বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক или как বামেরা налево ходят

সকালে ফেসবুক খুলে দেখি ঝড় উঠেছে, আলোচনা- সমালোচনার ঝড়। যেহেতু আমার টাইম লাইনে হাতে গোনা কিছু মানুষের লেখা আসে, তাই ঠিক কি যে ঘটেছে, তা বোঝার উপায় ছিল না। লিপির স্ট্যাটাসে দেখলাম
... সারাজীবন বিত্ত-বৈভবের মধ্যে বড় হয়ে, ক্ষুধা কী জিনিস, দারিদ্র্য কী জিনিস, তা না বুঝেই প্রলেতারিয়েতের আন্দোলন (সাম্যবাদের) করেছেন... যদিও জানি না, সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তার কতোটুকু জায়গা ছেড়ে দিতেন....যাই হোক, এখন শেষ বয়সে মনে হয়েছে জীবনটা বৃথাই গেল, যে কয়টা দিন আছে একটু আল্লাহকে ডাকবেন। এতে দোষের কী আছে? ভাইলোগ, আপনারা কেন যে এতো কথা বলেন!
বুঝলাম বাম আকাশে কালো মেঘ জমেছে, হয়তো-বা টর্নেডোর তাণ্ডবও ঘটে গেছে। এখন সেই মস্কোও নেই, সেই কমরেডরাও নেই। তাই খবরের অপেক্ষায় বসে থাকা ছাড়া উপায় নাই। কিন্তু মনতো রোবট নয়, বসে থাকতে পারে না। তাই নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হয় দুঃসংবাদ গেলার জন্য। তাই আবার মনে মনে সেই দাঁড়ি-গোঁফওয়ালা চুটকিটা বলি নিজেকে।
এক শ্বেতাঙ্গ মহিলার বন্ধুত্ব কৃষ্ণাঙ্গ এক ছেলের সাথে। যখন বিয়ের কথা ভাবছে, তখনই মনমালিন্য, বিচ্ছেদ আর ওই ছেলের চলে যাওয়া। কয়েকদিন মন খারাপ করার পর মেয়েটি এবার বন্ধুত্ব করল এক শ্বেতাঙ্গ ছেলের সাথে, বিয়েও বসলো কয়েকদিনের মধ্যেই। কিছুদিন পরে মেয়েটি টের পেল সে গর্ভবতী, কিন্তু ঠিক কে যে সন্তানের পিতা – তার পুরানো কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধু না তার শ্বেতাঙ্গ বর, সে সম্পর্কে কোন সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারল না। আর সন্তান প্রসবের দিন যতই এগুলো সে ততই চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লো। কিন্তু কি করা? একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তার সে কি কাপুনি?
“কি হয়েছে?” – জিজ্ঞেস করল তার বর।
“খুব বাজে এক স্বপ্ন দেখেছি, প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে।“
“কি স্বপ্ন?”
“দেখলাম আমার সন্তান হয়েছে আর সে কুচকুচে কালো।“
“যতসব বাজে কথা। এ নিয়ে ভাবতে আছে?”
“শুধু তাই নয়, ওর একটা নয়, দু’ দুটি মাথা।“
ছেলেটা বৌকে সান্ত্বনা দিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে বলল।
এক সময় মেয়েটি সন্তান প্রসব করল। ওর বর ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে হাসপাতালে গেল ওকে দেখতে। সিস্টাররা ছেলেটাকে অভিনন্দন জানালো।
“কেমন হয়েছে বাচ্চাটা দেখতে?” জিজ্ঞেস করল ও সিস্টারকে।
“প্রচণ্ড সুন্দর।“ উত্তর দিল সিস্টার।
“বাচ্চার গায়ের রঙ কি?” ও আবার জিজ্ঞেস করল সিস্টারকে।
“কাল কুচকুচে।“
একটু দমে গেল ছেলেটা। তবুও সাহস করে আবার জিজ্ঞেস করল
“কয়টা মাথা বাচ্চার?”
“একটা।”
“যাক বাঁচা গেল।” এই বলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বেচারা বর।

