চলে গেলেন বিশুদা কাকু

বিশু কাকু চলে গেলেন| চলে গেলেন না ফেরার দেশে| আমাদের পরিচয় তেমন বেশী দিনের নয়| যদিও নাম শুনেছি অনেক আগে, আর পরিচয় হয় হয় করেও অল্পের জন্য হয়ে ওঠেনি| আর ওই আলাপটা হবার কথা ছিলো দ্বিজেন কাকুর বাসায়|
আসলে দ্বিজেন কাকুর সাথেও আলাপ আমার অনেক পরে, মানে ঘনিষ্টতা| যদিও প্রথম পরিচয় স্কুলজীবনে| ঠিক মনে নেই কোন ক্লাসে তখন পড়ি, তবে এইট বা নাইন হবে, যখন পড়ি কাকুর লেখা চার্লস ডারুইন এর  জীবনী| তখনই মনে মনে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার সাথে| ১৯৮২ সালে আবু জাফর শামসুদ্দিন এর মস্কোর উপর লেখাটা পড়ে জানতে পারি উনি মস্কো থাকেন| তখন থেকেই আমার মস্কো আসার কথা চলছিলো, তাই ভাবলাম গেলেই দেখা করবো| তা আর হয়ে ওঠেনি| আমরা আসার কিছু দিন পরে শুভর মা এলেন কিউবা থেকে – অনেকেই গেল দেখা করতে, আমি যাই নি , পাছে ওনাকে দেখে দেশে মার কথা মনে পরে মন খারাপ হয়| দ্বিজেনদার সাথে দেখা হয় আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে| তখন দাদা বলাটাই নিয়ম ছিলো, কমরেড ছিলাম কিনা| অনেক বার ই বলেছেন বেড়াতে যেতে, যাই নি| তাছাড়া যে কারণে যেতে পারতাম, মানে গল্পের বই আনতে, সেটা সুস্মি ই করতো| আর ও যখন চলে গেলো ১৯৯১ তে, তার পর থেকে ধীরে ধীরে যেতে শুরু করি ওনাদের বাসায়| কত কথাই না হত, বই নিয়ে, লেখকদের নিয়ে আরো কত কি| এ সময় থেকেই দ্বিজেন দা হয়ে গেলেন দ্বিজেন কাকু, আর তার বন্ধুরা, মানে অরুনদা আর বিশুদা যথাক্রমে অরুণ কাকু আর বিশু কাকু| আর যেহেতু বিশু কাকু প্রায়ই ওখানে যেতেন – সম্ভাবনা ছিলো দেখা হবার| হয় নি| হয় আমি দ্বিজেন্কাকুর বাসায় আসার একটু আগে উনি চলে যেতেন অথবা আমি বেরুনোর একটু পরে উনি আসতেন|
এর পর কাকু চলে গেলেন দেশে  আর আমি দুবনা| বিশু কাকুর সাথে প্রথম দেখা ২০১০ সালে দূর্গা পূজার অনুষ্ঠানে| রিঙ্কু আলাপ্ করিয়ে দিলো| একটু কথা বলেই বুঝলাম আমরা একে অন্যের পরিচিত, মানে অনেক শুনেছি একে অন্যের সম্পর্কে, মুখোমুখি আলাপ টাই শুধু হয় নি| তাই খুব দেরী হলনা বন্ধুত্ব হতে| এর পরে কযেকবার দেখা – কখনো পূজায়, কখনো আমাদের এম্বাসীর কোনো অনুষ্ঠানে, বা বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ, রাশিয়ার প্রোগ্রামে| অনেক বার ই বলেছেন দুবনা আসবেন বেড়াতে – আমাকেউ অনেক বার বলেছেন বাসায় যেতে - হয় নি – তবে ফোনে কথা হত| শেষ দেখা গত বছর যখন দ্বিজেন কাকু এসেছিলেন মস্কো| এইতো কদিন আগে পূজা গেলো – উনি ছিলেন না| রথীন দা  বললেন শরীরটা তেমন ভালো নেই| তবে এতযে খারাপ ধারণা ছিলো না| তাই গতকাল অমল যখন বললো কাকু নেই – বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো – বার বার ভেসে উঠছিলো কাকুর মুখ| এখানে সব সময় ই বলে অকালে মারা গেলেন – কিন্তু আমি ভেবে পাই না মৃত্যুর কোনো কাল আছে কিনা| লাইফ এর শুধু লাইফ গ্যারান্টি আছে, মানে যতদিন বাচবে ততদিনের ই গ্যারান্টি – ভাগ্যিস এটা কোনো বিজনেস প্রজেক্ট নয়, তাহলে সৃষ্টি কর্তার বিজনেস এর বারটা বাজতো সেই কবে| 
কাকু চলে যাওয়ায় আমরা সবাই কেমন যেন গার্ডিয়ান হীন হয়ে গেলাম| না গার্ডিয়ান আমাদের দরকার কেউ আমাদের গাইড করুক সে জন্যে না, শুধু একটু জানার জন্যে, উনি  আছে, যার কাছে গিয়ে মন খুলে কথা বলা যাবে, পাওয়া যাবে জীবনের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট কিছু উপদেশ|
ভালো থাকবেন কাকু| দুবনা, ১৮ই নভেম্বর, ২০১৩  

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

রাজনীতি

স্মৃতি