প্রশ্ন আর প্রশ্ন
খোলা চিঠি ও পরবর্তীতে মেঘনায় মৃতদেহ উদ্ধারের পরও অনেকেই সাংবাদিক ও কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকারের আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাহলে কি এটা হত্যা? হয়তো কেউ তাকে জীবিত অবস্থায় বা তার লাশ মেঘনার কালো জলে ফেলে দেয়নি কিন্তু সরকার এমন এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে যে তিনি বাধ্য হয়েছেন আত্মহনন করতে। আর বিভু দার পারিবারিক পদবী যেহেতু সরকার তাই সরকারের হাতে সরকারের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলেই প্রচার করা যায়। বিভু দার সুইসাইড নোট থেকে আরও জানতে পারি এই মৃত্যুর শুরু আজ নয়, এর শুরু দীর্ঘদিন আগে যখন থেকে দল দেশের ঊর্ধ্বে উঠে এসেছে, দলীয় স্বার্থ দেশপ্রেমকে হার মানিয়েছে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি যে দল থেকে ব্যক্তি খুব বেশি দূরে নয়। বুঝতে পারিনি যে দেশপ্রেমের ভিত্তি যদি হয় আদর্শ তবে দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থ আদর্শ বর্জিত। তাই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে সাথে এসব লোকজন ব্যাপক হারে দলবদল করে, করছে। এই যে এক সর্বগ্রাসী আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে কয়েক যুগ ধরে সেখানে দেশপ্রেম আসলে উল্টো স্রোত। এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশের সব সরকারই দায়ী। আমরা সত্যবাদী, সত্যসন্ধানী, দেশপ্রেমিক মানুষের জন্য একটি নিরাপদ দেশ, নিরাপদ সমাজ তৈরি করতে পারিনি। তাই যে নামেই ডাকি না কেন বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। সরকার বলি, সমাজ বলি, সাংবাদিক বলি, বুদ্ধিজীবী বলি - যাদের তাকে বাঁচিয়ে রাখার কথা ছিল, কেউই কথা রাখেনি। বরং তার খোলা চিঠি পড়ে মনে হয়েছে সবাই ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিভিন্ন সময় তার লেখা পড়ে এটুকুই বুঝেছি যে দেশটাই তার কাছে সবার উপরে ছিল, যতটুকু সম্ভব নিরপেক্ষ ভাবে মানুষকে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন একজন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে। এরকম লোক যেকোনো সমাজের বিবেকস্বরূপ আর সমাজের উচিৎ এদের বাঁচিয়ে রাখা। আমরা এখানে জাতি হিসেবে ব্যর্থ। ব্যর্থ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যারা তাদের এমন একজন মুখপাত্রকে বাঁচার জন্য ন্যুনতম মজুরি দিতে পারে না, দিতে পারে না নিরাপত্তা। এই মৃত্যু বিভু দার পরিবারের সামনে তো বটেই দেশের সামনেও অনেক অনিশ্চয়তা, অনেক প্রশ্ন রেখে গেল যার উত্তর না দিয়ে একটি সফল দেশ, সফল সমাজ গড়া অসম্ভব।
দুবনা, ২৩ আগস্ট ২০২৫
Comments
Post a Comment