অমলেট
দেড়
বছর পর ক্রিস্টিনা এলো আমার বাসায়। সেই যে ২০১৬ সালের সামারে এসেছিলো, তারপর আর ওর
দুবনা আসা হয়নি। গত সামারেও আসি আসি করে আসতে পারেনি। এবার এলো নতুন বর্ষে, বরং বলা ভালো সেভার জন্মদিনে।
৩ তারিখ মায়ের ওখানেই কাঁটালো শুয়ে বসে, আমার এখানে এলো ৪ তারিখে রিসকে দেখতে। রিস
ওর বিড়াল, অসুস্থ, তাই আমার এখানে ছিল কিছুদিন। এমন কি ভেবেছিলাম, ওকে হয়তো
ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলতে হবে। শেষ পর্যন্ত তা করতে হয়নি। রিস বেঁচে গেছে এবারের
মত। গতকাল জিজ্ঞেস করলাম
- কি খাবি?
- মাংস রান্না করো। আমাদের এখনও
মেরামত চলছে, ফাস্ট ফুড খেতে খেতে টায়ার্ড।
ওর
ইচ্ছে মত মাংস হোল, তবে ও আর খেল না। আগের দিনের রেড ফিসটাও দেখি অমনিতেই রয়ে
গেছে। তাই ৪ তারিখে বিকেলে যখন বাসায় ফিরি, ওকে বললাম
- আমি ক্লাবে যাবো। চাইলে এর আগে
আসতে পারিস। আমার সাথে ক্লাবেও যেতে
পারিস।
- দেখি।
আমি
কেবল মাত্র কিছু ছবি তোলা শেষ করেছি, দরজায় বেল বাজল। খুলে দেখি ক্রিস্টিনা।
- মা পরে আসবে। রিস কোথায়?
- দেখ কোথাও বসে আছে। খাবি?
- কি?
- মুরগী আছে রান্না করা। আর গত
বছরের পোলাও। ফ্রীজে ঢোকানো।
- যদি অমলেট করে দাও খেতে পারি।
অমলেট
ওর প্রিয় খাবার। আমি অমলেট করে দিলাম ওকে। ও সাধারণত পোলাও খায় না।
- যদি চাস ভাত বা নুডলস করে দিতে
পারি। নইলে একটু পোলাও দিতে পারি।
- দাও একটু পোলাও।
কিছুক্ষণ
পরে দেখি অমলেট আর পোলাও সব শেষ।
- ক্লাবে যাবি?
- চল।
আমরা
ক্লাবে গেলাম। এ বছরে এই প্রথম। আমি সাথে নিয়ে গেলাম লিচু। ওখানে চা, চকলেট এসব
ছিল। ক্লাব থেকে ফিরলাম সোজা মায়ের বাসায়।
দেখি ওর জন্যে মাংস আর কলজে রান্না করে বসে আছে।
- ক্রিস্টিনা, তুই প্রচণ্ড কাবু
হয়ে গেছিস। নে, মাংস আর কলজে রান্না করা আছে, খেয়ে নে।
- ঠিক আছে। আমি পরে খাবো। আপাতত
রেখে দাও।
কিছুক্ষণ
পরে আমি বাসায় ফিরলাম। গুলিয়া এলো আরও পরে। সকালে ওর চলে গেলো, আমি দুপুরে। দেখি
ক্রিস্টিনা তখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। মা ডাকছে
- ক্রিস্টিনা, ওঠ। খেয়ে নে।
- এইতো উঠছি। আরেকটু ঘুমিয়ে নিই।
- ক্রিস্টি, চল আমার ওখানে। কিছু
একটা রান্না করা যাবেক্ষণ।
- কী খাবে ও তোমার ওখানে?
- যা খুশি। মাছ, মুরগী, অমলেট –
যেটা চায়।
- তুমি ওর চেহারা দেখেছো? কোন
অমলেট টমলেট নয়। এখানে মাংস, মাছ, কলজে সব রান্না করা আছে। এখানেই খাবে।
- যেমন খুশি। কিছু একটা খেলেই হয়।
যাকগে আমি বাসায় যাচ্ছি। ওর ট্রেন ২০.৪০
এ। আঁটটার মধ্যে চলে এসো। আমি রিসকে রেডি করে রাখবো। নিয়ে যায় যেন। আর হ্যাঁ,
মনিকা মুরগী আর আলু সেদ্ধ করে পাঠাতে বলেছে। আমি ওটাও করে রেখেছি। এসব নিয়ে যেতে
হবে। আন্তন যেন ওকে মিট করে ষ্টেশনে।
ওরা
এলো পৌনে আঁটটায়। সব কিছু রেডি করে ট্যাক্সি ডাকলাম। ক্রিস্টিনা চলে গেল মস্কো।
বলল কিছুদিন পরে আবার আসবে। প্ল্যান ছিল ওকে নিয়ে বনে আর ভোল্গার তীরে ঘুরতে
যাবার। বৃষ্টির জন্য হয়ে উঠলো না। বরফ আর ক্রিস্টিনা আসার অপেক্ষায় রইলো আমাদের
ঘুরে বেড়ানোর প্ল্যানটা।
দুবনা,
০৮ জানুয়ারী ২০১৮
Comments
Post a Comment