সমাজ
"তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।" কংস যখন শিশু কৃষ্ণকে হত্যা করতে যায় তখন মহামায়া এ কথা বলে সেখান থেকে চলে যায়। আসলে প্রতিটি সমাজের পরিবর্তনের চাবিকাঠি সমাজের ভেতরেই থাকে, সেখানেই সে বেড়ে ওঠে আর উপযুক্ত সময়ে ছোবল মারে। এটা অবজেক্টিভ প্রক্রিয়া। সেই পরিবর্তনকে গতি দেয় সমাজের প্যাসনারী কিছু মানুষ। আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে পুঁজিবাদী সমাজের গতি ছিল একমুখী। শোষণ ছিল আদিম সাম্যবাদী সমাজ পরবর্তী সমাজগুলোর চালিকা শক্তি, শোষকের অন্যতম হাতিয়ার। সেটা এখনও বিদ্যমান। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ যেহেতু শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চায় তাই তাদের চলতে হয় উল্টো স্রোতে। এজন্যেই দরকার বিপ্লবী পার্টি। তবে সেটা বড়জোর সাফিসিয়েন্ট কন্ডিশন, নেসেসারি কন্ডিশন নয়। দুটোই পূর্ণতা পেলে বিপ্লবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বর্তমান পার্টির নেতা কর্মীদের নিয়ে অনেকেই হতাশ, তবে সেটা তত্ত্বের নয় এদের সমস্যা। এটা বর্তমান ভোগবাদী মানসিকতার প্রতিফলন। আগে কমিউনিস্ট পার্টির লোকেরা ছিলেন সন্ন্যাসীর মত, কৃচ্ছতা সাধন করতেন। পরিস্থিতি বাধ্য করত। পরবর্তীতে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে সহযোগিতা পেয়ে এদের মধ্যেও ভোগের মানসিকতা জন্ম নেয় আর বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সেটা বৃদ্ধি পায়। সবকিছুর মত রাজনীতিও এখন ব্যবসা। অনেকের কাছে এটা জনসেবা নয়, নিজের আখের গোছানোর সোপান। ধার্মিকরা মৃত্যুর পরে স্বর্গ খোঁজে, বস্তুবাদীরা জীবিত কালেই স্বর্গসুখ পেতে চায়। যদিও সাধারণ কর্মীদের মধ্যে ত্যাগী মানুষের অভাব নেই তারপরেও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব এদের প্রায়ই বিপথে নিয়ে যায়। সব বদলায়। এদের অবস্থাও একদিন বদলাবে। আশা করি ভালোর দিকে। ১৯৮৩ থেকে রাশিয়ায় বসবাস করি বলে সমাজতন্ত্র আর পুঁজিবাদের চেহারা দেখার সুযোগ হয়েছে। সমাজতন্ত্রে খারাপ দিক কম ছিল না, কিন্তু ভালো প্রচুর ছিল। তাই আপেক্ষিক ভাবে অন্তত সাধারণ মানুষের জন্য সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমার কাছে তুলনামূলক ভালো বলে মনে হয়। তবে সব নির্ভর করে এক্সিকিউশনের উপর। আর কিছু লোক যারা সব সময়ই পরিবর্তন চায় তারা সব ব্যবস্থাতেই অসুখী থাকবে। কারণ তাদের মূল লক্ষ্য পরিবর্তন - ফল নয় তারা প্রক্রিয়াকেই উপভোগ করে।
দুবনা, ২০ নভেম্বর ২০২৪
দুবনা, ২০ নভেম্বর ২০২৪
Comments
Post a Comment