গলা

আমি কখনোই না সাদ্দাম হোসেনের, না মুয়াম্মার গাদ্দাফীর, না বাশার আল আসাদের, না শেখ হাসিনার - কারো ফ্যান ছিলাম না। বরং বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেছি। অনেকেই ইরান আর ইসরাইলের যুদ্ধে ইরানের মোল্লাতন্ত্রের পতনের আভাস পেয়ে উচ্ছ্বসিত। আমি উল্টো ভীত। না, এ জন্যে নয় যে আমি এই মোলাতন্ত্রের সমর্থক। কিন্তু ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় আমারও সেই অবস্থা। সাদ্দামের পতনে অনেককেই খুশি হতে দেখেছি এক অত্যাচারী বিদায় নিল বলে। কিন্তু অত্যাচারীর সাথে সাথে কি অত্যাচার বিদায় নিয়েছে? নেয়নি। বরং ইসলামিক স্টেটের মত আরও ভয়ঙ্কর অত্যাচারী জন্ম নিয়েছে। গাদ্দাফীর বিদায়ে কি সেদেশের মানুষের অবস্থার এতটুকু উন্নতি ঘটেছে? মনে হয় না। বরং দেশটি আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। একই অবস্থা সিরিয়ায়। আফগানিস্তানের কথা বাদই দিলাম। আমাদের দেশের দিকেই তাকালে কি দেখব? আবার সেই স্বৈরাচার। আগে ছিল এক জনের এখন একদল মানুষের। মবের স্বৈরাচার কিন্তু সর্বহারার একনায়কত্ব নয়। বর্তমানের শাসকদের দেশের প্রতি সামান্যতম মায়া আছে বলে মনে হয় না। এরা দেশের ইতিহাসের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধ বলে মনে করে না। যদি আগে তবুও দুই একজন জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়া ছিল, এখন সবাই মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া।

মনে রাখবেন কী ইসরাইল, কী পশ্চিমা বিশ্ব - কেউ আমার আপনার সমস্যা সমাধান করতে আসে না, আসে নিজেদের স্বার্থে। তাদের কাছে আমরা শুধুই সংখ্যা। এমনকি উপনিবেশ আমলে আমাদের প্রতি তাদের যে দায়বদ্ধতা ছিল এখন সেটাও নেই। সাদ্দাম, গাদ্দাফী, আসাদ, হাসিনা - এরা স্বৈরাচারী বলে পশ্চিমা বিশ্বের চক্ষুশূল ছিল না, তাদের বড় দোষ ছিল তারা এসব বড় ভাইদের চোখে চোখ রেখে না বলতে পারত। ইরানেরও সেই একই সমস্যা। সৌদি শাসন কি এর চেয়ে ভালো ছিল? অন্তত কয়েক বছর আগে? তারপরেও কিন্তু কারো কোন সমস্যা হয়নি। সে সমস্যার সমাধান মনে হয় আমেরিকা অনেক আগেই দিয়েছে - ও কুত্তার বাচ্চা বটে তবে আমাদের কুত্তার বাচ্চা। ইরানের মোল্লাতন্ত্রের পতন ঘটলে তাই না আমার, না আপনার, না সে দেশের মানুষের - কারো ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না, কিন্তু বিশ্ব শোষকের হাত শক্তিশালী হবে যে হাত দিয়ে খুব শীঘ্রই তার আরও কোন স্বাধীনচেতা মানুষের গলা টিপে ধরবে। ভয়ের কিছু নেই। সেই গলাটা আপনার নয়। সেই আনন্দেই থাকুন।

দুবনা, ১৮ জুন ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

প্রশ্ন

রিংকু