ধর্ম অধর্ম

গতকাল মানে ১৯ জানুয়ারি ছিল অর্থডক্স খৃষ্টানদের ধর্মীয় উৎসব। এই দিন জর্ডান নদীতে যীশুকে খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হয়। সেটাকে স্মরণ করে রাশিয়ার খৃষ্টানরা এই শীতের মধ্যেও নদীতে ডুব দিয়ে স্নান করে। 

স্কুলে পড়ার সময় মনিকা স্নান করত। মাইনাস ১৫ বা ২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এটা সহজ নয়। তখন অবশ্য আমার কখনই মনে হয়নি ওর সাথে গিয়ে ডুব দিতে। এটা যতটা না ভয় তারচেয়ে বেশি ধর্মীয় উৎসব বলে।

২০২১ সালে করোনার পরে আমি অনেক কাজ করি যা আগে করতে সাহসে কুলাতো না। তাই কখনো কখনো ইচ্ছে হয় এরকম ঠান্ডায় ডুব দিতে। অন্য সময়ও সেটা করা যায়। তবে উৎসবে করলে রিস্ক কম। প্রচুর লোক সেটা করে। পাশেই জামাকাপড় বদলানো, চা এসব থাকে আর থাকে ডাক্তার, যদি কারো সমস্যা হয়। অনেকটা আমি ঘুষ খাই না, তবে কেউ ঘুষের টাকায় খেতে ডাকলে আপত্তি করি না। 

গতকাল ক্লাবে কথাটা বলতেই সবাই রা রা করে উঠলো। ভাসিলি বলল

জলের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রী। তুই বরং গ্রীষ্মে ককেসাস গিয়ে পাহাড়ি ঝর্নায় স্নান করিস। এসব ধর্মীয় জায়গা থেকে যত দূরে থাকিস তত ভালো। তুই যে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গির্জার ছবি তুলিস সেটাও সন্দেহজনক। আমি ওসব জায়গা থেকে এক শ হাত দূরে থাকি।

সমস্যা উপাসনালয়ে নয়। এই দেখ আমরা ইয়াসনায়া পালিয়ানা যাই, জোড়াসাঁকো যাই। এর সাথে কি জেরুজালেম বা কাশী যাবার পার্থক্য আছে? অথবা আইনস্টাইন বা কান্টের মিউজিয়ামে যাবার মধ্যে? যে যেখানেই যাক হয় শ্রদ্ধাবোধ থেকেই যায় নয়তো এমনিতেই। আমি যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম তাহলে কিন্তু যেতাম না।
মানে?
মানে তাহলে আমি বিশ্বাস করতাম যে ঈশ্বর সর্বভূতে বিদ্যমান। নিজের ভেতরে ঈশ্বর রেখে অন্য কোথাও তাঁকে খুঁজতে যাব কেন? মনে নেই গোগলের ক্রিস্টমাসের আগের রাত গল্প? কাঁধে শয়তান রেখে শয়তানের খোঁজ করার কথা?
তাহলে বিভিন্ন উপাসনালয়ে যাস কেন?
আমি মানুষের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আর সব স্থাপনাই মানুষের তৈরি। আমি বিভিন্ন যুগের মানুষের সৃষ্টি দেখে মুগ্ধ হতে এসব জায়গায় যাই। 
তোকে বোঝা কঠিন।
না। আমি অন্যদের মত সব কিছু ধর্ম অধর্ম ভাল মন্দ এসব দিয়ে বিচার করি না। সব জায়গায় কিছু না কিছু দেখার আছে, শেখার আছে। তবে সেটা নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির উপর। 

দুবনা, ২০ জানুয়ারি ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা