ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

অনেক আগে শুনেছিলাম রাশিয়ার কোন এক শহরে নগর প্রধানের ফটোশপে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করে রিপোর্ট তৈরি করার কথা। এ নিয়ে মিডিয়ায় হৈচৈ হলে সে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ফটোশপ ব্যাপারটা মোটেই খারাপ নয়। শিল্পীরা যদি তাদের মনের মাধুরী দিয়ে ছবি আঁকতে পারে এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিতে পারে, ফটোগ্রাফারের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তাকে সব সহ ছবি তুলতে হয় এবং পরে রিটাচের সাহায্যে অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিতে হয়। আগে সেটা কষ্ট সাধ্য ছিল এখন ফটোশপের কল্যাণে তা সহজ হয়ে গেছে। তাই এখন কোন দৃশ্য পছন্দ হলে তুলে নেই, কারণ জানি ফটোশপে সেটাকে মনের মত করে ঠিক করে নিতে পারব, আগের মত এই লেন্স নেই বা ঐ ফিল্টার নেই এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না। তবে ছবির ক্ষেত্রে যদি এটা কাজ করে, শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে সেটা অকেজো। কারণ ছবিতে পরিষ্কার হলেও বাস্তবে শহর নোংরাই থেকে যায়। একই কথা বলা চলে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে। মিডিয়াকে বশ করে বা কিনে যেকোনো ধরণের রিপোর্ট তৈরি করা যায়, কিন্তু তাতে বাস্তবতার হেরফের হয় না। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসেছে, এখানকার মানুষের কোন কষ্ট ছিল না, ছিল শুধু বিএনপি জামাতের প্রোপ্যাগান্ডা। এসব ছিল গৃহপালিত মিডিয়ার রিপোর্টে। বাস্তবে সেটা ছিল না। ফলাফল আমাদের জানা। একই ভাবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তথা আমেরিকান এস্টাব্লিশমেন্টের মিডিয়া সাম্রাজ্যের বদৌলতে ট্রাম্পের সবই ছিল রাশিয়ার প্রোপ্যাগান্ডা। তারা মানুষের সমস্যা সমাধান না করে তৃতীয় পক্ষের হাত দেখেছে সবকিছুতে। বিশাল মিডিয়া, টেকনলজি, এআই এসব মানুষের মতামতকে ম্যানিপুলেট করার জন্য খুব ভালো। কিন্তু ভোট এখনও পর্যন্ত মানুষই দেয়। কী আমাদের দেশে, কী আমেরিকায় - মানুষের কাছে না গিয়ে টেকনোলজির সাহায্যের মানুষের মতামতকে ম্যানিপুলেট করে তাদের সমস্যার সমাধান না করে সমস্যার কথা ভুলিয়ে রাখার চেষ্টাই দিনের শেষে শাসক গোষ্ঠীর ভরাডুবির কারণ হয়েছে। তাই টেকনোলজি ভালো কিন্তু সেই সাথে "সবার উপরে মানুষ সত্য" না হলে এসবই ভেস্তে যাবে।

দুবনা, ০৮ নভেম্বর ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল

প্রশ্ন