সংসারে স্বাধীনতা

গতকাল আমার এক বন্ধু "সংসারে স্বাধীনতা" নিয়ে একটি পুরানো লেখা নতুন করে পোস্ট করেছে। সেটা পড়ে কতগুলো ভাবনা আমার মাথায় এলো।

দেশে নির্বাচন শেষ। শেষের বিভিন্ন অর্থ আছে। এই শেষ বিভিন্ন অর্থ বহন করে। আবার এই অর্থের একটি অর্থ মামুলি টাকা, বাকিগুলো অর্থহীন। তবে শেষ শুধু এবারের নির্বাচন শেষ নয়, ব্যাপক অর্থে নির্বাচনী ব্যবস্থার মৃত্যু। এবং শুধু আমাদের দেশেই নয়।

ভেবেছিলাম নির্বিরোধ নির্বাচন হবে নিরামিষ। দেখলাম আমিষ ছাড়া আমাদের কিছুতেই চলে না। তাই বিভিন্ন প্রতীকধারী আওয়ামী লীগের কর্মীদের ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে অনেক সাধারণ মানুষ অসাধারণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে।

অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। আমাদের পরিবারগুলোই তো একেকটা যুদ্ধক্ষেত্র। পরিবার হল রাষ্ট্রের পারমাণবিক রূপ আর সেই রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের জন্য স্বামী, স্ত্রী, সন্তান সবাই অসম কিন্তু অবিরাম যুদ্ধে রত। বিশেষ করে তার অর্থমন্ত্রীর পদ পাওয়ার জন্য। মৌলানা আজাদ ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম-এ লিখেছেন সর্দার প্যাটেল অনেক দর কষাকষি করে কংগ্রেসের জন্য অবিভক্ত ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ নেয়। কিন্তু পরে দেখা গেল অর্থমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের স্বাক্ষর ছাড়া তিনি একজন চৌকিদার পর্যন্ত নিয়োগ দিতে পারেন না। তার মানে সংসারের অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যার হাতে তিনি বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন।

সোভিয়েত আমলে একটা জনপ্রিয় চুক্তি ছিল। ছেলেকে বাবা রাষ্ট্র কি সেটা বোঝাচ্ছে

বাবা সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি, মা সুপ্রিম সোভিয়েত, দিদিমা কেজিবি আর সন্তান জনগণ।

জনগণের মত সন্তান সব সময়ই রিসিভিং এন্ডে থাকে। ভাগ্যিস সোভিয়েত ইউনিয়নে ওয়ান পার্টি সিস্টেম ছিল। আমরা দুর্ভাগা বিধায় দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র। তাই আমাদের বাবা, মা, দিদিমা, সন্তান সবাই একেকটা রাজনৈতিক দল, আর সবার লক্ষ্য সরকারি দল হবার। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেমন এন্টাগোনাস্টিক, তাদের কাছে যেমন দেশের চেয়ে দল বড় আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক তেমনি এন্টাগোনাস্টিক, তাদের কাছেও পরিবারের চেয়ে নিজের স্বার্থ বড়। আর এখান থেকেই বিভিন্ন ধরণের ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। প্রশ্ন আমাদের পরিবারগুলো এমন সেটা দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এরকম বলে নাকি উল্টোটা মানে দেশ এমন পরিবার এরকম বলে? যদি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দলের চেয়ে দেশ বড় হত, যদি পরিবারের সদস্যদের কাছে পরিবার আগে চলে আসত তাহলে কি আমরা সংসারে অন্য ধরণের স্বাধীনতা পেতাম? আমাদের দেশে, যেখানে পরিবারের লোকজন তো বটেই, এমন কী দূরসম্পর্কের আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে অপরিচিত লোকজন পরিবারের বিভিন্ন ব্যাপারে নাক গলায় - সেখানে কি সত্যিই পারিবারিক স্বাধীন্তা পাওয়া সম্ভব? এটা কি আমাদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক পরিবেশের উত্তরাধিকার নয়? এটাকি আমাদের অতিরিক্ত আন্তরিকতা, একান্নবর্তী পারিবারিক মানসিকতার প্রকাশ নয়? আমার মনে হয় যত দিন পর্যন্ত না আমরা যেকোনো লোকের প্রাইভেসির প্রতি সম্মান দেখাতে না পারব, কী ধর্মীয়, কী সামাজিক, কী রাজনৈতিক - এসব ব্যাপারে ভিন্ন মতের প্রতি সহিষ্ণু হতে না পারব, ততদিন এসব সমস্যা থাকবেই। এটা ঠিক কোন সমস্যাই সমূলে উৎপাটন করা যায় না, তবে সমাজে ভালো মন্দের অনুপাতটা এমন করা যায় যখন মন্দটা ভালোকে প্রভাবিত করতে পারে না, যেমন সবাইকে ভ্যাকসিন না দিয়েও সমাজে কোন ভাইরাসের বিরুদ্ধে এফেক্টিভ রেজিস্ট্যান্স গড়ে তোলা যায়।

দুবনা, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা