কাশ্মীর সন্ত্রাস - ধর্মীয় না রাজনৈতিক?

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় আবার অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাল। এই হামলার পেছনে যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা সামনে চলে এসেছে। যারা আক্রমণ করেছে তারা সেটাই চায়। মুর্শিদাবাদ, কাশ্মীর এসব আক্রমণের লক্ষ্য ভারতের ভেতরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে সেখানকার রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা। 

যারা শুধুমাত্র ধর্মীয় চশমা চোখে কাশ্মীর সমস্যা দেখে তাদের মৌলানা আবুল কালাম আজাদের ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডমের একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। ব্রিটিশ ভারতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের যৌথ সরকার গঠিত হয় নেহেরুকে প্রধানমন্ত্রী করে। মুসলিম লীগ চেয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। সর্দারজি প্যাটেল রাজি হননি। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। মুসলিম লীগের লিয়াকত আলী খান হন। অর্থমন্ত্রী। মৌলানা আজাদ লিখেছেন এমনকি প্যাটেল একজন চাপরাশি রাখতে চাইলেও তাকে লিয়াকত আলী খানের দ্বারস্থ হতে হয়। আসলে অনেক আগেই বন্দুকের নলের চেয়েও টাকশাল নিজেকে অনেক বেশি শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে।

ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে কাশ্মীরকে অস্থিতিশীল করা যায় কিন্তু সেখানকার মানুষের সমস্যার সমাধান করা যায় না। মানুষের সমস্যা ধর্মীয় নয়, মানুষের সমস্যা অর্থনৈতিক, মানুষের সমস্যা নিরাপত্তার, মানুষের সমস্যা স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশের। পাকিস্তান কি এর কোনটা দিতে পেরেছে তার জনগণকে। বিভিন্ন জরিপে ও যারা বিগত কয়েক বছরে কাশ্মীর ভ্রমণ করেছে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংস্কার কাশ্মীর বাসীরা পজিটিভলি নিয়েছে। এটাই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মাথাব্যথার কারণ। ভারত বিরোধিতা পাকিস্তানের জীবনীশক্তি। অর্থনীতি, বিজ্ঞান প্রযুক্তি প্রায় সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া পাকিস্তান এখন তাই ধর্মীয় উত্তেজনা উস্কে দিতে চাইছে। যারা এটাকে শুধুমাত্র ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা মনে করছে তারা আসলে ধর্ষণের জন্য ধর্ষকের পরিবর্তে ধর্ষিতাকে অভিযুক্ত করছে। 

আবেগের বশে অনেকেই ভারতীয় মুসলমানদের টার্গেট করতে চাইছে। যেটা অমানবিক তো বটেই, রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল। পাকিস্তান এটাই চায়। এটা স্পষ্ট ধর্ম এখানে হাতিয়ার যাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধর্ম ব্যবহার করে এর উত্তর দিলে তার ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ। এই মুহূর্তে ভারতের উচিত আন্তর্জাতিক ভাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা ও এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা। একমাত্র তখনই এই অঞ্চল থেকে সন্ত্রাস বিদায় নেবে। উপমহাদেশে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার হাত থেকে সেদেশের জনগণকে মুক্ত করা এখন আন্তর্জাতিক কমিউনিটির অন্যতম প্রধান দায়িত্বগুলোর একটি।

দুবনা, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্ন

সিপিবি কংগ্রেস

রিংকু