়।

কী আর করা! মাথা চুলকাতে চুলকাতে পায়চারী করতে পারাই এখন মহা সৌভাগ্য।

খাবি না বলে দিচ্ছি। একদম কিচ্ছু খাবি না।
এটা আবার কী বলছ? খাব না মানে?
জানিস না খাবারে করোনার ডিম থাকে? খেলে করোনা হয়?
সে তো বুঝলাম। কিন্তু না খেলে বাঁচবে কি করে?
বাঁচার চেয়েও আজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ করোনামুক্ত থাকা।
ভয় পাও কেন? মৃত ব্যক্তি করোনার বাহক নয়। তুমি তোমার সাধের স্বর্গে করোনা নিয়ে যেতে পারবে না।
চুপ।   একদম চুপ। কথা বলবি না। একটাও কথা বলবি না।
বা রে! আমি তো কথাই বলতে পারি না। তুমিই তো সেই তখন থেকে বকবক করে যাচ্ছ। যাকগে, যা খুশি বাবা তাই কর। আমি বরং ঘুমুই।

চোখ আর খুলতেই চাচ্ছে না। কানও শুনতে পাচ্ছে না। মুখের কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। কোন মতে  বলল

পা, ও পা, চল ঘরে যাই। আমি তো আর সইতে পারছি না।
এই যে বললে আমার ঘরে ঢোকা নিষেধ।
ভুলে যা অসব বাধা নিষেধ।
কিন্তু আমি তো উঠতে পারছি না। আরাদিন পেটে কিছু পড়েনি।
পেট, ও পেট, নে একটু খেয়ে নে।
করোনা হবে না?
ধুত্তরি করোনা। এখন তো বাঁচি।
কিন্তু হাতকে অস্পৃশ্য বলে তুমি তাড়িয়ে দিলে। আমি খাব কীভাবে?
হাত, ও হাত। আয়। আমায় একটু আদর কর। আর যে পারছি না।
চণ্ডাল বলে আবার দুরদুর করে তাড়িয়ে দেবে না তো?
না রে। আর করব না। আজ থেকে আমাদের সাম্যবাদ। হাত, পা, পেট, চোখ, মুখ, নাক, কান - সবাই আমরা ভাই ভাই, সবাই যাত্রী একই তরনীর। তবে বুঝলি, বাইরে থেকে এসে স্নান করে আমাদের কাছে আসিস। তাতে তোদের ভালো লাগবে,  আমাদেরও ভালো লাগবে। 

দুবনা, ১২ জুন ২০২০





Comments

Popular posts from this blog

রাজনীতি

২৪ জুনের দিনলিপি

স্মৃতি