বুড়ো মানুষের দাঁত
আমি প্রায়ই চোখ বন্ধ করে হাঁটি। আগে রাস্তাটা ভালো করে দেখে নেই, লোকজন না
থাকলে বা রাস্তা ফাঁকা থাকলে চোখ বন্ধ করে চলতে থাকি। দুবনায় লোকজন কম বিধায় কোন
ঝামেলায় পড়তে হয় না। তবে সেভার সাথে ঘুরতে গেলে ও বিরক্ত বোধ করে।
রাস্তায় হাঁটছি চোখ বন্ধ করে। হঠাৎ
চোখ খুলে মনে হলে যেন ভুমিকম্প হচ্ছে।
হ্যাঁ, সামনে যে লোকটা আসছিলো। ওর গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছিলো ভূমিকম্পে যেন
দালানকোঠা নড়ছে। রাস্তার পাশে গাছের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, পৃথিবী নয়, ঐ ব্যাটাই
টালমাটাল।
- প্রিভিয়েত (শুভেচ্ছা)!
- প্রিভিয়েত!
- তুমি না ডক্টর। আচ্ছা বলতো বুড়ো হলে
মানুষের দাঁত পড়ে কেন?
এই সেরেছে। কেমনে বোঝাবো আমি সেই ডক্টর নই। করার কিছু নেই। তাই বললাম
- এ
তো খুব সোজা হিসাব। স্বর্গে বা নরকে সব খাবার তরল, দাঁতের দরকার হয় না। তাই মিতব্যায়ী
যমরাজ আগে থেকেই এর একটা সুরাহা করে নেয়।
- ভালো। তা কি খাওয়ায় ঐ স্বর্গে আর নরকে।
- যতদূর জানি স্বর্গে অমৃত সুধা। এই যে তুমি
ভোদকা ভোদকা কর, ভোদকা ওর কাছে কিছুই না। এতো সুস্বাদু মদ পৃথিবীতে হয় না। সাথে বিভিন্ন ফলের রস।
- আর নরকে?
- ওখানে গরম জল নাক দিয়ে ঢালে। দুই নম্বরী ভোদকা
অবশ্য থাকে। সব দুষ্ট লোকদের ওখানে পাঠায়। ওদেরই কেউ কালোবাজারি করে মনে হয়।
- যাই বল, স্বর্গের ব্যাপারটা বেশ
ইম্প্রেসিভ। অমৃত সুধা। একেবারে জিভে জল এসে যাচ্ছে।
- কিন্তু তুমি এখানে এভাবে ভোদকা খেয়ে
পাকস্থলী পচালে স্বর্গের ডাক্তার কিন্তু তোমাকে ওসব দেবে না।
- তুমি ঠিক জানো?
- ঠিক কিনা কে জানে? আমি তো যাইনি ওখানে কোন
দিন। আপাততঃ যাবার ইচ্ছেও নেই।
- আমার কিন্তু ভীষণ লোভ লাগছে। কি করতে হবে
ওখানে যেতে?
- ভোদকা খাওয়া কমাতে হবে যাতে পাকস্থলী নষ্ট
না হয়। আরও ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে।
- কি?
- মরতে হবে। তবে আমি বলি কি, স্বর্গে বা
নরকে যাবার সুযোগ সব সময়ই পাবে, তাই যতদিন পারো এই পৃথিবীতে শক্ত পায়ে হাঁটো।
দুবনা, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮
Comments
Post a Comment