লক্ষ্য

গাণিতিক লজিক খুব মজার জিনিস। অনেক সময় অসম্ভবও সম্ভব হবার সম্ভাবনা থাকে এখানে। যেমন কাউকে প্রশ্ন করা হল যে ঘর থেকে বেরুলেই সে ডাইনোসরের দেখা পাবে সেই সম্ভাবনা কতটুকু। যদিও সে ১০০% নিশ্চিত যে এমন ঘটনা জীবনেও ঘটবে না তার পরেও সে বলবে ৫০/৫০ - কারণ সে হয় ডাইনোসরের দেখা পাবে না হয় দেখা পাবে না। এভাবে জীবনের অনেক কিছুই দেখা যায়। যেমন জীবনের লক্ষ্য। কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউ ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কিছু। একসময় সেটাই হয়। এখন এদের জীবনের আল্টিমেট গোল বা লক্ষ্য হল এই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। আবার জীবনের আল্টিমেট গোল মরে যাওয়াও হতে পারে কারণ একদিন সবাই সেখানেই পৌঁছে।

লীগ, বিএনপি, জামাত শিবির সবার লক্ষ্য ক্ষমতা। গণতন্ত্র, ধর্ম বা মানবাধিকার এসব ওটা অর্জনের ঘুম পাড়ানী গান। তবে দুই দলের পার্থক্য হল একদল চেতনা ধারণ করে যদিও আমি মনে করি তারা চেতনা বিক্রেতা, অন্যদল চেতনা বিরোধী, চেতনাকে সংক্রামক ব্যাধির মত ভয় পায়। তবে উভয় পক্ষই সমান ভাবে একটি ব্যাপারে সফল। তা হল মানুষের মধ্যে চেতনার প্রতি বিতৃষ্ণা জাগানো। বিশেষ করে যারা সত্যিকার অর্থেই বাহাত্তরের সংবিধানে বিশ্বাসী তারা আজ দ্বিধাবিভক্ত। কোটা আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সরকারি ব্যর্থতা, শতাধিক মানুষের অকাল মৃত্যু তাদেরকে সরকার বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য করছে, কিন্তু জাতীয় সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি তাদের অনেককেই এই মুহূর্তে জামাত শিবিরকে দোষী করতে উদ্বুদ্ধ করেনি। আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনীতি যাই হোক না কেন এখনও মনে হয় গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে যারা বিশ্বাসী তাদের এক বিরাট অংশ আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কোনঠাসা কর্মী। তাই অন্ধ আওয়ামী বিরোধিতাও বাহাত্তরের সংবিধান অর্জনের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাওয়া। সেদিক থেকে বর্তমান কোটা আন্দোলনে মূল ফসল উঠেছে স্বাধীনতা বিরোধীদের ঘরে যদিও ছাত্ররাও জিতেছে কম না। জয় থাকলে পরাজয় থাকে। হেরেছে এবার আওয়ামী লীগ। তবে সবচেয়ে বেশি হেরেছে বাহাত্তরের সংবিধানে যারা বিশ্বাস করে তারা। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে বিশ্বাসীদের সবাই শুধু আদর্শিক অবস্থান থেকেই সেটা করে না, অনেকে করে অস্তিত্বের জন্য, টিকে থাকার জন্য। এরা প্রায় সবাই বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। ঘরে আগুন লাগলে বুদ্ধিমান মানুষ প্রথমে আগুন নেভায়, তারপর বিচার করে কে দোষী বা কার দোষ কতটুকু। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তির বড় অভাব। দরকার শান্তি ফিরিয়ে আনা, পরিবেশ শান্ত করা। এই মুহূর্তে সরকার পতনের ডাক হিতে বিপরীত হতে পারে। আমরা যারা বাইরে থাকি তারা দূর থেকে সব দেখি কিন্তু যারা ভেতরে তারা আরও একটু বেশি দেখে, যদিও খুব বেশি আবেগ দিয়ে। তবে আমাদের জন্য যেটা কথা তাদের জন্য সেটা অ্যাকশন। রক্ত কিন্তু তাদেরই ঝরবে। আর এই সুযোগে বাংলাদেশ আরও বেশি করে সংখ্যালঘু শূন্য হবে। বিশেষ করে বাইরে যারা নিজেদের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রবক্তা মনে করেন তাদের একটু ভেবে দেখা উচিৎ। এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন জায়গায় এরকম আক্রমণ হয়েছে, ভয় দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। এসব আর যাই হোক কোটা আন্দোলন নয়। যেহেতু ঘটেছে আমার আত্মীয় স্বজনের সাথেই তাই এটা গুজব নয়। হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে তাকে। তবে আপনাদের রণকৌশল যদি হয় বাংলাদেশকে ভিন্ন ধর্মী শূন্য করে ধর্মনিরপেক্ষতা কায়েম করা তাহলে আপনি সঠিক পথে। সেক্ষেত্রে চেতনা প্রশ্নে আওয়ামী লীগ থেকে আপনি খুব একটা পিছিয়ে নেই। ভাবুন। ভাবতে শিখুন। শুধু চাইলেই হয় না, পাওয়ার জন্য সঠিক পথ বেছে নেয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দুবনা, ২৫ জুলাই ২০২৪

Comments

  1. শিক্ষার এবং মানবিকতার আজ খুবই অভাব

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমরা অন্তত সেই অভাব পূরণের চেষ্টা করতে পারি।

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

পরিমল

নেতা

শুভ নববর্ষ ১৪৩১