অধিকার

ছোটবেলায় খুব ভালো লাগতো মায়ের মুখে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তে। সন্ধ্যায় ছিল রামায়ণ, মহাভারত ও দেবদেবীর গল্প। ঘুমানোর আগে অন্য কিছু। সেরকম একটি গল্পের নায়ক ছিল মৃত এক ব্যক্তি যার শবদেহ জল বা মাটি কেউই গ্রহণ করত না। জলে ফেললে ঢেউ তাকে মাটিতে তুলে দিত আর তখন প্রবল বাতাস তাকে উড়িয়ে জলে ফেলত। সেই গল্প শুনতে শুনতে ভয়ে কুঁকড়ে উঠতাম। অনেক দিন পরে সেই গল্প মনে পড়ল ফেসবুকে ঝর্ণা দাসদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সম্পর্কে অবগত হয়ে। জীবিত অবস্থায় বাংলাদেশ এদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারত যেতে বাধ্য করে কিন্তু ভারত তাদের গ্রহণ করে না, বাংলাদেশে ফিরে যেতে বাধ্য করতে গিয়ে হত্যা পর্যন্ত করে। পরে আবার বাংলাদেশেই ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ হয়। এক্ষেত্রে জীবিত ঝর্ণা দাসদের চেয়ে মৃত ঝর্ণা দাসরাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের জন্য অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত কারণ এতে করে মৌলবাদীরা যেমন আরও একজন বিধর্মীর মৃত্যুতে আনন্দিত হয়, প্রগতিশীলরাও তেমনি ভারত বিরোধী স্লোগানের অজুহাত পায়। মানুষ, মানুষের জীবন এখানে হিসেবের মধ্যেই আসে না। ফলে কী জীবিত, কী মৃত যেকোনো অবস্থায়ই ঝর্ণা দাসদের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। জীবিত অবস্থায় এরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার, মৃত অবস্থায় ট্রফি। শুধু এই মানুষগুলো নিজেরাই অবহেলিত। জীবন তুমি কার? এই জীবনগুলো বাংলাদেশের সম্পদ। তা রক্ষার দায়িত্ব এই দেশেরই। সীমান্ত হত্যার বিচার চাওয়ার পাশাপাশি এই হত্যার পেছনে নিজেদের দায়দায়িত্ব স্বীকার করা ও সেটা সংশোধন করা যেকোনো গণতান্ত্রিক সরকার ও রাজনৈতিক শক্তির অন্যতম প্রধান কাজ। তাই শুরু করতে হবে নিজেদের থেকেই। পারব কি? সময়ই সেটা বলতে পারবে। 

দুবনা, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

পরিমল

নেতা

শুভ নববর্ষ ১৪৩১