রবীন্দ্রনাথঃ পক্ষে বিপক্ষে

কয়েক দিন আগে শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্র সঙ্গীত বিকৃত করে গাইতে দেখলাম একদল লোককে। এ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন, করছেন। একজন রবীন্দ্র প্রেমী হিসেবে আমার নিজেরও এটা ভালো লাগেনি। তবে এটা ঠিক রবীন্দ্রনাথ তার জীবদ্দশাতেও সমালচনার সম্মুখীন হয়েছেন, এখনও হচ্ছেন। আবার একই ভাবে সাহিত্যপ্রেমী এক বিশাল জনগোষ্ঠী দ্বারা পূজিতও হচ্ছেন। বলা দরকার, রবীন্দ্রনাথের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গি শুধু শান্তি নিকেতনে মিছিল করা কিছু তরুন তরুনীই নয়, নীরদ সি চৌধুরী, নচিকেতা বা অন্য অনেক নামী দামি লোকেরাও পোষণ করতেন বা করেন। ভালো লাগুক আর নাই লাগুক, রবীন্দ্র ভক্তির পাশাপাশি এই রবীন্দ্র বিরোধিতাই রবীন্দ্রনাথকে প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে, ভবিষ্যতেও রাখবে। আমার কেন যেন মনে হয় এখানেই রবীন্দ্রনাথ অনন্য। পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলামের কথা ভাবা যাক। যৌবনে তিনি কম সমালোচিত হননি, বিশেষ করে মোল্লাদের দ্বারা। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় কবি হবার পর থেকেই হয় তাঁর সম্পর্কে ভালো বলতে হয়, নয়ত কিছুই নয়। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যে সমালোচনা হয়, তার ছিটেফোঁটা যদি নজরুল ইসলামকে নিয়ে করা হত, তাহলে সমালোচনাকারী হয় দেশদ্রোহী হত, নয়তো সাম্প্রদায়িক। এর ফলে নজরুল ইসলামের যতটা প্রাসঙ্গিক থাকার কথা ছিল ততটা তিনি থাকতে পারছেন না। অনেক কিছুর সাথে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টাই কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছিল পূর্ব বাংলায়, তাঁর "আমার সোনার বাংলা" গান অন্তরে ধারণ করেই বাংলার মানুষ দেশটাকে স্বাধীন করেছিল। তাই রবীন্দ্রনাথের এসব সমালোচনাকে শুধুমাত্র নেগেটিভ দিক থেকে না দেখে সেটাকে কিভাবে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতাকে ধরে রাখার কাজে ব্যবহার করা যায় সেদিকে নজর দেওয়াটাই আজ জরুরী।

দুবনা, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ 
 
 
 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি