দিনের জন্ম

দু' দিন আগে আরও একটা জন্মদিনের শেষ যাত্রা সম্পন্ন হল। যারা শুভেচ্ছা-টুভেচ্ছা, ভালোবাসা-টালোবাসা জানিয়ে সেই যাত্রাপথকে কণ্টক মুক্ত করেছেন তাদের জন্য ধন্যবাদের ব্ল্যাঙ্ক চেক পাঠাচ্ছি। জন্মদিন এক অবাক করা দিন। কিছু না করেও অনেকের দৃষ্টিগোচরে আসা যায়। ছোট বেলায় জন্মদিনের অপেক্ষা করতাম। ওই দিন সকালে মটর শাঁক তুলে আনতাম ক্ষেত থেকে। মনে হয় আমাদের অনেক জমির একটাতে মটর চাষ করা হত এজন্যেই। সাথে থাকতো খিচুড়ি। এ দুটো ছিল বাধ্যতামূলক। মিষ্টি বা অন্য কিছু - এসব আনুষঙ্গিক। বাড়ির সবার বন্ধুরাই আসত এদিন সান্ধ্য ভোজে। এখনও বাড়িতে এই দিন খিচুড়ি আর মটর শাঁকের রেওয়াজটা চালু আছে।
ইউনিভার্সিটি লাইফে সাধারণত রাশান বন্ধুরা আসত, আসত খুব ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ। একই দিনে আরও গোটা দুই জন্মদিন ছিল সাত আর দশ নম্বরে। আমাদের দু নম্বর ব্লক সে তুলনায় ছিল পাণ্ডব বর্জিত এলাকা। তাই লোক সমাগম কম হত। তাছাড়া আমি নিজেও কখনই তেমন সামাজিক ছিলাম না, সেটাও একটা কারণ। একবার এক বন্ধুর সাথে একসাথে জন্মদিন পালন করলাম। বেশ আনন্দ করেছিলাম, তবে দেখা গেল আমাদের কমন বন্ধু কিছু থাকলেও ওর অনেক বন্ধুই আমার বন্ধু তো নয়ই, বরং শত্রুভাবাপন্ন। ফলে ওরা পড়ল বিপদে। শুভেচ্ছা জানানো আর না জানানোর ডিলেমায় রাজা হরিশ চন্দ্রের মত স্বর্গ আর নরকের মাঝে ঝুলতে লাগলো।
বাচ্ছাদের ছোটবেলায় এটা ছিল একসাথে সময় কাটানোর, অন্য দিনের চেয়ে একটু ভালো খাওয়ার (নব্বইয়ের শেষ আর নতুন শতকের শুরুর ওই দিনগুলো আমাদের মত চাকরিজীবীদের কোন মতে খেয়ে বেঁচে থাকাটাই ছিল বিশাল আনন্দের ব্যাপার)। কিছু দিন আগে ওরা সবাই যখন মস্কো থাকতো, ছুটির দিন হলে মস্কোয় সবাই জড়ো হতাম। এখন সবাই যে যার মত। বাচ্চারা মস্কোয় কেক কাটে, বাড়িতে দিদি খিচুড়ি আর শাঁক রান্না করে আর দুবনায় আমি কাজের শেষে বাড়ি ফিরি বৌয়ের প্রিয় কেক নিয়ে।
সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে আজকাল জন্মদিনের খবর ঘরের সীমানা ছাড়িয়ে দূর দুরান্তে চলে যায়। পরিচিত, অপরিচিত অনেক মানুষের শুভ কামনায় মন ভরে যায়। এখনও আমার ছাত্র জীবনের রুম মেট ইয়েভগেনি আমাকে মেইল করে, ঠিক যেমনটা আমিও করি। মেইল করে ফিওদর আলমা আতা থেকে। সব সময়ই আমরা কিছু কিছু মানুষের শুভেচ্ছার অপেক্ষা করি। সব যে পাই, তা নয়।
তারপর এক সময় অন্য দশটা দিনের মত জন্মদিনটাও মরে ভূত হয়ে যায়। শুরু হয় নতুন দিন, নতুন করে পথ চলা। আর দশটা দিনের মত হলেও জন্মদিনের মজাটাই এখানে। কোন অজুহাত ছাড়াই যে কাউকে হাই বলা যায়।
সবাইকে ভালবাসা।

দুবনা, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ 
 
 
 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি