বিজয় দিবসের অভিনন্দন

 



আজ ৯ মে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের দিন - বিজয় দিবস। যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে আসি তখন এ দিনটি মে দিবসের ছায়ায় ঢাকা পড়ে ছিল। যে উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তখন মে দিবস আর অক্টোবর বিপ্লব দিবস পালন করা হত - সে তুলনায় বিজয় দিবস ছিল দ্বিতীয় সারির, যদিও জনগণের কাছে এর গুরুত্ব মোটেই কম ছিল না। সোভিয়েত আমলে ১ মে আর ৭ নভেম্বর প্যারেড হত রেড স্কয়ারে। ছাত্র জীবনে অনেক বার গেছি সে সব প্যারেডে। আর বিজয় দিবসে গেছি বলশয় থিয়েটারের ওখানে আর পার্ক কুলতুরিতে যেখানে হাজার হাজার যুদ্ধের ভেটেরান একত্রিত হতেন, পরবর্তী জেনারেশন ফুল দিয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাত। বাজত মিউজিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেনারা নাচতেন সেই সঙ্গীতের তালে তালে। এটা ছিল আশির দশকে। ভেটেরানদের বয়স তখন কতই বা, ষাট থেকে সত্তরের মধ্যে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্মৃতি মুছে না গেলেও ম্লান হয়ে যেতে শুরু করে। ৭ নভেম্বর হারায় তার আগেকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব। আন্তর্জাতিকতাবাদও আগের মত হালে পানি পায় না। ফলে ১ মেও মলিন হয়ে যায়। এতদিন পর্যন্ত যা ছিল জনতার উৎসব, সেই বিজয় দিবস পায় সরকারি রূপ। ১৯৯৫ সালে বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পাক্লন্নায়া গারায় খুব ঘটা করে পালন করা হয় বিজয় দিবস। ১৯৯৩ সালের পর মস্কোয় আবার ট্যাঙ্ক নামে, আকাশ ছেয়ে যায় বিমানে বিমানে।

এরপর কিছুদিন শুধু ৫৫, ৬০, ৬৫ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে প্যারেড হলেও বিগত কয়েক বছর প্রতি বছরই এ উপলক্ষ্যে আর্মি প্যারেড করা হচ্ছে। আসলে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া কোন জাতীয় আইডলোজি গ্রহণ করেনি। হয়তো এ কারণেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিজয় সামনে চলে এসেছে। যদিও সেই ইয়েলৎসিনের আমলেই ১৬১২ সালে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিজয়কে স্মরণ করে ৪ নভেম্বর উৎসবের আয়োজন করা হয় তবে জনগণ এই এটা ঠিক সেভাবে গ্রহণ করেনি। হয়তো নভেম্বরের আবহাওয়া এর কারণ। সেক্ষেত্রে ৯ মে - বসন্তের আগমনী বার্তায় চারিদিক মুখর।

ইদানিং বিজয় দিবসে যোগ হয়েছে বেসস্মেরত্নি পোল্ক বা অমর ব্রিগেড যখন উত্তরসুরীরা তাদের যুদ্ধে প্রাণ হারানো বা পরবর্তীতে মৃত পূর্বসূরিদের ছবি নিয়ে প্যারেড করে। এটা হয় বিজয় দিবসের অফিসিয়াল অনুষ্ঠানের পরে। যদিও তোমস্কের এর অবসরপ্রাপ্ত ভদ্রলোক সর্বপ্রথম নিজ শহরে এর আয়োজন করেন, পরবর্তীতে এটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটাই মনে হয় জনগণকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। এখন শুধু রাশিয়া নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অমর ব্রিগেডের মিছিল হয়।

এই প্রথম বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে যখন রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। এই বিজয় সমস্ত সোভিয়েত জনগণের বিজয়। ব্রাতস্ক থেকে ভ্লাদিভোস্তক, মুরমানস্ক থেকে দুশানবে - সোভিয়েত ইউনিয়নের সব রিপাবলিকের জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এই যুদ্ধে অংশ নেয়, সোভিয়েত ইউনিয়নে এমন কোন পরিবার হয়তো নেই যারা এই যুদ্ধে তাদের প্রিয়জন হারায়নি। আজ যদি সবাই এই বিজয়কে নিজের মনে করত, যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করে ২৭ মিলিয়ন সোভিয়েত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করত তাহলে হয়তো আজ রাশিয়া আর ইউক্রেন পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করত না।

সবাইকে বিজয় দিবিসের শুভেচ্ছা!

দুবনা, ০৯ মে ২০২২ 
 

 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা