বালি আর বরফের গল্প
ভোলগা আমার সব সময়ের প্রিয় নদী। এমন কি এ দেশে আসার অনেক আগে থেকেই রুশ সাহিত্য, বিশেষ করে মাক্সিম গোর্কির লেখা পড়ে ভোলগাকে ভালবেসে ফেলেছি। সামারে ভোলগার তীরে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাই কালিগঙ্গায়। ভোলগা যেমন দুবনাকে দুভাগে বিভক্ত করেছে ঠিক তেমনি করেই কালিগঙ্গাও আমাদের তরাকে দু ভাগে ভাগ করেছে। তাই বিকেলে যখন ওখানটায় যাই, মনে হয় এইতো কালিগঙ্গার তীর ধরেই হাঁটছি। শীতে অবশ্য অন্য কথা। ভোলগা তখন ঢেকে যায় বরফে, কোন কোন বছর বরফের স্তর এতটাই পুরু হয় যে হেঁটে নদীর ওপাড় চলে যাওয়া যায়। অনেকে যায়ও। আমি অনেকটা দূর গেলেও নদী পাড় হইনি কখনও। শীতে পায়ের নীচে বরফ কচ কচ শব্দ করে আর্তনাদ করে। ঠিক এমনটাই করে তরার চরের বালি। আমাদের ছোটবেলায় কালিগঙ্গা ছিল স্বাস্থ্যবতী। প্রায় ৭০০ মিটার চওড়া বেডে শুয়ে শুয়ে সময় কাটাত। বর্ষায় ভরা যৌবনা আর শীত বসন্তে ক্ষীনকায়া। শীতে আর বসন্তে জলের ধারা চলে যেত উত্তরে। প্রায় ৬০০ মিটার বালুর চর পেরিয়ে আমাদের যেতে হত নদীর জলে স্নান করতে। লোকজন সাথে করে কলসি ভরে জল নিয়ে যেত চৈত্রের গরম বালি থেকে পা বাঁচাতে। আমাদের ধারণা ছিল তখন কিছু সময় বালিতে ধান রাখলে সেটা নিশ্চিত খই হয়ে যেত। আমরা ছোটরা ব্যবহার করতাম নারকেলের খোলা। ওতে সুতা ঢুকিয়ে দিতাম আর পায়ের বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনীর মাঝ দিয়ে সেই সুতা উঠে আসত আমাদের হাতে। তৈরি হত খড়ম যা স্যান্ডেলের মত বালিতে ঢুকে যেত না আর আমরাও গরম এড়িয়ে চর পাড়ি দিতাম। অনেক সময় বাঁশ দিয়ে তৈরি করতাম রণপা। এখন যখনই শীতের বরফের উপর দিয়ে হাঁটি, বিশেষ করে ভোলগার তীরে, মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া সেইসব দিনগুলোর কথা। ছোটবেলার বন্ধুরা ভিড় করে মনে আয়নায়। মাঝে মাঝে শরীর খারাপের এটা একটা পজিটিভ দিক। স্লো মোশনে ফেলে আসা দিনগুলোর সাদাকালো আবার কখনও বা রঙ্গিন চলচিত্র দেখা যায়।
দুবনা, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০
Comments
Post a Comment