আমিও ওভাবেই মনে মনে হাজারো খারাপ চিন্তা করতে লাগলাম, যাতে আসল খবরটা তেমন কাবু করতে না পারে। এর পরে রাজনের বার্তায় আর শরফুদ্দিন ভাইএর শেয়ার করা ফাহমি ইলা নামে একজনের  স্ট্যাটাস থেকে জানলাম
অফিসে বসে পুঁজিবাদী গ্রীন টি-তে চুমুক দিতে দিতে কমিউনিস্ট নেতা মনজুরুল আহসানের পবিত্র মুখখানা দেখছি।
আহা, দেশে আরেকজন এলেমদার মানুষ বাড়লো!
একটা প্রশ্ন করতে চাই কমিউনিস্ট কিংবা কমিউনিজমে স্বপ্নচারীদের- হজ্ব থেকে ফিরবার পর কি তিনি কমিউনিস্ট নেতাই থাকবেন? আই মিন বলতে চাইছিলাম আপনারা কি তাকে কমিউনিস্ট বলেই ডাকবেন কি না। না ডাকলে কি ডাকবেন?
দিনশেষে যদি ভাববাদের উষ্ণ কম্বলের নিচেই যাবেন কমরেড, তাহলে সারাজীবন বস্তুবাদের কাঁথা সেলাইয়ের কি দরকার ছিলো?

এতক্ষনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে। যাকগে কি আর করা? ভাবলাম হয়তো কেউ ভুল করে মস্কোর বদলে মক্কার টিকেট কিনে দিয়েছে। কিন্তু? আচ্ছা, সিপিবির অফিসে গেলেই যারা এক সময় দলত্যাগ করে অন্য দলে, বিশেষ করে আওয়ামীলীগ আর গন ফোরামে যোগ দিয়েছে, তাদের বিলোপবাদী, সংস্কারপন্থী কত নামেই না ডাকতে শুনি। মঞ্জু ভাইকে এখন কি নামে ডাকা হবে? মনে পড়লো বিভিন্ন সময়ে মস্কোতে তার সাথে আড্ডা দেবার কথা। শেষ এলেন মাত্র বছর দুই আগে, রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে। মনে হল, “আচ্ছা মক্কা গিয়ে উনি নিশ্চয়ই অনেক নতুন বন্ধু পাবেন, কিন্তু তার চেয়ে বেশি পুরানো বন্ধু হারাবেন, তাই নয় কি? এই বয়েসে এটা না করলেও পারতেন। তাহলে শত্রু-মিত্র সবার কাছেই মাথা উঁচু করে থাকতে পারতেন শেষ দিন পর্যন্ত।“
“না না, এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো চলবে না। এর ভেতরেও পজিটিভ খুজতে ববে।“ মনকে বুঝালাম আমি।
আচ্ছা এমন কি হতে পারে না যে কয়েকদিন পর মক্কা আর মদিনায় সিপিবির মক্কা কমিটি আর মদিনা কমিটি গঠিত হবে?    

“খুব বেশি আশা করছি।” সন্দেহ প্রকাশ করল মন।

আচ্ছা মঞ্জু ভাই তো স্বর্গের ভিসার জন্যও মক্কা যেতে পারেন। এই যে আপনারা যারা কমরেড কমরেড খেলেন, আপনারা পৃথিবীতে তো করছেনই, নরকে গিয়েও বিপ্লব করতে পারবেন। আমরাও পাশে থাকবো। কিন্তু স্বর্গের অভাগাদের কি গতি হবে? মেনন সাহেব, ইনু সাহেব টিকেট করেছেন, সিপিবির হয়ে মঞ্জু ভাই যাবেন ওখানে বিপ্লব করতে। আমার তো মনে হয়, এখন সিপিবির কেন্দ্রীয় কিমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশি করে লোক মক্কা মদিনায় পাঠানো উচিত। যদি মক্কা মদিনায় সিপিবির শাখা খোলা নাও যায়, স্বর্গে একটা বিপ্লব ঠিকই ঘটানো যাবে।

বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।

দুবনা, ১৮ জানুয়ারী ২০১৭      



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা