রাজকাহিনী

আজকাল সিনেমা তেমন একটা দেখা হয় না। সময় করে উঠতে পারি না। তারপরেও গতকাল অনেক রাত জেগে রাজকাহিনী দেখলাম। অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল, শেষ পর্যন্ত দেখা হল। তবে ট্রেইলার দেখে আশাটা ছিল অনেক বেশি। ভেবেছিলাম এটা হবে পার্টিশনের উপরে একটা ঐতিহাসিক বই, তবে এখানে ওরা বলেছে সাধারন মানুষের ইতিহাস, তাদের জীবনের গল্প, দুই বন্ধুর গল্প যাদের বন্ধুত্ব খুব গভীর হলেও শত্রু শত্রু খেলতে হচ্ছে। আর কিছু লোকের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের বলী হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ – তখন হয়েছে, এখনও হচ্ছে। না, আমি বর্তমানে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাইনা। জিন্নাহ ভেবেছিল ভারত ভাঙ্গার মানে পার্টিশনের মধ্যে দিয়ে হিন্দু-মুসলমান বিরোধীতার শেষ হবে, বাস্তবে পার্টিশনের মধ্য দিয়ে ঐ বিরোধীতা শুরু হয়েছে নতুন মাত্রায় – দুই সম্প্রদায়ের ঝগড়া পরিনত হয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের পারস্পারিক যুদ্ধে। তবে গতরাতে ছবিটা দেখে আমি অন্য একটা কথা ভাবলাম, জানিনা এটা কতটুকু যৌক্তিক, তবুও লেখার খাতিরে লিখছি। জানি, যদি না ভারত ভাগ হত, আজ বাংলাদেশ হতো না। আজ বাংলা ভাষা বিশ্বের দরবারে যে আসনে বসেছে, সেটা হয়ত হতো না। হ্যা, স্বাধীন দেশের অনেক সুযোগ সুবিধা থেকেই বঞ্চিত হতাম আমরা। তারপরও ...
এই যে পরস্পরের বিরোধীতা মোকাবিলায় দেশগুলো এত অর্থ ব্যয় করছে, সেটা অন্য কোন গঠনমূলক খাতে ব্যয় করা যেত। কিন্তু যেটা আমার বেশি করে মনে হয়, অবিভক্ত ভারতের যে শক্তি, যে আন্তর্জাতিক মর্যাদা থাকতো, আর যেহেতু অবিভক্ত ভারত হত সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ, হয়তো বা সেটা হতো মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দেশ, যেমন তুরস্ক। আর তাতে করে আজ আরব বিশ্বে এই যে একের পর এক যুদ্ধ, হাহাহানি – তা হয়তো থাকতো না। হয়তো-বা ইসলামী বিশ্বের অনেক সমস্যাই আজ সৃষ্টি হতো না। তবে ইতিহাস হয়তো, কিন্তু এসব মেনে চলে না। ইতিহাস চলে নিজের গতিতে, লিখে রাজাদের গল্প। আর আমরা জারা সাধারন মানুষ, তারা কাঁচা মাল – যাদের রক্তমাংস ইট পাটকেলের মত ব্যাবহার করা হয় বর বড় মানুষের দালানকোঠা তৈরীর জন্য, বড় বড় মানুষদের সাফল্যের ইতিহাস লেখার জন্য।


দুবনা, ১১ জানুয়ারী ২০১৭ 


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা