শুভঙ্করের ফাঁকি

রবি বার।   আবহাওয়া তেমন ভালো নয়, বাইরে যাওয়ার তেমন কোনো ইচ্ছে নেই। গুলিয়া  বললো বাজারে যেতে, কিমা কিনতে হবে কাটলেটের জন্য।
- "ছেলে আমার" (сын мой) ডাকলাম সেবাকে।  আমি ওকে কখনো কখনো চার্চের পাদ্রীদের মত  এভাবে ডাকি।  "তুই কি আমার সাথে বাজারে যেতে চাস  না ?" (не хочешь ли ты со мной на рынок пойти?)
- "ভেবে দেখছি।"  (подумаю)
এর অর্থ হলো কিছু শর্ত  আরোপ করবে।  শেষমেষ  বললো ওর তুপি আর গ্লাভস দরকার।
- চল, রিও যাই।  যদি কিছু পাওয়া যায়।
রিও, এটা  বাসার পাশের সুপার মার্কেট।
পথে যেতে যেতে বললো, আমার টুপি আর গ্লাভস দেখতে খুব একটা খারাপ নয়।  তারপর এলো জুতার কথা।  বললো ওর বন্ধুরা যাবে শীতের জুতা কিনতে, মামা  ৫ হাজার রুবলে  যে জুতাটা নিতে বলছে সেটা একেবারে সেকেলে।  আমি যদি হাজার ৪ রুবল দেই,  ও বন্ধুদের সাথে গিয়ে পছন্দ মতো জুতা কিনতে পারে।  আমারও দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না, আর মাঝখান থেকে এক হাজার রুবেল বেঁচে যাবে।
- তা আমাকে বলিস কেন? মামাকে বল।
- না, মামা আমাকে টাকা দেবে না।
এলাম রিও।  টুপি আর গ্লাভসের দাম দেখে চোখ চড়কগাছ।  সপ্তাহ তিনেক আগে যখন বললাম এসব কিনতে, তখন কিনলো না, এখন নতুন মাল উঠেছে, দামও  তাই কয়েকগুন বেশী।
- চল খোলা বাজারে গিয়ে দেখি।
জানিই  তো এসব জিনিস মাত্র কয়েক দিনের জন্য।  প্রতি শীতে কয়েকটা টুপি  আর কয়েকজোড়া গ্লাভস লা পাত্তা হয়ে যায়। এই বাসে ভুলে আসে তো খেলার মাঠে।
খোলা বাজারে এসে প্রথমেই গেলাম মাংস কিনতে।  দাম হলো ৪৫৫ রুবল। ৫০০ রুবল দেয়াতে দোকানদার বললো ৫ রুবল আছে কিনা? সেভা  ৫ রুবল বের করে দিয়ে ৫০ রুবল নিয়ে নিলো।  এটাকে বলে মার্কেট ইকোনোমি, "সঙ্গে চাই? ফেল পয়সা।"
এর পর আরো টুকিটাকি জিনিষপত্র  কিনে গেলাম সেভার  জন্য টুপি  আর গ্লাভস দেখতে। পছন্দ হলো  না।
কি আর করা, বললাম আমার টুপি  আর গ্লাভসজোড়া  ওকে  দিয়ে যাবো। ও দেখি খুব খুশী। আন্তন যখন লম্বায় আমার সমান হয়, ওর যন্ত্রনায় আমার জামা-কাপড় সব তালা দিয়ে রাখতে হতো।  যখন যেটা হাতের সামনে পেত পরে চলে যেত। অনেক সময় অফিসে যাবার জামা-কাপড় খুঁজে পেতাম না। সেভার  এখন সেই সময়।  অবশ্য আলাদা থাকার ফলে নিজে নিজে নিতে পারে না, তবে এর মধ্যেই কয়েকটা সয়েটার, শার্ট,  টিশার্ট আর জুতা বেদখল হয়ে গেছে।  এখন অপেক্ষা করতে হবে কবে ও আমাকে ছাড়িয়ে যাবে তার।
ফিরছি বাসায়, হঠাৎ সেভা  বললো একটা অংক  কষতে সাহায্য করতে।
- বল।
- আমি তোমার কাছ থেকে ১০০ রুবল ধার নিলাম।
- আমি ধার দেই  না।
- ধর ধার দিলে।
- ধরলাম।
- দোকানে গিয়ে টাকাটা হারিয়ে ফেললাম।
- খুব খারাপ।
- এটাতো কথার কথা।
- ঠিক আছে। তারপর?
- মামার কাছ থেকে আবার ৫০ রুবল ধার নিলাম।
- মামার টাকা নেই, ওটা মামা আমার পকেট থেকেই দেবে।
- তুমি চুপ করবে?
- করলাম।
- ২০ রুবেল দিয়ে ২ টা  চকলেট কিনলাম।
- তুই একই খাবি, না আমাকে একটা দিবি?
- ওটাতো কেনার জন্য কেনা, কথার  কথা।
- ঠিক আছে। তারপর?
- ঐযে ৩০ রুবল  দোকানদার ফেরত দিলো সেটা তোমাকে দিলাম।
- তাই? তা কই  সেই ৩০ টাকা?
- ওটাও তো ধরে নিতে হবে।
- ধরলাম।  তা সমস্যাটা কোথায়?
- দেখো আমি তোমার কাছ থেকে নিলাম ১০০ রুবল, মামার কাছ থেকে ৫০।  মোট ১৫০ রুবল।  ৩০ রুবল তোমাকে দেবার পর তোমার কাছে ধার রইলো ৭০ রুবল আর মামার কাছে ৫০, মোট ১২০। আর চকলেট দুটো ২০ রুবল। তাহলে দাঁড়ালো গিয়ে ১২০ আর ২০ মানে ১৪০। বাকি ১০ রুবল  কোথায় গেলো?
এর মধ্যেই আমরা বাসার কাছাকাছি চলে এলাম।  ও গেলো বন্ধুদের সাথে খেলতে।  আর আমি মনে মনে বললাম, একেই বলে শুভঙ্করের ফাঁকি।

বিঃ  দ্রঃ  দিদি প্রায়ই বলে ওদের বাংলা শেখাইনা কেন। ওরা  বাংলা জানলে ওদের নিয়ে এসব গল্প লেখা হতো না। এটাও এক প্রকার শোষণ।  ঐযে সরকার জনতাকে অশিক্ষিত রাখে বা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে।  কারণটাও ওই।  তাতে শোষণ করতে বা জনগণকে ফাঁকি দিতে সহজ হয়।

দুবনা, ০২ নভেম্বর ২০১৬




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা