প্যালেস্টাইন

ইসরাইল প্যালেস্টাইনে যে গণহত্যা চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে অসহায় মানুষ প্রতিবাদ করলেও দুনিয়ার মোড়লরা কমবেশি নিশ্চুপ। বিশেষ করে চোখে পড়ে আরব বিশ্বের মৌনতা। রাজনীতির হিসেব নিকেশে ধর্ম হেরে যায়, হেরে যায় তথাকথিত মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। আসলে মানুষ সাধারণত ঐক্যবদ্ধ হয় দুর্বলের বিরুদ্ধে। সবলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহজ নয় বিশেষ করে সবলদের হাতে যদি নিজেদের ক্ষমতার চাবিকাঠি থাকে। আচ্ছা ইসরাইল ছোট্ট একটা দেশ, ক্ষুদ্র তার জনসংখ্যা। ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত হলেও সিনাগগ নয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পেছনে ব্যয় করেছে অঢেল অর্থ। আজ তাদের শক্তির উৎস শুধু আমেরিকার সমর্থন
 নয়, মূল উৎস দেশের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনসম্পদ। 

কয়েকদিন আগে সৌদি যুবরাজের এক সাক্ষাৎকারে দেখলাম সোভিয়েত ইউনিয়নের মোকাবেলা করতে আমেরিকার অনুরোধে তারা দেশে দেশে হাজার হাজার মসজিদ তৈরি করেছে, প্রচার করেছে ওয়াহিবী ইসলাম। কিন্তু এই অর্থ যদি তারা মুসলিম বিশ্বের দেশে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য দিত, আজ যদি প্যালেস্টাইনে তাদের অর্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এসব তৈরি হত, তাহলে সেখানকার মানুষদের বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হত না। তরুণ তরুণীরা সন্ত্রাসের পথে না গিয়ে নিজেদের শিক্ষা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে পারত। হয়তোবা তখন ইসরাইল নিজেও এই আক্রমণ করত না। কোথায় যেন পড়েছিলাম হামাসের উৎপত্তি মাসাদের হাত ধরে আরাফাতকে ঠেকানোর জন্য। আজ প্যালেস্টাইনের জনগণের এই বিপর্যয়ের পেছনে হামাসের দায় কম নয়। 

সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল সফল হতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। তাই এই এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে আরব বিশ্ব সহ আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে ভিন্ন পথে যেতে হবে। ভাবতে কিভাবে প্যালেস্টাইনের জনগণকে শান্তিপূর্ণ জীবন ও জীবিকায় ফিরিয়ে আনা যায়। নিপাত যাক শ্লোগান অনেক হয়েছে। এবার দরকার সৃষ্টির শ্লোগান।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে সম্প্রতি সৌদি আরব বুরকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্টকে সে দেশে কয়েক শ' মডেল মসজিদ স্থাপনের প্রস্তাব দিলে তিনি বিনয়ের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে যে তার দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প স্থাপন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরব সে দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সাহায্য করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে শোনা যায়নি। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে সে দেশের নেতা সৌদি প্রস্তাব অগ্রাহ্য করতে পারেননি। ফলে সরকারি অর্থে সেসব মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর ফলাফল এখন দেশের মানুষ টের পাচ্ছে। অথচ এসব অর্থের সঠিক ব্যবহারে মুসলিম বিশ্ব সত্যিকার অর্থেই বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতে পারত। এসব দেশের হাজার হাজার বিশেষজ্ঞ ইউরোপ আমেরিকার পরিবর্তে নিজ নিজ দেশে কাজ করতে পারত। তখন কোন ইসরাইল, কোন আমেরিকা প্যালেস্টাইনে এই হত্যাকাণ্ড চালানোর সাহস করত না। সৌদি আরবকে দিয়ে আমেরিকা শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পথ সহজ করেনি, সমস্ত মুসলিম বিশ্বকে নিজেদের পদানত করেছে। আল কায়েদা, তালিবান, ইসলামিক স্টেট এসবই আমেরিকার সেই পরিকল্পনার অংশ ঠিক যেমন আরব বসন্ত। অন্যদের নীচে টেনে নামিয়ে হয়তো তাদের সমান হওয়া যায়, কিন্তু সত্যিকারের উন্নতি তাতে হয় না। সত্যিকারের উন্নতি হয় নিজেকে জ্ঞানে বিজ্ঞানে শক্তিশালী করে অন্যদের পেছনে ফেলে সামনে যেতে পারলে। এজন্য দরকার রাজনৈতিক ভাবনার আমূল পরিবর্তন।

দুবনার পথে, ০৭ এপ্রিল ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্ন

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল