ভাষা

সকালে বসে চা খাচ্ছি গুলিয়া, সেভা আর আমি। হঠাৎ বেডরুমে শুরু হোল কথোপকথন
-   ঘেউ
-   ঘেউ
-   ঘেউ ঘেউ
-   ঘেউহবচদস্নচশদ।মস্কঞ্চ দচ”ডশ্চকচদচ
রবিবার। প্রতিবেশীরা অনেকেই ঘুমে।
-   তুমি বলতে পার ওদের একটু চুপ করতে? – গুলিয়া আমাকে জিজ্ঞেস করল।
-   মহা ঝামেলা। কুকুরগুলো তোমাদের, আর ওদের ধমক দিতে হবে আমাকে।  
কি আর করা, বেডরুমে গিয়ে দেখি তুলকালাম কাণ্ড। কটিয়া (বিড়ালের নাম) বসে আছে জানালায়। আর টোটি, টেরি, ভারদিক, ইওলা, মিকি, লরি সবাই মিলে ওকে লেকচার দিচ্ছে। এমন কি আরেক বিড়াল রিসও কুকুরদের দলে যোগ দিয়েছে। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য।এতগুলো মাষ্টারের পাল্লায় পড়ে কটিয়া ভয়েই অস্থির।
-   মদশক্লদস্নচদস্কচদকঞ্চ কদঞ্চমচ মচলস্কদলচদকজলচ। - গম্ভীর স্বরে বললাম আমি।
চারিদিক নিস্তব্ধ। পিন ড্রপ সাইলেঞ্চ যাকে বলে।
ফিরে এলাম কিচেনে চা খেতে।
-   কি বললে তুমি ওদের? কোন ভাষায়? – বউ আমাকে একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করল।
দেশে গিয়ে আমি যখন কুকুর বিড়ালদের সাথে এভাবে কথা বলতাম, প্রথম প্রথম সবাই ভাবত আমি ওদের সাথে রাশিয়ান ভাষায় কথা বলছি। তা আমি বলি,      
-   বাড়ির বিড়াল কুকুর কি রাশিয়ান ভাষা জানে যে ওদের সাথে ঐ ভাষায় বলবো? আমি ওদের সাথে ওদের ভাষায় কথা বলছি।
এখানেও গুলিয়া আর বাচ্ছাদের আগে ধারনা ছিল, আমি নিশ্চয়ই বাংলায় কিছু বলছি। ইদানিং কালে বাড়িতে প্রায়ই ফোনে কথা বলি। তাই ওরা না বুঝলেও বাংলা ভাষাটা যে একটু ভিন্ন সেটা বুঝে গেছে। তাই গুলিয়ার ঐ প্রশ্ন। তাই ওকেও বলি
 - এটা কুকুর বিড়ালের ভাষা। দেখলে না, কেমন সব চুপ করে গেলো?
জানিনা, আমি যখন কুকুর বিড়ালদের এসব বলি, ওরা ডাগর ডাগর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, আর হয়তো ভাবে
-   ব্যাটার কি মাথা খারাপ হোল, যে  আমাদের সাথে কথা বলতে চাইছে?
তবে, কথার ভঙ্গীতে মনে হয় বুঝে এবার চুপ করতে হবে। আসল ব্যাপার হোল, যাদের বলছি, ওরা কথাটা বুঝছে কিনা। তাই ভাবছি, এখন থেকে সিভি তে বাংলা, ইংরেজি আর রাশিয়ান এই তিন্তে ভাষার সাথে সাথে কুকুর বিড়ালের ভাষাটাও যোগ করে দেব।     
কে জানে, পৃথিবীতে মনুষ্যত্বহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন এত বেড়ে যাচ্ছে যে সেটা একদিন কাজে লেগে যেতেও পারে।


মস্কো, ২২ জানুয়ারী ২০১৭ 


Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল

প্রশ্ন