প্রশ্ন?

ইরানের ভেতরে ইসরাইল যেভাবে নিজেদের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে তাতে আবারও প্রমাণিত হয় সেখান সরকার বিরোধী শক্তি যথেষ্ট শক্তিশালী। ইরানের শাসনব্যবস্থা যে পরিবর্তিত হওয়া উচিত এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেখানে সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান চর্চা এগিয়ে গেলেও ধর্মীয় শাসন মানবাধিকারের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক। আধুনিক বিশ্বে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু কথা হল এই অবস্থা থেকে মু্ক্তির উপায় কি? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের সহযোগিতায় মুক্তি আসে না, আসে পরাধীনতা। এদের হাতে ইরান ইসলামী শাসন থেকে মুক্তি পেলেও নব্য ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে রক্ষা পাবে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যাবে। আর মুক্তি যদি পায় তাহলে ইরান তার বর্তমান ভৌগলিক সীমারেখা রক্ষা করতে পারবে নাকি বহুজাতিক এই অঞ্চলে একাধিক নতুন দেশ জন্ম নেবে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মহাবিশ্বে এন্ট্রোপি শুধু বাড়তেই পারে তাই কোন দেশে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা যে সার্বিক ভাবে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি করবে না সে গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। আসলে ইরানের উপর আক্রমণ শুধু ইরানকে শিক্ষা দেবার জন্য নয় ইউনিপোলার বিশ্ব ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য আমেরিকার মরণ কামড়। ব্রিকসের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ যদিও ব্রিকস সামরিক জোট নয়। ইরানের সাথে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর যেমন ভারতের। দুই দেশই ইরানের তেলের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইসরাইলের সাথে বিশেষ সম্পর্কের কারণে ভারত চেষ্টা করেছে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। এখন? রাশিয়ার সাথেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই এই যুদ্ধের ফলাফল যে বিশ্ব রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে সেটা বলাই বাহুল্য। তবে যারা নিজ নিজ দেশকে সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় তাদের জন্য ইরানে আমেরিকার আক্রমণ শেষ পর্যন্ত সুখের হবে বলে মনে হয় না।

বি:দ্র: ২২ জুন ১৯৪১ ভোর ৪.৩০ মিনিটে যুদ্ধ ঘোষণা না করে হিটলারের জার্মানি রাশিয়া আক্রমণ করেছিল। ২২ জুন ২০২৫ ভোর ২.৩০ আমেরিকার এই আকস্মিক ও অঘোষিত আক্রমণ কি কাকতালীয়?

মস্কোর পথে, ২২ জুন ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্ন

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

নেতা